দখল-দূষণে বিপন্ন ত্রিপুরা সুন্দরী ছড়া

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শনিবার , ২ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৪ পূর্বাহ্ণ

দূষণ-দখলে ছোট হয়ে আসছে রাঙ্গুনিয়ার ত্রিপুরা সুন্দরী ছড়াটি। ছড়ার তীরঘেঁষে এরই মধ্যে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক অবৈধ স্থাপনা। মধুছড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পর্যন্ত এই ছড়াটির দু’পাশ প্রতিনিয়তই দখল হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার পাশাপশি ছড়াটিতে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিন গিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বহু পুরনো এই ছড়াটির তীর যে যার মতো দখলে নিচ্ছে। তবে এ নিয়ে প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দখলদাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মধুছড়ি থেকে চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজার পর্যন্ত ছড়ার দু’পাশ দখলে নিয়ে দোকান, বাসাবাড়িসহ নানা স্থাপনা গড়ে তুলেছে এলাকার একাধিক ব্যক্তি। ছড়ার দোভাষী বাজার থেকে ত্রিপুরা সুন্দরী সেতু পর্যন্ত স্থাপনা উচ্ছেদে প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক নোটিশ দেওয়া হলেও দখল প্রক্রিয়া থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই।
এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি জেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে ছড়া উদ্ধারে উচ্ছেদ কমিটি করেও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। এই ছড়া রক্ষায় সংশ্নিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ত্রিপুরা সুন্দরী ছড়াটি চন্দ্রঘোনা মিশন এলাকার মধুছড়ি থেকে শুরু হয়ে কর্ণফুলী নদীতে গিয়ে মিশেছে। এক সময়ে প্রবহমান এই ছড়াটিই ছিল এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাষণের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু কয়েক যুগ আগে থেকেই কিছু প্রভাবশালীর নজর পড়ে এই ছড়ার ওপর। একটি দুটি করে ক্রমেই ছড়ার ওপর গড়ে ওঠে বহুতল ভবনসহ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এসব স্থাপনার ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ছড়াটি। এতে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছড়ার উৎপত্তি অংশে রয়েছে চন্দ্রঘোনা মিশন এলাকা। ওই স্থানেও ছড়াটি দখল করে গড়ে উঠেছে নানা স্থাপনা। নিচের অংশে চন্দ্রঘোনা দোভাষী বাজারের মাছ বাজার থেকে শুরু করে কর্ণফুলী নদী পর্যন্ত এই ছড়ার বিস্তীর্ণ জায়গা দখল হয়ে গেছে। ছড়া দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ করে গড়ে উঠেছে মার্কেট, বাসাবাড়ি, দোকানসহ নানা স্থাপনা। এসব স্থাপনার ফলে কয়েক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ছড়াটির কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।
এদিকে, প্রতিদিন ছড়াটির শেষ সীমান্তে কর্ণফুলী নদীর মোহনায় চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টিয়ান হাসপাতাল প্রবেশপথের মুখে দোভাষী বাজারের আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। ছড়াটির মোহনা থেকে খ্রিস্টিয়ান হাসপাতাল এলাকা পর্যন্ত পলিথিনসহ আবর্জনা ভাসছে। ফলে ছড়ার পানি কুচকুচে কালো রং ধারণ করেছে। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় এলাকাবাসীকে।
আবুল হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, ত্রিপুরা সুন্দরী নামে এই ছড়া দিয়ে একসময় পানি প্রবাহিত হত। চন্দ্রঘোনা লিচু বাগান থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার নিষ্কাশিত পানি এই ছড়া দিয়েই প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলীতে যেত। কিন্তু ছড়াটি এখন সম্পূর্ণরূপে দখল হয়ে গেছে। এতে এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে চন্দ্রঘোনা-কদমতলী ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আজগর বলেন, শুধু দোভাষী বাজার নয়, ছড়ার উৎপত্তিস্থল কাপ্তাইয়ের মধুছড়ি থেকেই এই ছড়াটির দুপাশ অনেক বছর আগেই দখল হয়ে গেছে।
উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজীব চৌধুরী জানান, ছড়াটির অবৈধ দখল উচ্ছেদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন মণ ওজনের ডোরাকাটা ছাগল
পরবর্তী নিবন্ধভোটের হাওয়ায় উৎসবমুখর গ্রাম