সীতাকুণ্ডে টমেটোর বাম্পার ফলন হলেও চাষিরা পাচ্ছেন না নায্য মূল্য। পাইকারি বাজারগুলোতে ৭/৮ টাকা বা তারও কম দরে টমেটো বিক্রি হচ্ছে। তাও পর্যাপ্ত ক্রেতা মিলছে না। এ অবস্থায় শ্রমিকের মজুরি, বাজারে আনার খরচ, ইজারাদারের মাসুল ইত্যাদির খরচ ওঠানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে তাদের পক্ষে। এতে চরমভাবে হতাশ কৃষকরা। তাদের দাবি, যদি টমেটো সংরক্ষণের জন্য সীতাকুণ্ডে হিমাগারের ব্যবস্থা থাকত তাহলে তাদের এমন খারাপ অবস্থায় পড়তে হত না।
জানা গেছে, উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে সলিমপুর পর্যন্ত এলাকায় প্রায় ১৬ হাজার চাষি টমেটো চাষ করেন। প্রতি মৌসুমে জানুয়ারিতে চারা রোপণ করে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বিক্রি হয়। চাষিরা জানান, ক্ষেতে এখনো প্রচুর টমেটো রয়ে গেছে। কিন্তু বিক্রির জন্য বাজারে এনে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। মাঝেমধ্যে এমন দামে বিক্রি হচ্ছে যে ক্ষেত থেকে বাজারে আনার খরচও উঠছে না। গতকাল পৌর সদরের মোহন্তহাট ঘুরে ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টমেটোর এমন পড়তি দামে তারা যারপরনাই হতাশ। উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের বগাচতরের বাসিন্দা চাষি ইলিয়াছ হোসেন জানান, গতকাল তিনি দুই ঝাঁকায় প্রায় ৯০ কেজি টমেটো বাজারে আনেন। কিন্তু বাজারে ক্রেতার সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকজন। ফলে দুই ঝাঁকা টমেটো মাত্র সাড়ে চারশ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ যে শ্রমিক দিয়ে তিনি টমেটো তুলেছিলেন, তার মজুরিও ৪শ টাকা। সৈয়দপুর থেকে টমেটো আনতে খরচ হয়েছে ৮০ টাকা। এছাড়া বাজারের হাচিল, নাশতা প্রভৃতি মিলিয়ে আরো ৩০-৪০ টাকা খরচ। এক কথায় টমেটো বিক্রি করে লোকসানে পড়তে হয়েছে তাকে।
তিনি বলেন, আমরা এমনই অসহায় যে বাজারে ন্যায্য মূল্য না পেলে টমেটো ফেরত নিয়ে যাওয়ারও উপায় নেই। তাহলে সবটাই পচে যাবে। সীতাকুণ্ডে টমেটো সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমন বিপাকে পড়তে হয়েছে। অথচ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকলে কম দামের সময় টমেটো হিমাগারে রেখে দাম বাড়লে তা বাজারে বিক্রি করে চাষিরা লাভবান হতে পারত। আমার মতো হাজারো টমেটো চাষি প্রতিবছর এই দুরবস্থায় পড়ছে।
আরেক টমেটো চাষি গুলিয়াখালীর বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, আমরা মৌসুমভেদে সব ধরনের সবজি চাষ করে থাকি। জানুয়ারিতে টমেটোর চারা লাগিয়েছি ৮০ শতক জমিতে। এই জমি চাষ করতে খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। কিন্তু দাম পাচ্ছি না। প্রথম দিকে ১৬ থেকে ২০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও হঠাতই দাম একদম পড়ে গেছে। আজ (গতকাল) দু-তিন টাকা থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ-সাত টাকায় টমেটো বিক্রি হয়েছে।
চাষি ইলিয়াস হোসেন ও আইয়ুব আলী বলেন, একটি হিমাগার থাকলে একদিকে কৃষকরা লাভবান হতে পারত, অন্যদিকে সারা বছর টমেটো পাওয়া যেত বাজারে। এখনো মে মাস পর্যন্ত টমেটো বিক্রি হবে। বাজার এ রকম থাকলে কৃষকরা লাভের বদলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।
কৃষকদের এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, এখানে কৃষকদের জন্য একটি হিমাগার স্থাপন খুবই জরুরি। সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে এলাকার ২০-২৫ হাজার কৃষক উপকৃত হবে।