আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য চট্টগ্রাম–১৩ (আনোয়ারা–কর্ণফুলী) আসনে বিএনপি’র প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীকে ঠেকাতে একাট্টা হয়েছেন তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আসনটিতে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজামকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে বিএনপি। যদিও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে এ আসন থেকে ডাক পান পাঁচ নেতা। এর মধ্যে তিনজন সরওয়ার জামাল নিজাম–এর প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। এই তিন মনোনয়ন প্রত্যাশীর দাবি, ‘বিগত সময়ে দলের আন্দোলন–সংগ্রামে ছিলেন না সরওয়ার জামাল নিজাম। এরপরও তাকে প্রার্থী করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ’।
জানা গেছে, সরওয়ার জামাল নিজাম–এর মনোনয়ন বাতিল চেয়ে গতকাল বুধবার বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে যৌথ স্বাক্ষরে চিঠি দিয়েছেন ওই তিন মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর আগে গত ১৩ নভেম্বরও একই দাবিতে চিঠি দেন তারা। তবে গতকাল দেয়া চিঠির সঙ্গে সরওয়ার জামালের বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগ সংযুক্ত করা হয়। পৃথক দেয়া চিঠি দুটির কপি আজাদীর হাতে এসেছে। ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আলী আব্বাস, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এস এম মামুন মিয়া। এর মধ্যে হেলাল উদ্দিন ও আলী আব্বাস চিঠি দেয়ার বিষয়টি আজাদীকে নিশ্চিত করেন। মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও এস এম মামুন মিয়ার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর সরওয়ার জামাল নিজাম আজাদীকে জানান, যোগ্য মনে করায় দলের নীতিনির্ধারকরা তাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। ওয়ান–ইলেভেনের সময় তিনি জেল–জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আওয়ামী সরকারের আক্রোশের শিকার হয়েও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দাবি করেন তিনি।
লায়ন হেলাল উদ্দিন আজাদীকে জানান, দলের আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না সরওয়ার জামাল। আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে বিদেশে অবস্থান করতেন। দলের কর্মসূচিতেও অংশ নিতেন না। ফলে সরওয়ার জামাল নিজামের মনোনয়ন মেনে নিতে পারছেন না জেল, জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হওয়া তৃণমূলের কর্মীরা।
আলী আব্বাস আজাদীকে বলেন, সরওয়ার জামাল নিজাম ছাড়া বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশী যে কাউকে মনোনয়ন দিলে আমিসহ সবাই মেনে নিবে। যেহেতু সরওয়ার জামাল নিজাম আন্দোলন সংগ্রামে ছিলেন না তাই তার প্রাথমিক মনোনয়নে দলের তৃণমূল হতাশ।
কি আছে চিঠিতে : তিন মনোনয়ন প্রত্যাশীর দেয়া চিঠিতে বলা হয়– ‘জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। সে তালিকায় চট্টগ্রাম–১৩ সংসদীয় আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক সাংসদ সওয়ার জামাল নিজামকে। যিনি আনোয়ারা কর্ণফুলীতে বিএনপির সর্ব্বোচ্চ সুবিধাভোগী। তিনবারের সাংসদ হয়েও বিগত ২০০৮ সাল পরবর্তী দল এবং নেতাকর্মীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এই দীর্ঘ কঠিন আন্দোলন সংগ্রামে তার কোনো ভূমিকা বা উপস্থিতি ছিল না। তিনি কোনোস্তরেই বিএনপির সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেননি। সব সময় নির্বাচনের আগে এসে মনোনয়ন ভাগিয়ে নেন।’
চিঠিতে বলা হয়, এবারের পরিবেশ পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেক কঠিন ত্যাগ দিয়ে মাঠে থাকা দুুঃসময়ের কর্মীরা আজকের দিনে এসেছে, এই অবস্থায় কোনো সুবিধাবাদীকে প্রার্থী হিসেবে চাপিয়ে দিলে তৃণমূলের মজলুম নেতাকর্মীদের উপর চরম অন্যায় ও অবিচার হবে বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
চিঠি’র সঙ্গে বিভিন্ন তথ্য–প্রমাণও সংযুক্ত করা হয়। যা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ ধরনের তথ্য সম্পৃক্ত করে চিঠিতে বলা হয়, ‘২০১৩ সালে পুরো আন্দোলন চলাকালীন তিনি ১৯ জানুয়ারি থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমেরিকায় অবস্থান করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে মনোনয়ন এর জন্য দেশে আসেন।
চিঠিতে বলা হয়, ২০১৮ সালেও আমেরিকা অবস্থান করেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে মনোনয়ন এর জন্য দেশে আসেন এবং কোন এক অদৃশ্য কারণে মনোনয়নও পেয়ে যান। ২০১৮ এর নির্বাচনের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আনোয়ারায় বা দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে দেখা য়ায়নি।
চিঠিতে সওয়ার জামাল নিজামের বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ, তথ্য–উপাত্ত, প্রমাণ, দলিলাদি ও পাসপোর্ট যাচাই করে প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার প্রাথমিক মনোনয়ন বাতিলের ঘোষণা দেয়ার জন্য তারেক রহমানের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।
উল্লেখ্য, গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সঙ্গে ভার্চুয়ালি বৈঠক করেন তারেক রহমান। ওই বৈঠকে চট্টগ্রাম–১৩ আসন থেকে আমন্ত্রণ পান দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন, কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক এসএম মামুন মিয়া, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম–আহ্বায়ক আলী আব্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম, দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সাবেক আহবায়ক কমিটির সদস্য আলহাজ্জ মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর ৩ নভেম্বর প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে ১৩ নভেম্বর সরওয়ার জামাল নিজাম এর প্রার্থীতা বাতিল চেয়ে আনোয়ারায় বিক্ষোভ মিছিল হয়।












