দেশে পুরোনোদের সরিয়ে নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে দখলদার আর চাঁদাবাজি সিন্ডিকেট। পত্রপত্রিকায় এসব বিষয়ে সংবাদ প্রকাশত হচ্ছে। চাঁদাবাজি ও দখলে নেয়ার সত্যতাও মিলেছে। এমন দখল আর চাঁদাবাজির ধারাবাহিকতা আর দেখতে চান না দেশবাসী। তাদের প্রত্যাশা অন্তর্বর্তী সরকার এ ব্যাপারে কঠোর হবেন। কেননা, ছাত্র জনতার প্রবল আন্দোলনে একনায়ক শাসন ব্যবস্থার অবসান হয়েছে। এখন চাওয়া দুর্নীতি, লুটপাট, দখল, চাঁদাবাজিসহ দুষ্ট চক্রের অবসান। কিন্তু এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার শুরু হতে না হতেই নতুন দখলদারি প্রতিষ্ঠা করতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মরিয়া হতে দেখা যাচ্ছে দখলবাজদের। গত ২৮ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয় ‘আনোয়ারায় বেড়িবাঁধে দখলযজ্ঞ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন। এতে বলা হয়েছে, আনোয়ারায় সাগর তীরের ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের দুইপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে প্রস্তুতি শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বাঁধের দুইপাশের অন্তত ৬০ একর সরকারি জমি অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। টানেল ও পারকি সমুদ্র সৈকত ঘিরে পর্যটক বাড়তে থাকায় বেড়িবাঁধ খেকো সংঘবদ্ধ চক্রটি হোটেল, কটেজ, দোকান নির্মাণের নামে নির্বিচারে দখলযজ্ঞে মেতেছে। কোথাও মসজিদ বানিয়ে সরকারি জায়গা হাতিয়ে নেয়ার কারবারও চলছে। অবৈধ দখলে থাকা এসব জমির মূল্য আড়াইশ’ কোটি টাকার বেশি হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে আনোয়ারায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বেড়িবাঁধের ৬০ একর জমি অবৈধভাবে দখল করে স্থায়ী–অস্থায়ী স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। স্থায়ীভাবে দখল করে রাখার কারণে বেড়িবাঁধের ক্ষতি ও উন্নয়ন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আনোয়ারার বৈরাগ ইউনিয়নের শাহাদত নগর থেকে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ঘেঁষে গহিরা বার আউলিয়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও আশেপাশের এলাকায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব জমিতে অবৈধ প্রভাবশালীরা বিভিন্ন স্থাপনা, বসতঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করে রাখার কারণে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বেড়িবাঁধ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার কারণে অবৈধ দখলদারদের দখলে থাকা এসব জমি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো। বর্তমানে, রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের দুপাশের ৫০ থেকে ৬০ একর জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দীর্ঘ দিন ধরে দখলে নিয়ে পাকা ঘর, সেমি পাকাঘর, পর্যটন কটেজ, টিন সেট ঘর, দোকানপাটসহ বাণিজ্যিকভাবে নানান স্থাপনা তৈরি করে দখলে রাখে। এসব স্থাপনা সরিয়ে নিতে বার বার তাগাদার পর ফল হয়েছে উল্টো দখলদারের সংখ্যা কমার চেয়ে গত ১ বছরে বেড়ে আরো দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে। বর্তমানে ১৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে কয়েকশত অবৈধ দখলদার রয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে রাজনৈতিক দল বিশেষ ক্ষমতাসীন দলের একটা নিকট সম্পর্ক থাকে। সন্ত্রাসীদের সঙ্গেও ক্ষমতাসীনদের সম্পর্ক থাকে ওতপ্রোত। বিগত সরকারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, দুর্নীতি, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাস, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, অর্থলুট, পাচার ইত্যাদির মহোৎসব চলেছে। এখন গোটা দেশ ও জাতিকে সেই অপশাসন, দুঃশাসন ও মাফিয়া শাসনের খেসারত গুনতে হচ্ছে। সেই সরকারের পতনের কেউ আর ওই ধরনের শাসন দেখতে চায় না। তারা চায় নতুন বাংলাদেশ দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, অন্যায়, অপকর্ম, লুণ্ঠন ও পাচার মুক্ত হবে। যেখানে সবাই মানবিক, রাজনৈতিক, সাংবিধানিক অধিকার পাবে, নিরাপত্তা পাবে, সুশাসন ও আইনের শাসন লাভের অধিকারী হবে। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, ছাত্র–জনতার এই চাওয়া ও প্রত্যাশা যেন অসম্ভবপর হয়ে উঠতে যাচ্ছে। পুরানো বয়ান–বচন যেমন ফিরে আসছে, তেমনি সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ইত্যাদিও ফিরে আসছে।
সরকারি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন গার্মেন্টের ঝুট ব্যবসায় প্রভাবশালীদের আশ্রয়–প্রশ্রয়ে থাকা চাঁদাবাজ–দখলবাজরা এখন বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আগের দখলবাজ–চাঁদাবাজদের আত্মগোপনের সুযোগে এখন নতুন করে চলছে দুর্বৃত্তায়ন।
বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, দারিদ্র্য মোচন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা এর প্রতিকারের একমাত্র উপায়। আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়; বিশেষ করে, যখন পুলিশের উদ্যম ও মনোবল একেবারে তলানিতে। সরকারকে এ ব্যাপারে আরো ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে সেনাবাহিনীকে। রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতাও সরকার চাইতে পারে। দেশের কোথায় কারা সন্ত্রাস, দখলবাজি ও চাঁদাবাজি করছে সেটা সরকারকে খুঁজে বের করতে হবে। তাদের সবাইকে আইন আমলে আনার বন্দোবস্ত করতে হবে। আইনশৃংখলার উন্নয়নে এলাকাবাসী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আইন–শৃঙ্খলার অবনতিতে এক নম্বর সমস্যা হিসেবে দেখে এর সমাধানে জাতীয়ভাবে তৎপর হতে হবে।