ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় গ্রেপ্তার ও পলাতক দশ সন্দেহভাজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য গোয়েন্দা পুলিশকে সরবরাহ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গোয়েন্দা পুলিশের এক আবেদন মঞ্জুর করে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন গতকাল সোমবার এই আদেশ দেন।
এদিকে আনারকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন সিয়াম হোসেনের (আক্তারুজ্জামান শাহীনের সহকারী) বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মাহবুবুল হক গত রোববার সন্ধ্যায় এ আদেশ দেন। এছাড়া, আবেদনের ১২ দিন পর ভারতের ভিসা পেয়েছেন কলকাতায় খুন হওয়া সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। এখন তারা ভারতে যাওয়ার জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করছেন। খবর বিডিনিউজের।
আনার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান গতকাল দশ সন্দেহভাজনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য সরবরাহ করার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধানকে ওইসব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য সরবরাহের আদেশ দেন। ওই ১০ জন হলেন শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুইঁয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভুঁইয়া, সেলেস্টি রহমান, সিয়াম হোসেন, আক্তারুজ্জামান শাহীন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া ও জামাল হোসেন। আবেদনে বলা হয়, মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মামলার ভিকটিম ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে ও গ্রেপ্তার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামিরা ভিকটিমকে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার ভাড়া করা বাসায় নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং প্রমাণ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমের মৃতদেহের হাড় ও মাংস আলাদা করে মাংসপিণ্ড টয়লেটের কমোডে ফেলে দেয় এবং হাড়গুলো গারবেজ–পলিতে ভরে ট্রলি ব্যাগে করে আশে পাশের বর্জ্যখালে ফেলে দেয়। আসামিরা দীর্ঘদিন যাবত ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল। তারা পরিকল্পনা করে, মামলার ভিকটিমকে কীভাবে অপহরণ করবে ও টাকা পয়সা আদায় করবে এবং টাকা–পয়সা নেওয়ার পর কীভাবে হত্যা তথা লাশ গুম করবে তার লোমহর্ষক বর্ণনা গ্রেপ্তার করা আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে।
আবেদনে বলা হয়, মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্য পলাতক আসামিদের নাম–ঠিকানা সংগ্রহ এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ আসামির এনআইডি ও পাসপোর্ট নম্বরের বিপরীতে কোন ব্যাংকে কয়টা অ্যাকাউন্ট আছে তার তথ্য সরবরাহ করার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বরাবর আদেশ প্রদান করা একান্ত প্রয়োজন।
এদিকে সিয়াম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন গতকাল বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা সিয়ামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। সেই আবেদন গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছেন বিচারক। পুলিশের ভাষ্য, আনার হত্যার হোতা আক্তারুজ্জামান শাহীনের সহকারী হিসাবে কাজ করতেন সিয়াম। তার বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিনে। আনার খুন হওয়ার খবর আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সিয়াম ঘটনার পর নেপালে পালিয়েছেন বলে তাদের ধারণা। এর মধ্যে তিনদিন আগে নেপালে সিয়ামের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে। যদিও পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। আনার হত্যার তদন্তে থাকা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল বর্তমানে নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডুতে রয়েছেন।
আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ভারতের ভিসা পাওয়ার ব্যাপারে আনারের বক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ গতকাল রাতে বলেন, আজ (সোমবার) বিকালে পাসপোর্টসহ ভিসা হাতে পেয়েছি। আমরা ঢাকার ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। তারা আমাদের বলেছে আমাদের সঙ্গে ডিবির একজন প্রতিনিধিও ভারতে যাবেন। আমরা তাদের সবুজ সংকেতের অপেক্ষা করছি।
দুই দেশের গোয়েন্দাদের ভাষ্য মতে, কলকাতার নিউ টাউনে সঞ্জিভা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়েছে, তার সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিছু মাংসের টুকরা। সেগুলো এমপি আনারের কিনা, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার রক্তের সম্পর্কীয় স্বজনদের সেখানে যাওয়া প্রয়োজন। এজন্য গত ২২ মে ডরিন ও রউফ ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে আবেদন করেছিলেন।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য নিউ টাউনে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।












