দাম বাড়ল ডিজেলের ভাড়া বাড়ল সিএনজির!

নগরী ও জেলাজুড়ে দিনভর নৈরাজ্য

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৬ নভেম্বর, ২০২১ at ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের গণপরিবহন-পণ্যপরিবহন ধর্মঘট পালন করছে মালিক-শ্রমিকরা। পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণায় চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলায় বেশিরভাগ বড় যানবাহন চলেনি। যেসব যানবাহন চলেছে তারা আদায় করেছে বাড়তি ভাড়া। এই ভাড়া নৈরাজ্যের শিকার হয়েছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ লোকজন। যানবাহন সংকটের সুযোগে পোয়াবারো হয়েছে সিএনজিচালিত (কম্প্রেজ্‌ড ন্যাচারাল গ্যাস) অটোরিকশাগুলোর। এসব ত্রিচক্রযানগুলো কম দামের গ্যাসে চললেও রাস্তায় লোকজনকে জিম্মি করে আদায় করেছে বাড়তি ভাড়া।
গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা, নগরীর কাজির দেউরি মোড়। সাতকানিয়ার বাসিন্দা আনোয়ারুল করিম গ্রামের বাড়ি যাবেন। বাসা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দেখেন তিন নম্বর রুটের লেগুনা ও রাইডার গাড়িগুলো নেই। দীর্ঘসময় পরে একটি করে আসলেও সেগুলোতে যাত্রীভর্তি। উপায় না দেখে সিএনজি নিতে গিয়ে চোখ কপালে উঠে তার। একটি সিএনজি চালক ১৮০ টাকা চেয়ে বসলেন। আনোয়ারুল করিম বলেন, কাজির দেউড়ি থেকে নতুন ব্রিজ (শাহ আমানত সেতু) মোড় পর্যন্ত স্বাভাবিক ভাড়া ১০০-১২০ টাকা। এখন ১৮০ টাকা দাবি করে বসেছেন। পরে আরও দুটিতে ভাড়া জিজ্ঞেস করলে তারাও ১৭০ টাকা ও ১৮০ টাকা দাবি করে। একইভাবে বহদ্দারহাট মোড় থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত স্বাভাবিক সময়ে ১০০-১২০ টাকা ভাড়া হলেও শুক্রবার ১৫০-১৮০ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন সিএনজি চালকরা।
সিএনজিগুলোর বেশি ভাড়ার চিত্র শুধু এই রুটের নয়। পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে নগরজুড়ে যাত্রীদের জিম্মি করে বেপরোয়া ভাড়া আদায় করেছে সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা। অনেকক্ষেত্রে ভাড়া আদায় করেছেন দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। আবার আন্তঃজেলা সড়ক-মহাসড়কে দূরপাল্লার বাস চলাচল না করার সুযোগে মেট্রো এলাকার অনেক অটোরিকশা জেলার বিভিন্ন গন্তব্যে গিয়েছেন বেশি ভাড়ায়। সরেজমিনে নগরীর বেশ কয়েকটি স্পটে দেখা গেছে, ভাড়া নিয়ে অটোরিকশার চালকদের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়েছেন অনেক সচেতন যাত্রী। চালকেরাও গন্তব্যে যেতে দাবি করছেন দ্বিগুণ ভাড়া।
সিএনজি চালক মনির হোসেন বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে নগরীতে বাস চলাচল ছিলো খুবই কম। কিন্তু রাস্তায় যাত্রী বেশি ছিল। স্বাভাবিকভাবে লোকজনের চাহিদা বেশি থাকায় সিএনজি ভাড়াও কিছুটা বেশি হয়েছে। রাস্তায় যাত্রীর সংখ্যাও বেশি। নুরুল ইসলাম নামের আরেক চালক বলেন, মেট্রো এলাকায় গাড়ি চালাতে মালিককে দিতে হয় নয়শ টাকা, দিনে তিনশ টাকার গ্যাস লাগে। প্রতিদিন গড়ে ২০০০-২২০০ টাকা ইনকাম হয়। তবে আজকে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকার মতো আয় হবে। তিনি বলেন, এমনিতেই যে জিনিসের চাহিদা বেশি থাকে, সেই জিনিসের দাম বেড়ে যায়। রাস্তায় যখন যাত্রী থাকে না, তখন কম ভাড়াতেও গাড়ি চালিয়েছি। কিন্তু গাড়ির মালিক কখনো ইনকাম কম নেননি।
চট্টগ্রাম অটোরিকশা-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অনেক সিএনজি অটোরিকশা রাস্তায় নামেনি। যেগুলো রাস্তায় নেমেছে, যাত্রীর সংখ্যা বেশি থাকার কারণে তারা হয়তো কিছু ভাড়া বেশি নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টা থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে প্রতিলিটার ৮০ টাকা নির্ধারণ করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধলঞ্চ ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব মালিকদের
পরবর্তী নিবন্ধডিজেলের দাম বাড়ানো নিয়ে মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা