চট্টগ্রাম মহানগরীতে বস্তি, সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনায় জোরালো অভিযান চললেও নগরবাসীর স্বস্তি মেলে না সহজে। কেননা, উচ্ছেদের পর পুনরায় দখল হয়ে যায়। দখল হয়ে যায় সাধারণ মানুষের হাঁটা–চলার পথও। ফলে সড়ক ও ফুটপাতে সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। দখল এবং পুনর্দখল বিষয়ে প্রতিযোগিতা চলে আসছে অনেক আগে থেকেই। গত ২৩ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘উচ্ছেদের ১৭ মাস পর সবকিছু আবার আগের মতো’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তর সিআরবির রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনি–সংলগ্ন গোয়ালপাড়ার তুলাতলী ও তুলাতলী বস্তি উচ্ছেদ করেছিল ২০২২ সালের ২০ মার্চ। সিআরবির সন্নিকটে রেলওয়ের প্রায় তিন একর পাহাড়ি ও সমতল জায়গা দখল করে তিন শতাধিক অবৈধ দখলদার যুগের পর যুগ বসবাস করছিল এই দুটি বস্তিতে। যার কারণে অনেকে সেমিপাকা, অনেকে দোতলা ঘর করেছে। অনেকে গাছপালা ঘেরা বাংলো টাইপের ঘর করেছে। অনেকে ঘর–বাড়ির সামনে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসাও করছিল।
গত বছরের ২০ মার্চ একটানা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে রেলওয়ের এস্টেট বিভাগ এই দুটি বস্তির সব ঘরবাড়ি (৮৩৭টি) উচ্ছেদ করেছিল। বাদ যায়নি প্রভাবশালীদের ঘরবাড়িও। রেলওয়ের এস্টেট বিভাগের উচ্ছেদের এক মাস পর প্রকৌশল বিভাগ লোহার বিট দিয়ে পুরো এলাকা ঘেরাও দেয়। কিন্ত অবৈধ দখলদাররা লোহার ঘেরাওকে পাত্তা দেয়নি। রাতারাতি রেলওয়ের এস্টেট বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সামনে আগের মতো ঘর তৈরি করে বসবাস করছেন।
উচ্ছেদের ১৭ মাস পর গত দুদিন সিআরবি–সংলগ্ন গোয়ালপাড়া তুলাতলী এবং তুলাতলী বস্তি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, দুটি বস্তিতে গত বছর উচ্ছেদের আগে অবৈধ দখলদাররা যে যেখানে ছিলেন তারা আবার আগের মতো ঘরবাড়ি করে বসবাস করছেন। তুলাতলী বস্তিতে ৪৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাসরত বৃদ্ধ রফিকুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, আমি আমার বাবার সাথে এই এলাকায় এসেছি। বাবা মারা গেছেন ১২ বছর হয়েছে। আমাদের এই বস্তি এলাকা অনেকবার উচ্ছেদ হয়েছে। উচ্ছেদের পর আবার আমরা যে যার জায়গায় ঘর করে থাকি। একজনের জায়গা অন্যজন দখল করে না। উচ্ছেদের আগে রেলওয়ের অফিসারও আমাদেরকে বলেন, এখন উচ্ছেদ করতে হচ্ছে। এক–দুদিন পর আবার আপনারা চলে আসতে পারবেন। এভাবেই আমরা এখানে আছি। এখানে আমরা সবাই ভোটার। আমাদের এখানে রেলওয়ের পানি–বিদ্যুৎ লাইন আছে। আমরা সবাই এক সমাজ হিসেবে বসবাস করছি। উচ্ছেদ করতে হয়, ওদেরকে (রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের) দেখানোর জন্য।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ এস্টেট অফিসার সুজন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আমরা উচ্ছেদ করার পর উচ্ছেদকৃত জায়গা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রকৌশল বিভাগের। বিভাগীয় প্রকৌশলী–২ (ডিএন–২) এগুলো দেখাশোনা করেন। আমরা তো গোয়ালপাড়া তুলাতলী এবং তুলাতলী বস্তি একসাথে উচ্ছেদ করেছি। উচ্ছেদের পর লোহার বিট দিয়ে ঘেরাও দেওয়া হয়েছিল। আবার অবৈধ দখলদাররা দখল করেছে কিনা জানি না। আমি খবর নেব।
প্রতিবেদনে রেলের কর্মকর্তাদের সরাসরি দোষারোপ করে বাসিন্দাদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন। নগর বিশ্লেষকরা বলেন, দখল–উচ্ছেদের এ খেলা নতুন নয়। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে এভাবেই একদিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে, অন্যদিকে আবার সেগুলো দখল হয়ে যাচ্ছে। বারবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা থিতু হয়ে এলে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর জায়গায় ফের গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দেয়, উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর যদি আবারও সেখানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়, তবে এত টাকা ব্যয় করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার অর্থ কী? দখল–উচ্ছেদের খেলা বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। উদ্ধার করা জায়গায় তদারকি জোরদার করতে হবে। স্থানটি কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার একটা টেকসই পরিকল্পনা থাকতে হবে এবং সেটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। দখলদার উচ্ছেদ করে সেখানে কিছু না করে রেখে আসা যাবে না।