দাবানল এত ভয়ঙ্কর হলো কীভাবে

| শনিবার , ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৪:৪৫ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়ানো দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি তিন দিনেও, উল্টো ঝড়ের বেগে বাতাসে তা ছড়িয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। হাজার হাজার ঘরবাড়ি পুড়েছে, প্রাণ গেছে অন্তত ১০ জনের। ভয়াবহ এই দুর্যোগ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে লস অ্যাঞ্জেলেস, প্রতিবেশী কাউন্টিগুলো থেকেও আনা হচ্ছে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ও কর্মী বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরটিতে কেন দাবানল এমন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, সেই প্রশ্নটি এখন সামনে আসছে। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ফলে খরা আর প্রবল বাতাসের কারণে দাবানল দ্রুত ছড়াচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।

বিবিসি লিখেছে, দাবানল এমন ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকেও কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও ঠিক কোন

কোন বিষয়গুলো এর জন্য দায়ী, সেটি এখন স্পষ্ট নয়। ক্যালিফোর্নিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ব্যাটালিয়নের প্রধান ডেভিভ অ্যাকুনার মতে, ক্যালিফোর্নিয়া এলাকার ৯৫ শতাংশ দাবানলের শুরুটা হয় মানুষের কারণেই। যদিও এখনকার দাবানলের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল সেটি এখন স্পষ্ট করেননি সরকারি কর্মকর্তারা।

সান্তা আনা বাতাস : দাবানলের শিখা ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা আনা বাতাসের কথা বলা হচ্ছে। মরুভূমির পরিবেশ বা শুষ্ক অঞ্চল থেকে ঘণ্টায় ৯৭ কিলোমিটার গতিতে এই বাতাস বয়ে যায় উপকূলের দিকে। এ বাতাসকে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সান্তা আনার এই বাতাসই লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল উসকে দিচ্ছে, যা বাড়িঘর ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে, বাস্তুচ্যুত করছে হাজারো মানুষকে। শুষ্ক আর উষ্ণ সান্তা আনার বাতাস বেশ শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা, উটাহ ও ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শুকনো এলাকা থেকে এটি উড়ে আসে।

ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির পরিবেশ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যালেঙ হল বলছেন, শীতের মাসগুলোতে এ বাতাস দেখা যায়, যে সময়টাতে উত্তর গোলার্ধে মধ্য অক্ষাংশ জুড়ে আবহাওয়ায় নিম্ন ও উচ্চচাপ বেশি থাকে। কিছুক্ষেত্রে উচ্চচাপের পরিবেশটুকু শুষ্ক, গ্রেট বেসিন নামে পরিচিত পার্বত্য ঘেরা অঞ্চলের মধ্যে আটকে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের অনন্য ভৌগলিক বৈচিত্র্যের কারণেই নেভাডা, উটাহর অংশ ও অন্যান্য কাউন্টিগুলোর কিছু অংশ জুড়ে গ্রেট বেসিন অঞ্চল। এই অঞ্চলে যখন আর বেশি উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়, তখন সেটি গতি পেয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার নিম্নচাপ থাকা অঞ্চলের দিকে ধেয়ে এই উষ্ণ বাতাস বইতে থাকে, যাকে বলা হচ্ছে সান্তা আনা বাতাস। সান্তা আনার বায়ু স্বাভাবিকভাবেই উষ্ণ। কারণ সেটি গ্রেট বেসিনে মরুভূমির মতো পরিবেশে সৃষ্টি হয়।

হল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে সান্তা আনা বাতাসকে প্রভাবিত করছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। একটা বিষয় হলো উষ্ণ তাপমাত্রা আরও বেশি আগুনের সৃষ্টি করে। বিবিসি লিখেছে, বৃষ্টির অভাব আর প্রবল বাতাস দাবানলে ঘি ঢাললেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, যা এমন দাবানলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে বড় দাবানলের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যে সম্পর্ক রয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই দেশটির সরকারের গবেষণায়।

ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন যেমন অতিরিক্ত তাপ, খরা, উষ্ণ বায়ুমণ্ডল যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের দাবানলের মূল কারণগুলোর একটি। আর উষ্ণ গ্রীষ্ম ও বৃষ্টির অভাবে খরার কারণে বিশেষত ক্যালিফোর্নিয়ার অবস্থা শোচনীয়।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের সময় ধরা হয়ে থাকে সাধারণত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। তবে এ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউজম এর আগে বলেন, দাবানল একটি বহুবর্ষজীবী বা দীর্ঘ সময়ের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কোনো মওসুম নেই। বিবিসিকে ডেভিভ অ্যাকুনা বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের পলিসেডসের এবারের দাবানল তিন দশকের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো ঘটল। ছড়িয়েছে অনেক বড় পরিসরে। এই দাবানলে ১০ জনের প্রাণহানি ছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেসের ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ তাদের ঘড়বাড়ি ছেড়েছে।

ফায়ার ফাইটাররা প্রাণপণ চেষ্টার পরও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। আবহাওয়ার অবস্থা আর জলবায়ু পরিবর্তনের অন্তর্নিহিত প্রভাবগুলোকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, আশঙ্কা করা হচ্ছে যা সামনের দিনগুলোতে ছড়ানোর।

সবশেষ পরিস্থিতি কী : বিবিসি জানিয়েছে, মানুষ যে পেরেছে, তাই নিয়েই কোনোমতে প্রাণ বাঁচাতে ঘড়বাড়ি ছেড়েছে। পুলিশ বলছে, ৫ জনের লাশ পাওয়া গেছে ইটনে। তবে তাদের মৃত্যুর কারণ এখনও নিশ্চিত নয়।

পলিসেডসের দাবানলের মতো ইটনের দাবানলও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে হলিউড হিলস এলাকা। এখন পর্যন্ত ১ হাজার স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে, যার মধ্যে রয়েছে বাড়িঘড়, স্কুল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দাবানলের শিখা খানিকটা গতি হারিয়েছে। ‘চরম সংকটাপন্ন’ অবস্থা থেকে ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থায় এসেছে। তবে নতুন সপ্তাহে এই এলাকায় বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে বিবিসির সারাহ কেইথলুকাস জানিয়েছেন।

দাবানলের কারণে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি ও অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দারে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদাবানলে হাজার হাজার বাড়িঘর গ্রাস
পরবর্তী নিবন্ধতামাকের বদলে সবজি চাষ