দীর্ঘ সময়ের পর চট্টগ্রাম–১১ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে বিপাকে বিএনপি। ওই সংসদীয় এলাকা থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যিনি ছিলেন দলের একমাত্র অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। এবার (আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) তাকে চট্টগ্রাম–১০ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তার অনুপস্থিতিতে এ আসনে দলের মনোনয়ন চাচ্ছেন একাধিক নেতা। যাদের মধ্যে আছেন আমীর খসরুর ছেলেও। আছেন নগর বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদবীধারীও। ফলে প্রার্থী বাছাই করতে গিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন দলের হাইকমান্ড।
জানা গেছে, রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে চট্টগ্রাম–১১ আসনের জন্য গত ১৭ ডিসেম্বর ইসরাফিল খসরুর পক্ষে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করা হয়। এর পরদিন ১৮ ডিসেম্বর নাজিমুর রহমান, ২০ডিসেম্বর নাছিরুল আনোয়ার মানিক, ২৩ডিসেম্বর এ একে এম আবু তাহের ও মো. নূর উদ্দীন নাহিদ নিয়াজ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। ইসরাফিল খসরু ও নাজিমুর রহমান দুইজনের একজনকে এ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি–নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এরপর তিনি জাতীয় রাজনীতিতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মূলত ওই সময় থেকে চট্টগ্রাম–১১ আসনে সক্রিয় হয়ে উঠেন ইসরাফিল খসরু। তখন দলীয় কর্মীদের পাশে দাঁড়ান তিনি। নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক মামলা পরিচালনা, জেলে গেলে নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেন ইসরাফিল খসরু। এছাড়া কর্মীদের মনোবল চাঙা রাখতে এলাকাভিত্তিক ছোট পরিসরে কিন্তু অনেকটা ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচিতেও অংশ নেন। এর মধ্য দিয়ে দলের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে উঠে তার। ২০২৪ সালের ১৫ জুন বিএনপির ‘স্পেশাল এ্যাসিস্ট্যান্ট টু দ্য চেয়ারপার্সন ফরেন এ্যাফেয়ার্স এ্যাডভাইজারি কমিটি’র সদস্য নির্বাচিত হন ইসরাফিল খসরু।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসরাফিল খসরু চৌধুরী আজাদীকে বলেন, অতীতে দলের জন্য কাজ করেছি, এখনো করে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও করে যাব ইনশা আল্লাহ। এখন দল যদি কাজের মূল্যায়ন করে এবং প্রার্থী হিসেবে আমাকে যোগ্য মনে করে সেটা আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয় হবে।
এদিকে নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের সংগঠক ছিলেন। ১৯৮৫ সালে নগর ছাত্রদলের এসিস্টেন্ট সেক্রেটারি, ৮৯ সালে জয়েন্ট সেক্রেটারি ও ৯২ সালে যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ৯৩ সালে কাউন্সিলের মাধ্যমে নগর ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনিই প্রথম চট্টগ্রাম মহানগর থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ–সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৭ সালে নগর বিএনপির সহ–সভাপতি ও পরবর্তীতে যুগ্ম আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৭ জুলাই নগর বিএনপির সদস্য সচিব নির্বাচিত হন।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে নাজিমুর রহমান আজাদীকে বলেন, আমি বিশ্বাস করি মনোনয়ন দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কর্মীর মূল্যায়ন করা হবে। দল যদি রাজনৈতিক কর্মীর মূল্যায়ন করে সেক্ষেত্রে আমিই দাবিদার। তিনি বলেন, আমরা ৬ ভাইয়ের মধ্যে পাঁচজনই রাজনৈতিক মামলার আসামি হয়ে জেল খেটেছি। আমি নিজেও বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে তিনবার নতুন জীবন পেয়েছি। আশা করছি, দল এসবের মূল্যায়ন করবে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৭ থেকে ৩০ এবং ৩৬ থেকে ৪১ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম–১১ আসনটি গঠিত। পতেঙ্গা, বন্দর, সদরঘাট ও ইপিজেড থানা এবং ডবলমুরিং থানার একাংশ পড়েছে এ আসনে। এখানে উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চট্টগ্রাম–৮ আসনটি দুই ভাগে ভাগ করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। নতুন আসনের পরিচিতি লাভ করে চট্টগ্রাম–১১। এরপর অনুষ্ঠিত চারটি
(২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে, নবম থেকে দ্বাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের এম এ লতিফ।
২০০৮ সালের পূর্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এম এ মান্নান। এছাড়া ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সুলতান আহমেদ চৌধুরী, ১৯৮৬ সালে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন এরশাদ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের ইসহাক মিয়া ও ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লিয়াকত আলী নির্বাচিত হন।
এছাড়া ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন নির্বাচনী এলাকা–৮, (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, বন্দর) থেকে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। ওইসময় আমীর খসরু বেগম জিয়ার সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে একই বছরে নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম–৮ এর উপ–নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ সালে (ষষ্ঠ ও সপ্তম) ও ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও খসরু সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।












