পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট ‘ফোরাম’ পর্ষদের দলনেতা ফয়সাল সামাদ বলেছেন, পোশাক শিল্পে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো দক্ষ শ্রমিকের স্বল্পতা। কারখানার জন্য এলসি (ঋণপত্র) খুললে আপনি বিদেশ থেকে মেশিন কিনতে পারবেন। কিন্তু আপনি তো দক্ষ অপারেটর কিংবা সুপারভাইরজার পাবেন না। তাই এই চ্যালেঞ্জটা মোকাবেলার জন্য বিজিএমইএ’ থেকে আমাদের আলাদাভাবে ট্রেনিং সেন্টার করা দরকার। যেটাতে অপারেটর এবং সুপারভাইজারদের ট্রেনিং করানো যাবে।
গতকাল সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচতারকা হোটেল রেডিসন ব্লু’তে দৈনিক আজাদীর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, অনেক মালিক হয়তো নিজ নিজ ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের মানোন্নয়নে কাজ করছেন। আমাদের এটা বড় পরিসরে করতে হবে। বর্তমানে আমাদের ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আছে। কিন্তু এখনই আমাদের অনেক বেশি অর্ডারের চাপ আছে। ভবিষ্যতে আরো অর্ডার আসবে। কারণ এখন মিয়ানমারের সমস্যা আছে এবং কম্বোডিয়াও নতুন করে গার্মেন্টস করতে চাচ্ছে। তাই আমাদের সামনে বেশ কিছু সুযোগ আসছে। কিন্তু সেই সুযোগ যথাযথভবে কাজে লাগানোর জন্য আমাদের দক্ষ মানব সম্পদ প্রয়োজন।
ফয়সাল সামাদ বলেন, আমাদের এখন থেকে অনেক বিষয় চিন্তা করে কাজ করতে হবে। যে বায়াররা আমাদের থেকে পণ্য কিনছেন তাদের ব্র্যান্ড ও আর্থিক অবস্থা ঠিক আছে কিনা সেটি আমাদের দেখতে হবে। বায়াররা আমাদের অর্ডার দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু পেমেন্ট যদি না আসে তাহলে সে অর্ডার এসে আমাদের তো কোনো লাভ নেই। তার মানে আমাদের বায়াররা সিলেকশনে মনোযোগী হতে হবে। আরেকটি বিষয় হলো-আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনাকালীন যে প্রণোদনা দিয়েছেন, সেগুলো আমরা পুনঃপরিশোধ শুরু করে দিয়েছি। এখন যদি আমরা সেই প্রণোদনার টাকা পরিশোধে একটু বেশি সময় পেতাম, তাহলে কারখানায় নগদ টাকার সরবরাহটা বাড়ানো যেত।
পোশাক শিল্পের পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করোনা মহামারির কারণে আমরা যেসব রপ্তানি কার্যাদেশ (অর্ডার) হারিয়েছিলাম। সেগুলো পরে আবার ফেরত আসছে। কিন্তু অর্ডার ফেরত আসার সাথে সাথে এটাও হয়েছে আমাদের যে কাঁচামালের দাম ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ কারণে যেসব অর্ডার ফেরত এসেছে তা সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য যে ধরণের মার্জিন থাকে, সেটি কমে গেছে। কাঁচামালের দাম আমাদের সেই প্রফিট মার্জিনটা নিয়ে নিয়েছে। এখন আসলে যেটা করণীয় আমাদের ব্যবসাটা বুঝেশুনে করতে হবে।
আমাদের বুঝতে হবে আমাদের হাতে কি ধরণের ব্যবসা আছে এবং এই ব্যবসাটা লাভজনক কিনা, যদি না হয় তাহলে ব্যাংকের দায়, সাপ্লাইয়ারদের পেমেন্ট এবং
শ্রমিকদের পেমেন্ট দিবো এটা বিবেচনা করতে হবে।
আগামীতে নেতৃত্ব আসলে বিজিএমইএ’কে কিভাবে দেখতে চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি বিগত ২৫ বছর ধরে বিজিএমইএ’র সাথে সম্পৃক্ত। আমি প্রয়াত আনিসুল হকের সময়ে সর্বকনিষ্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম ২০০৫ সালে। তারপর দুইবার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। আমার অভিজ্ঞতা বলে
বিজিএমইএ’কে মালিকদের পক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। পক্ষ হয়ে কাজ করতে হলে বিজিএমইএ যে নেতৃত্ব দিবে তাকে মালিকদের পেইনগুলো বুঝতে হবে। সেটা যে সকল উদ্যোক্তারা ভালো করছেন, তাদেরও কিন্তু পলিসি সপোর্ট দরকার আছ্ে। যে উদ্যোক্তারা রুগ্ন হয়ে গেছেন তাদেরও পলিসি সাপোর্ট দরকার আছে। বিজিএমইএ’র ইলেকশনের এখনো আরো এক বছর বাকি আছে। এই এক বছরে আমি চেষ্টা করবো সব মালিকের সাথে আলাদাভাবে দেখা করতে। তাদের অসুবিধাগুলো তো আমি জানি। আরো জানতে হবে। আমি এখন বিজিএমইএ বোর্ডে আছি। সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। ওখান থেকে নেক্সট ২ থেকে ৫ বছরের একটা রোডম্যাপ তৈরি করবো। মূল বিষয় হলো-আমাদের সুযোগগুলো কাজে লাগাতে হলে রোডম্যাপ থাকতে হবে।