দরপত্র আহ্বানের ২১ মাসেও নিয়োগ হয়নি ঠিকাদার

পিডির পিপিআর লঙ্ঘনের মাশুল সিপিটিইউর মতামত মানার নির্দেশ মন্ত্রণালয়ের চসিকের ২৬০ কোটির টাকার প্রকল্প

মোরশেদ তালুকদার | মঙ্গলবার , ১ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:০৭ পূর্বাহ্ণ

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর)-২০০৮ অনুযায়ী, দ্বিখাম বিশিষ্ট আহূত দরপত্রের কারিগরি প্রস্তাব নিয়ে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে (টিইসি) মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে হয়। এক্ষত্রে কমিটির প্রতিটি সদস্যের স্বাক্ষর থাকতে হয় প্রতিবেদনে। তবে এ বিধিমালা না মেনে চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এলইডি বাতি স্থাপনে একটি প্রকল্পের জন্য আহূত দ্বিখাম বিশিষ্ট দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাব খুলতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দেন প্রকল্প পরিচালক। অর্থাৎ দ্বিখাম বিশিষ্ট দরপত্রে কারিগরি প্রস্তাবে পিপিআর লঙ্ঘন করে আর্থিক প্রস্তাব খোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এতে সৃষ্টি হয় জটিলতা। ফলে দরপত্র আহ্বানের ২১ মাস পার হলেও ঠিকাদার নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না।

এই অবস্থায় সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) এর মতামত এবং এ সংক্রান্ত বিধিবিধান মেনে দরপত্রের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করতে চসিককে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, মন্ত্রণালয়ের একটা চিঠি পেয়েছি। এর প্রেক্ষিতে প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম এগিয়ে নিতে মিটিং আহ্বান করতে বলেছি। এ বিষয়ে জানার জন্য প্রকল্প পরিচালক ও চসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেন নি। হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দিলেও সাড়া দেননি তিনি।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ ৮৭ হাজার টাকার ভারতীয় ঋণ সহায়তা প্রকল্পের অধীনে ‘মর্ডানাইজেশন অব সিটি স্ট্রিট লাইট সিস্টেম অ্যাট ডিফারেন্স এরিয়া আন্ডার চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’ শীর্ষক এলইডি বাতি স্থাপন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ৯ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। প্রকল্পের আওতায় নগরের ৪১ ওয়ার্ডে মোট ৪৬৬ কিলোমিটার সড়কে এলইডি বাতি স্থাপন করার কথা। প্রকল্পটির দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর। দরপত্র দাখিলের শেষ দিনে একই বছরের ১৪ ডিসেম্বর তিনজন বিডার অংশ নেন। পিপিআর লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন জটিলতায় এখনো ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী ভারতের এঙ্মি ব্যাংক তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শর্ট লিস্ট পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– ‘এনার্জি ইফিসিয়েন্সি সার্ভিসেস লিমিটেড’, ‘সিগনিফাই ইনোভেশন্স ইন্ডিয়া লিমিটেড’ এবং ‘শাপর্জি পালনজি অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেড’। একইভাবে বাংলাদেশের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয় প্রকল্পের জন্য। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– ‘ট্রেড ম্যাজিস্টিক লিমিটেড’, ‘এইচটিএমএস লিমিটেড’ ও ‘ফটো স্টার লিমিটেড’। শর্ট লিস্টের প্রতিষ্ঠানগুলোয় দরপত্রে অংশ নেয়। বাছাই শেষে ভারতীয় একটি ও বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হবে। যারা যৌথভাবে কাজ করবে।

অতঃপর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা : গত ২৫ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে প্রকল্পের দরপত্রের বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয় চসিককে। এতে প্রকল্পের আওতায় আহ্বানকৃত দরপত্রের জন্য গৃহীত পদক্ষেপসমূহের বিষয়ে সিপিটিইউ এর মতামত এবং সংক্রান্ত বিধিবিধানের আলোকে মূল্যায়ন কমিটির সদস্যগণের স্বাক্ষর সম্বলিত পূর্ণাঙ্গ দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়নপূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

কি আছে সিপিটিইউ’র মতামতে : পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) গত ১২ জুন চিঠি দিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে প্রকল্পের আওতায় আহ্বানকৃত দরপত্রের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে মতামত জানায়। এতে বলা হয়, ‘প্রকল্প পরিচালক বিদ্যমান সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালা বিষয়ে অবগত নন’।

এর আগে আর্থিক প্রস্তাব খোলা প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক এ সংক্রান্ত একটি পিআইপিপিআর (দ্যা প্রসিডিউউরস ফর ইমপ্লিমেন্টশন অব দ্যা পিপিআর) এর রেগুলেশন৪ এর উদ্ধৃতি দেয়া হয়। এ বিষয়ে সিপিটিইউ এর মতামত হচ্ছে, রেগুলেশনটি পিপিআর ২০০৩ সংক্রান্ত। যা রহিত হয়ে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ (পিপিএ ২০০৬) ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ (পিপিআর ২০০৮) জারি হয়েছে। যা ২০০৮ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে পিপিএ বা পিপিআর এর অনুসরণ বিষয়ে পিপিএ ২০০৬ এর ধারা ৩()() তে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সিপিটিইউ এর মতামতে বলা হয়, দুই খাম দরপত্র পদ্ধতিতে কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন ও অনুমোদনের ক্ষেত্রে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন করতে হবে। যা কমিটির সদস্যবৃন্দ কর্তৃক স্বাক্ষরিত হতে হবে। ফলে সভার কার্যক্রম লিপিবদ্ধ করার জন্য আলাদাভাবে কার্যবিবরণী তৈরি করা হলেও কারিগরি প্রস্তাব অনুমোদনের নিমিত্ত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন করে স্বাক্ষর করতে হবে।

জানা গেছে, কারিগরি প্রস্তাব মূল্যায়নের কোনোরুপ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে এবং কার্যবিবরণী না করে মূল্যায়ন বিবরণী ভারতের এঙ্মি ব্যাংকে প্রেরণ করে চসিক। এ বিষয়ে গত এপ্রিল মাসে প্রকল্প পরিচালকের কাছ থেকে ব্যাখ্যা গ্রহণের নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়। এরপ্রেক্ষিতে ২৪ এপ্রিল প্রকল্প পরিচাললক ব্যাখ্যা দেন। পরবর্তীতে ওই ব্যাখ্যা নিয়ে সিপিটিইউ এর মতামত নেয় মন্ত্রণালয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্ধুকে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে ভবন থেকে লাফ
পরবর্তী নিবন্ধ৫ বছর পর পূূর্ণাঙ্গ কমিটি