সড়ক দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করলেও তা চাপের মুখে করেছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল শনিবার বিকালে ক্যাম্পাসে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন তারা। দশ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এর অংশ হিসেবে এদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, বিকালে চুয়েট গেটের বাইরে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন এবং ৫টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলে জানান বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাকের সংবাদে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
চুয়েট শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চুয়েট প্রশাসন ৯ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করে আন্দোলন দমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা হলে থেকে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব।
তারা বলেন, গেল বৃহস্পতিবার ছয় শতাধিক পুলিশ জলকামান, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান নেয়। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধিদল চুয়েট প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বাধ্য হই। সেই বৈঠকে যারা মধ্যস্থকারী থাকার কথা ছিল, তাদের কাউকে পাইনি আমরা। তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সবার মুঠোফোন নিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠক থেকে আমরা কিছুই পাইনি। বৈঠক শেষে আমরা যা বলেছি সেগুলোও আমাদের কথা ছিল না। চুয়েট প্রশাসন যা যা বলেছিল তাই আমরা বলতে বাধ্য হয়েছিলাম। এ সময় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তও তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানান। তাই তাদের আন্দোলন চলমান থাকবে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে চুয়েট বন্ধ ঘোষণার পর কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীকে হল ছেড়ে যেতে দেখা যায়। যারা বর্তমানে হলে অবস্থান করছেন তারাই ফের আন্দোলন চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা যায়।
এই প্রসঙ্গে চুয়েট পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ শেখ জাবেদ মিয়া বলেন, চুয়েট পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। ছুটি ঘোষণার পর অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন, অনেকে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কোনো আন্দোলন হচ্ছে না, শিক্ষার্থীরাও শান্ত আছেন।
এদিকে চুয়েটের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গতকাল সকাল থেকে কাপ্তাই থেকে এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলীসহ দূরপাল্লার কোনো যানবাহন ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। টিকিট কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও টিকিট বিক্রি হয়নি। এছাড়া বাস পোড়ানোর প্রতিবাদে আজ রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।
চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন বাস মিনিবাস ওয়ার্কস ইউনিয়নের সভাপতি শাহ আলম বলেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় শনিবার কাপ্তাই সড়কে কোনো দূরপাল্লার বাস ছাড়েনি। আমাদের আনুমানিক ৯০ লাখ টাকার তিনটি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই আমরা ধর্মঘট ডেকেছি। আমাদের দাবি বেশি নয়। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, খেটে খেতে চাই। তাই সড়কে নিরাপত্তার সাথে যেন গাড়ি চালাতে পারি, সেজন্য চার দফা দাবি জানিয়েছি। এই দাবি মানা না হলে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে ধর্মঘটের কারণে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য দুটি বাস দিয়েছে চুয়েট কর্তৃপক্ষ। চুয়েটের ২০২৩–২০২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক পর্যায়ের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আসা–যাওয়ার সুবিধার্থে বাস দুটি দেওয়া হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এটি নগরীর পুরাতন রেল স্টেশন থেকে সকাল সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র অথবা আবেদনপত্র দেখিয়ে অভিভাবকসহ এসব বাস সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে। গুচ্ছ ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. সুদীপ কুমার পাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
গত সোমবার চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর থেকে ১০ দফা দাবিতে চার দিন ধরে চট্টগ্রাম–কাপ্তাই সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।