‘দাফনের’ আড়াই বছর পর মায়ের কাছে ফিরল ফারজানা

একটি ভিডিওর চার ঘণ্টার মধ্যে মা-মেয়ের মিলন

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৯ মার্চ, ২০২৫ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

প্রায় আড়াই বছর আগে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে হারিয়ে যায় ১৮ বছরের ফারজানা নামে এক কিশোরী। হারানোর এক সপ্তাহ পর নারায়ণগঞ্জের ড্রেন থেকে একজন নারীর বিকৃত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন ফারজানার মা তাসলিম এই লাশটি তার মেয়ের মনে করে দাফন করেন। তারপরও মায়ের মন মানে না; সব সময় চারিদিকে মেয়ের খোঁজ খবর নিতেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখনই যখন দাফনের আড়াই বছর পর এই ঈদে ফারজানা ফিরলো মায়ের কাছে। এই অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়েছে নগর ডিবি পুলিশের বন্দরপশ্চিম জোনের উপপরিদর্শক মো. রবিউল ইসলামের ফেসবুকে শেয়ার করা ভিডিওর সূত্র ধরে। মো. রবিউল ইসলাম কয়েকদিন আগে মানবিক শওকতের বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশনে গেলে সেখানে ফারজানাকে দেখেমানবিক শওকতের কাছে ফারজানার ব্যাপারে জানতে চান। এসময় রবিউল ইসলাম ফারজানার কাছে তার পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সে তখন তার মা ও ভাইয়ের নাম বলে। মূলত সে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল।

তখন ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম ফারজানার একটি ভিডিও ধারণ করে তার নিজের ফেসবুক পেইজে শেয়ার করেন। ভিডিওটি শেয়ার করার ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি আপলোড করার চার ঘণ্টার মধ্যে ফারজানার মা তাসলিমা বেগমের চোখে পড়ে। তাসলিমা বেগম যেই বাসায় ভাড়া থাকতেন সেই ভবন মালিকের স্ত্রী ভিডিওটি দেখে ফারজানার মা তাসলিমা বেগমকে দেখালে তিনি মেয়েকে চিনে ফেলেন।

সেই সূত্র ধরে ফারজানার মা ডিবির রবিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করেন। গত ২৭ মার্চ ফারজানার মা চট্টগ্রামে এসে পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মানবিক শওকতের বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশনের অফিসে নিয়ে গিয়ে মা মেয়ের মুখোমুখি করিয়ে দেন। সেখান থেকে মেয়ে ফারজানাকে নিয়ে যান তাসলিমা বেগম।

এই ব্যাপারে মানবিক শওকতের বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার সাইদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, গত দ্বিতীয় রমজানে সাতকানিয়া ঠাকুরদীঘির পাড় এলাকার ব্যবসায়ীরা রাস্তার পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ফারজানাকে পেয়ে আমাদের এখানে (মানবিক শওকতের বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশনে) নিয়ে আসেন। তখন মেয়েটির প্রচুর রক্তক্ষণ হচ্ছিল। তার সদ্য শিশু সন্তান হয়েছে বলে ফারজানা আমাদেরকে জানিয়েছিলেন। তার শিশুটি কারা নিয়ে গেছে সে বলতে পারেনি। আমরা তাকে দ্রুত ডাক্তার দেখিয়ে ক্রমশঃ সুস্থ করে তুলি।

আমাদের এখানে ডিবির রবিউল ইসলাম ভাই নিয়মিত আসেন। এখানে যারা আছেন তাদের ওপর এই ধরনের ভিডিও ধারণ করে তাদের পরিবার পরিজনকে ফিরে পেতে সহযোগিতা করেন। গত কয়েকদিন আগে এখানে এসে তিনি ফারজানাকে দেখে তার সম্পর্কে জানতে পেরে তার ওপর একটি ভিডিও ধারণ করেন। ভিডিওতে ফারজানা এবার মায়ের সাথে ঈদ করতে চায় জানালে; তিনি তার ফেসবুক বন্ধুদের শেয়ার করে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেন।

মানবিক শওকতের বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার সাইদুল ইসলাম তৈয়ব বলেন, ফারজানা তাদেরকে জানায়, তাকে এক ছেলে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া নিয়ে আসে। সেখানে তার একটা বাচ্চাও হয়। বাচ্চাটা তারা রেখে দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়। ফারজানার মা আমাদেরকে জানিয়েছেন ফারাজানা যখন হারিয়ে যায় তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। এখন তার বয়স ২০ বছরের চেয়ে সামান্য বেশি।

দীর্ঘ দিন পর মায়ের সাথে বাড়ি ফিরে গেছেন ফারজানা। কিন্তু ফারজানার মত এমন নাম পরিচয়হীন অনেকে আছেন এই বেওয়ারিশ হাসপাতালে। তাদের অনুসন্ধানে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে মানবিক শওকতের বেওয়ারিশ ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডিসিদের প্রতি প্রধান উপদেষ্টার ১২ নির্দেশনা
পরবর্তী নিবন্ধরাস্তার পাশে ঈদ তাদের