ভারত থেকে আমদানিকৃত ২৭ হাজার ৮৯০ কেজি (প্রায় ২৮ টন) হিমায়িত মহিষের মাংসের প্রকাশ্যে নিলামে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯৩ টাকা দাম নির্ধারণ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্র্তৃপক্ষ। অর্থাৎ প্রতি কেজি হিসেবে ৮৭৫ টাকা। গতকাল সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত প্রকাশ্য নিলামে প্রায় আড়াই কোটি টাকার মহিষের মাংসের সর্বোচ্চ দাম উঠে মাত্র ৪ লাখ টাকা। কেজি হিসেবে দাম উঠেছে ১৪ টাকা ২৯ পয়সা। যা সংরক্ষিত মূল্যের ২ শতাংশেরও কম। রাজশাহীর শাহ মখদুম ট্রেডার্স সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হন। তবে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলামের স্থায়ী আদেশ মতে, পণ্যের প্রথম নিলামে সংরক্ষিত মূল্যের ৬০ শতাংশ দাম না পড়লে বিক্রয় অনুমোদন দেয়া যাবে না। তবে কাস্টমসের নিলাম শাখার কর্মকর্তারা বলছেন, নিলাম মাত্র শেষ হয়েছে। বিক্রয় অনুমোদনের বিষয়ের ২–৩ দিনের মধ্যে নিলাম কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।
গতকাল সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, নিলামে তোলা হিমায়িত মহিষের মাংস পচে গেছে–এমন অভিযোগ এনে অনেক বিডার (নিলামে অংশগ্রহণকারী) প্রকাশ্যে নিলামে অংশ নেননি। তবে এ ব্যাপারে পচনশীল পণ্যের নিলামে দায়িত্বপ্রাপ্ত চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার মো. আবদুল হান্নান বলেন, আমাদের কাজ নিলাম করা। মহিষের মাংস পচা নাকি ভালো আছে এটি বলবে, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর। কারণ আমাদের শর্তে বলা আছে, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের গুণগত মানের সনদ নিয়ে তারপর পণ্য খালাস হবে। তবে ৬ মাস আগে মহিষের মাংসের ইনভেন্ট্রি হলেও নিলামে কেন দেরি হলো সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রক্রিয়াগত কিছু বিষয়ে দেরি হয়েছে উল্লেখ করে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জানতে জাইলে শাহ মখদুম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সরওয়ার হোসেন বলেন, নিলামে পণ্য পরিদর্শন করতে গেলে আমাদের কেবল কন্টেনারের ভেতরে কার্টন দেখানো হয়েছে। মাংস দেখতে দেওয়া হয়নি। তবে কন্টেনার ভেতর থেকে দুর্গন্ধ পেয়েছি। যেহেতু প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর এসব মাংসের গুণগত মান পরীক্ষা করবে, তাই আমরা পরীক্ষা সনদে মান ভালো হলে তারপর খালাস নেবো।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার উত্তর মাসদাইর গাবতলীর মেসার্স এমবি ট্রেডিং চলতি বছরের শুরুর দিকে ভারত থেকে ৪০ ফুটের শীতাতপ কন্টেনারে প্রায় ২৮ টন মহিষের মাংস আমদানি করে। এমভি এইচআর আরাই নামের জাহাজে করে ৪০ ফুট কন্টেনারে ১ হাজার ৬৫৬ কার্টন মহিষের মাংস পাওয়া যায়। এসব কার্টনে উৎপাদনের তারিখ লেখা রয়েছে ২ জানুয়ারি ২০২৩ এবং মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা রয়েছে– ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩।
উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে আমদানিকারককে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষও চার্জ পায় না।