চলতি বছরের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দুই বছরে নয় এক বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে সিলেবাস। ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে সংশোধিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। বিগত বছরগুলোতে পুরনো শিক্ষাক্রমে নবম ও দশম শ্রেণিতে শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছিল। ২০১২ সালের প্রণীত শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে আবারো বিভাগ বিভাজনে ফিরছে। শিক্ষার্থীরা কে কোন বিভাগ নেবে সেটাও ঠিক করবে দশম শ্রেণিতেই। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বিভাগ বিভাজনের পর শিক্ষার্থীরা এক বছরের মধ্যেই নতুন শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করবে।
২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রশ্নের ধরন সময় ও নম্বর বণ্টন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। সিলেবাসে থাকা বিষয়গুলো রচনামূলক অংশের ৭০ নম্বর এবং বহুনির্বাচনী অংশ ৩০ নম্বর থাকবে। ব্যবহারিক বিষয়গুলোতে তত্ত্বীয় অংশে ৭৫ ও ব্যবহারিক অংশে ২৫ নম্বর থাকবে। তত্ত্বীয় অংশে ৪০ নম্বর ও বহুনির্বাচনী অংশে ২৫ নম্বর থাকবে। খবর বাসসের।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বাসসকে জানান, খুব কম সময় এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। জুলাই বিপ্লবের পর শিক্ষা খাতে পূর্বের যে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক এবং পরীক্ষা পদ্ধতি চালু ছিল শিক্ষক–অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সে সিলেবাস স্থগিত করতে হয়েছে। সর্বশেষ যে বইগুলো পড়ানো হতো সে বইগুলোর ওপর পরিমার্জন করতে হয়েছে। ৪৪১টি বই মাত্র আড়াই মাসে পরিমার্জন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, ২০২৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিষয়ে বর্তমান সরকার অবগত রয়েছে। সে কারণে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন পাঠ্যক্রম অনুসারে এক বছরের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস রুটিন শিক্ষা পদ্ধতি তারা অনুসরণ করবে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে গেছে। আগামী ৫ জানুয়ারির মধ্যে দশম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীর কাছে বই পৌঁছে দেওয়ার জন্য এনসিটিবি সচেষ্ট আছে।
এনসিটিবি’র সদস্য প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী বাসসকে বলেন, দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যহত না হয়, সে লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিষয়েও নানা পরিবর্তন আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিমার্জিত সিলেবাস ও দশম শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি পরীক্ষা হবে। ২০২৫ সালে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখা ঠিক রেখে ২০১২ সালের জাতীয় শিক্ষাক্রম অনুসারে সংশোধিত ও পরিমার্জিত পাঠ্যক্রম (২০২৩ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করা হয়েছে। ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসারে আগামী বছর ২০২৬ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা হবে।
এনসিটিবি’র সদস্য বলেন, ২০২৫ সালের শিক্ষাবর্ষে মূলত যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছি তা শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ– শিখন কার্যক্রমকে বেগবান করার জন্য। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ২০২৫ এর দশম শ্রেণির দুই বছরের সিলেবাস এক বছরের শেষ করা সম্ভব হবে না বিধায় সে ক্ষেত্রে আমরা একটা কাস্টমাইজ সিলেবাস করেছি তাদের জন্য।
এই মোট ৩৩টা সাবজেক্টে এই কাস্টমাইজ সিলেবাস হয়েছে। এই সিলেবাসের ভিত্তিতে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে। এই পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ২০১২ সালের কারিকুলাম অনুসরণ করতে হবে। সেখানে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি ছিল। সেটা রাখা হয়েছে, সেই জায়গায় কিছু নতুন আইটেম যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি বিষয়ে কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নপত্র রেখেছি ১০ নম্বরের। বাকি সৃজনশীল প্রশ্নের ধারা পূর্ব অনুসারে হবে।
বাংলা বিষয়ের ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের সাথে সাথে দুটো রচনামূলক প্রশ্ন রাখা হয়েছে। যাতে বিশেষ করে সহপাঠ লেখায় তাদের সক্ষমতার বিষয় বিবেচনায় রেখে এই রচনামৃলক প্রশ্ন রাখা হয়েছে। ‘আমাদের গৌরব গাথা’ দশম শ্রেণিতে একটা চ্যাপ্টার সেট করা হয়েছে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য গণিতের ক্ষেত্রে আগের কারিকুলামের জায়গায় কিছু ‘লেস ইম্পর্টে’ অধ্যায় ছিল। এবার টেক্সট বই রিভিশনের সময় আমরা ওই জায়গাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করেছি। অর্থাৎ আগে যেগুলো পড়ে নাই বা না পড়লেও চলত সেই জায়গায় নতুন শিক্ষাক্রমে তাদের পড়তে হবে। যা না করলে টারশিয়ারি লেভেলে সমস্যা হবে। ইংরেজির ক্ষেত্রে লিটারেচারের অংশ যুক্ত করা হয়েছে। আগে কমিউনিউকেটির ইংলিশের আসপেক্ট ছিল। সেখানে লিসেনিং স্পিকিং, রিডিং ও রাইটিং–এ চার ধরনের মেথড ছিল। নতুন পাঠ্যক্রমে এর সঙ্গে লিটারেচার যুক্ত হয়েছে। পাঁচ টা কনটেম্পোরারি কবিতা শর্ট স্টোরি ইংরেজিতে যুক্ত হয়েছে। যা শিক্ষার্থীর মনোজাগতিক বিষয়ে এসব প্রভাব ফেলবে।
শিক্ষাক্রমে আরো পরিবর্তন বিষয়ে তিনি বলেন, ফোর সাবজেক্ট ছিল আটটি আবশ্যিক বিষয়। আরেকটা ছিল ঐচ্ছিক। ফোর সাবজেক্টে ছিল যা তা ছিল অপশনাল। এবার থেকে সবগুলোকে নতুন শিক্ষাক্রমে রিভাইস করা হয়েছে। এর কারণে তেমন ন্যাশনাল বা ফোর সাবজেক্ট ছিল তা কম্পালসারি সাবজেক্ট হিসেবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে তাদের পছন্দমত বিজ্ঞান মানবিক ও বাণিজ্যিক বিভাগের পাশাপাশি নিজেদের পছন্দমত চতুর্থ বিষয় নিতে পারে।