দখলমুক্ত ফুটপাত নাগরিক অধিকার অভিযান অব্যাহত থাকুক

| বুধবার , ২৪ আগস্ট, ২০২২ at ৬:১৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ভ্রাম্যমাণ আদালত নগরীর বিভিন্ন ফুটপাত ও রাস্তা থেকে প্রায় অর্ধতশাধিক অবৈধ স্থাপনা ও দোকানের বর্ধিতাংশ উচ্ছেদ করেছে। দৈনিক আজাদীতে গত ২২ আগস্ট প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত রোববার আন্দরকিল্লা থেকে মোমিন রোড, চেরাগীপাহাড়, জামালখান হয়ে আসকার দীঘি পাড় পর্যন্ত এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সামনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় এ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় রাস্তায় মালামাল রেখে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির দায়ে চার দোকান মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে ১১ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলী। অভিযানে অংশ নেয়া চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, আন্দরকিল্লা থেকে চেরাগী, জামালখান হয়ে আসকার দীঘি পর্যন্ত ১০ থেকে ১২টি দোকানের বর্ধিতাংশ উচ্ছেদ করা হয়। এ সব দোকান ফুটপাতে চলে আসে।
এ দিকে উচ্ছেদ অভিযান চলাকালে দেখা গেছে, রাস্তার ওপর অবৈধভাবে পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেল ফেলে দেয়া হয়। ভ্যানগাড়িও ভেঙে দেয়া হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় সেপটিক ট্যাংকের উপর নির্মাণ করা দুটি ফার্মেসি ভেঙে দেয়া হয়। সেখানে খালের উপরেও গড়ে উঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করে খাল দখলমুক্ত করা হয়।
আসলে সাধারণত ব্যস্ত সড়কের পাশে ফুটপাত তৈরি করা হয় সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য। মানুষ যেন অনায়াসে চলাফেরা করতে পারে, ফুটপাত ব্যবহার করতে পারে; সেজন্য ফুটপাত পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। এর পাশে দোকানপাট নির্মাণ বা ফুটপাতের ওপর দোকানের বর্ধিত অংশ চলে যাওয়া বা হকারদের বসতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখি! দেখি এর বিপরীত চিত্র। ফুটপাতের পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলোর মালামালেই দখলে থাকে ফুটপাতের অর্ধেক জায়গা। ফলে ফুটপাতে চলাচল করতে পথচারীদের অসুবিধা হয়। অনেক সময় ফুটপাতের এ অবস্থার জন্য পথচারীদের রাস্তার পাশ দিয়ে চলতে হয়। বিশেষ করে নারীদের চলাচলে বেশি অসুবিধা দেখা দেয়। এসব দোকানে জনসাধারণের ভিড়ের কারণে নারী পথচারীদের চলাচল করতে হিমশিম খেতে হয়। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের প্রধান সড়কে হাঁটতে হয়। নগর বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফুটপাত শুধু রাস্তা বা সড়কের সৌন্দর্যই বাড়ায় না। পথচারীদের নিরাপদে হাঁটতে সাহায্য করে। নির্বিঘ্নে চলাচলের উপযুক্ত স্থান ফুটপাত। প্রশস্ত ফুটপাতের কারণে যানজট বা দুর্ঘটনাও কমে অনেক। ব্যস্ত নগরীকে যানজটমুক্ত রাখতে স্বল্প দূরত্বে হেঁটে চলারও কোনো বিকল্প নেই।
নগরের ফুটপাতগুলোর দিকে তাকালে করুণ চিত্র ভেসে ওঠে। ফুটপাত যে মানুষের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, একটা চরম বিশৃঙ্খলা এবং সময়ের বিশাল অপচয় হচ্ছে- যার ফলে মানুষের জন্য নগর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে যেন তাকানোর সময় নেই কারো। ইতোপূর্বে সম্পাদকীয়তে আমরা লিখেছিলাম, ছোট ছোট দোকান, নির্মাণসামগ্রী, ব্যবসাসামগ্রী আর হকারদের ঠেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রতিদিনই হয়রানি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। আবার কোথাও কোথাও পাশের দোকানের পণ্যসামগ্রী রাখা হয় সামনের ফুটপাত দখল করে। এমতাবস্থায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সড়ক-ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। গত ২৫ জুলাই প্রকাশিত দৈনিক আজাদীতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক ও ফুটপাত থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং দখলদারমুক্ত করতে প্রায় অভিযান চালায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সকালে অভিযান চালালে বিকেলে আবারো দখল হয়ে যায়। এ অবস্থায় উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনর্দখল রোধে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ বা বিশেষ দল মাঠে নামাচ্ছে সংস্থাটি। দলটি উচ্ছেদ হওয়া জায়গাগুলো নিয়মিত পরিদর্শন করবে। এ সময় কোথাও পুনর্দখল হতে দেখলে সাথে সাথে আবারো উচ্ছেদে ‘অ্যাকশন’ শুরু করবে। এ ছাড়া সারা শহর ঘুরে ঘুরে কোথাও সড়ক ও ফুটপাত দখল হয়েছে কীনা তা চিহ্নিত করবে নবগঠিত ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ এর সদস্যরা। সেই অ্যাকশনের একটি ধাপ হলো সাম্প্রতিক অভিযান।
ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য বিভিন্ন সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং ফুটপাত দখলমুক্ত করাও হয়। কিন্তু কিছুদিন পরই অবৈধ শক্তির ছত্রছায়ায় সেই ফুটপাত আবার দখল হয়ে যায়। সবচেয়ে অবাক হওয়ার বিষয়, ফুটপাত দখলমুক্ত করার পরদিনই আগের চেহারায় চলে এসেছে মোমিন রোডের চিত্র। এ বিষয়ে মনিটারিং করার জন্য অনুরোধ জানাই। পথচারীদের অবাধ যাতায়াতের সুবিধার জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত থাকা দরকার। ফুটপাত নাগরিকদের চলাচলের সুবিধার্থে পরিচ্ছন্ন থাকবে-সেই প্রত্যাশা সবার। দখলমুক্ত ফুটপাত নাগরিক অধিকার। নগর বিশ্লেষকরা বলেন, প্রশাসনিক ঔদাসীন্যতার কারণে নাগরিক অধিকার নষ্ট হতে পারে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধইউক্রেনের স্বাধীনতা দিবস