দশ বছরে কাস্টমসকে ২৬ চিঠি, তবুও হয়নি কাজ

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

বন্দরের অভ্যন্তরে কয়েক হাজার কন্টেনারসহ হাজার হাজার টন পণ্য পড়ে রয়েছে। নিলাম এবং ধ্বংসযোগ্য এসব পণ্য নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বেকায়দায় থাকলেও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই অবস্থায় বন্দর কর্তৃপক্ষ একের পর এক পত্র দিয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে সজাগ রাখার চেষ্টা করেছে। ২০১১ সাল থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২৬টি চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বরাবরে। প্রতিটি চিঠিতেই বন্দরের অভ্যন্তরে শেড, ইয়ার্ডসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে থাকা নিলামযোগ্য পণ্যের নিলাম এবং ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য ধ্বংস করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। অবশ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলেছে, মামলা মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন জটিলতায় নিলাম এবং ধ্বংসযোগ্য পণ্য নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। নিলাম প্রক্রিয়াও নানা আইনি জটিলতায় সম্পন্ন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে বহু বছর ধরে বিপুল পরিমাণ নিলামযোগ্য পণ্য শেড এবং ইয়ার্ড দখল করে পড়ে রয়েছে। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাসের নিয়ম থাকলেও আমদানিকারক খালাস করেননি এমন কয়েক হাজার কন্টেনার বন্দরের অভ্যন্তরে পড়ে রয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে বিগত ২০১১ সাল থেকে গত ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত সর্বমোট ২৬টি পত্র দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পত্রেই নিলাম এবং ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য ধ্বংস করার জন্য তাগাদা দেয়া হলেও কার্যতঃ কোন কাজ হয়নি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪৭৯টি গাড়ি, ২০ ফুটি এফসিএল কন্টেনার রয়েছে ১৯৫০ টিইইউএস, ৪০ ফুটি এফসিএল কন্টেনার রয়েছে ৪৭০০ টিইইউএস, এলসিএল কার্গো রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৭ প্যাকেজে ৪ হাজার ৫৭৫ টন, বাল্ক কার্গো ৫ হাজার ৪২২ প্যাকেজে ৬ হাজার ৫৬৭ টন। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরের পি শেডে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৪২৫ প্যাকেজে ৪১০ টন কেমিক্যাল ও বিপজ্জনক পণ্য রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘদিনের পুরাতন নিলাম ও ধ্বংসযোগ্য কেমিক্যাল ও বিপদজনক মালামালের পরিমাণ ১০২০ প্যাকেজে ৮৫ টন। এসব পণ্য বন্দরের অভ্যন্তরে উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করছে।
বন্দরে আটকে থাকা ৬ হাজার ৬৫০ টিইইউএস কন্টেনারসহ অন্যান্য প্যাকেজে বিভিন্ন ফলমূল, মাছ, ফিশ ফিড, মিট অ্যান্ড বোন মিলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রয়েছে। এসব পণ্য সময়মতো খালাস, নিলাম কিংবা ধ্বংস না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে যেমন জটের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে বন্দর এলাকা। বিষয়টি নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় পত্র দিয়েও নিজেদের উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার কথা জানাচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত জরুরীভিত্তিতে পণ্যগুলোর নিলাম, ধ্বংস কিংবা নিদেনপক্ষে নবনির্মিত অকশনগোলায় স্থানান্তরের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে গত দশ বছর ধরে দেয়া ২৫টি পত্রের ধারাবাহিকতায় গত ১৮ অক্টোবর ২৬ নম্বর পত্র দিয়েও একই অনুরোধ জানিয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের একেরপর এক পত্র দেয়ার কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে বলেন, আসলে আমরা আইনি মারপ্যাচে পড়ে রয়েছি। ইচ্ছে করলেই কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্যের নিলাম বা ধ্বংস করতে পারছে না। আদালতের কিছু ব্যাপার স্যাপারও এতে জড়িয়ে গেছে। আবার নিলাম করেও পণ্য বিক্রি করতে পারছে না। নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম দর উঠায় নিলাম কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। এটিও আইনি জটিলতা। তিনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবেন বলেও আশ্বস্ত করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতিসংঘকে আশার বাতিঘর বানানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
পরবর্তী নিবন্ধবন্দরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় সিএন্ডএফ কর্মী নিহত