আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের মীরসরাই উপজেলা অংশেই গত ১২ দিনে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে আরো প্রায় ২০ জন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন, ১ বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা, ট্রেনের ধাক্কায় ৩ জন, ট্রেনে কাটা পড়ে ১ জন, ঝরনার কূপে ও বাড়ির পাশে গর্তের পানিতে ডুবে এক শিশুসহ ২ জন এবং সাপের কামড়ে একজন মারা গেছে। এসব মৃত্যুর অন্যতম কারণ বেপরোয়া গাড়ি চলাচল, অসচেতনতা ও বেপরোয়া চলাফেরা। সর্বাধিক মৃত্যুর ঘটনা সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটেছে। সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহলের মন্তব্য–মহাসড়কে গাড়ির সংখ্যা গত এক দশকে বেড়েছে অনেকগুণ। তাই ৪ লেনের সড়ক অন্তত আরো দ্বিগুণ না হলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
গত ২৮ জুন প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ককে ৮ লেনে রূপান্তরিত করার প্রস্তাবনা কয়েক বছর থেকে হয়ে আসছিল। সড়কে যানবাহন মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় উক্ত প্রস্তাবনা অবশেষে ১০ লেন করার প্রস্তাবনা ও নকশা চূড়ান্ত হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেন বিশিষ্ট এ মহাসড়কটিকে আট লেনে উন্নীত করার নকশা গত বছর করা হয়েছিল। আট বছর আগে পুরোনো দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হলেও এরই মধ্যে সক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যানবাহন চলাচল করেছে এ মহাসড়কে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালেই এই মহাসড়ক দিয়ে দৈনিক যানবাহন চলার সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছিল ৩০ হাজারের ওপর। বর্তমানে এ সংখ্যা হয়েছে আরো দ্বিগুণ প্রায়। সড়ক ও জনপথের চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বলেন, এই মহাসড়ককে ঘিরে আগামী ২০ বছরের যানবাহন চলাচলের সম্ভাব্যতা মাথায় রেখে করা হচ্ছে বর্তমান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে মহাসড়কটিকে ৪টি সার্ভিস লেনসহ দশ লেনে উন্নীত করা হবে। পাশাপাশি এই মহাসড়কের দুপাশে অবস্থিত ঘনবসতি, স্থাপনা, হাটবাজার ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়টি মাথায় রেখে মহাসড়কের কোনো অংশে ওভারপাস এবং কোনো অংশে টানেল নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, অর্থ বরাদ্দ পেলেই যে কোনো সময় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়ে যাবে।
জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি সরকার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে মহাসড়কে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনায় কয়েকজন লোকজন মারা গেছেন। ঘুমের ঘোরে, বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও পথচারীদের অসচেনতার কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা–সেমিনার করে যাচ্ছি।
গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। কর্তৃপক্ষও যেন নির্বিকার। ফলে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৯ সালে একটি আইন কার্যকর করা হলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কটিকে ১০ লেনে উন্নীত করার যে পরিকল্পনা হয়েছিল, তার বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিবেদনে জানা গেছে, পরিকল্পনা বিভাগ ও অর্থায়ন বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদন শেষে অর্থ বরাদ্দ হবে। তাই আমরা দ্রুত অনুমোদন প্রত্যাশা করছি।