গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, কুয়েতের শ্রমবাজার বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আবার উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই শ্রমবাজারে বিদেশি কর্মী নিয়োগে সব ধরনের বিধি–নিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছে। প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, নতুন নিয়ম ১ জুন থেকে কার্যকর হবে। অভিবাসনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, সব ধরনের বিধি–নিষেধ তুলে নেওয়া হলে কুয়েতের শ্রমবাজারে খুব সহজে অধিক কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, কুয়েতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের অবস্থান চতুর্থ। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় আড়াই লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের দিক থেকে পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ যথেষ্ট পিছিয়ে আছে। এর একটি প্রধান কারণ দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে আমাদের পিছিয়ে থাকা। এ ক্ষেত্রে আরো উদ্যোগী হতে হবে।
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের গুরুত্ব ও অবদানের কথা সর্বজনবিদিত। এই প্রবাসীরাই দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছেন। করোনা শুরু হওয়ার পর পরই আমাদের জনশক্তির রপ্তানি বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল। জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ রয়েছিল। তাছাড়া কোন দেশেই শ্রমিক নিতে চায়নি, এমনকি ভিসা পাওয়ার পরও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে যেতে পারছিল না। কয়েক হাজার শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। দেশে অনেক শ্রমিক–কর্মচ্যুত হন। তারা নতুন চাকরিতে প্রবেশ করতে পারছিল না।
এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবাসে রয়েছে। তাদের পাঠানো অর্থ দিয়েই বাংলাদেশ নতুন গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০১৯–২০২০ অর্থ বছরে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪৯৮১.৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা ছিল তার আগের অর্থ বছরের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি খাত সবার শীর্ষে থাকলেও সার্বিক বিচারে জাতীয় অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান তথা মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম। কারণ পণ্য রপ্তানি বাবদ যে অর্থ উপার্জিত হয় এর একটি বড় অংশই কাঁচামাল আমদানিতে চলে যায়। কিন্ত জনশক্তি রপ্তানি খাত এমনই এক অর্থনৈতিক খাত যার উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার পুরোটাই জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি দেশের অদক্ষ, অশিক্ষিত, বেকার ও কর্মক্ষম বিহীন জনগণকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করে বহির্বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করার লক্ষ্যে প্রেরণ করা লোকেরা হলো দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ জনশক্তি সৃজন একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া যা সংবিধিবদ্ধ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুসম্পন্ন করা হয়। যেকোনো দেশের উন্নয়নের মূল ভিত্তি হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি এবং দক্ষ জনশক্তিই পারে রাষ্ট্রের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে অর্থনীতির চালিকাশক্তিকে সচল রাখতে। দক্ষ জনশক্তি প্রভূতভাবে রাষ্ট্রের উন্নয়ন কাজকে ত্বরান্বিত করতে যথেষ্ট সহায়তা করে। তাই একটি আদর্শ রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই। অদক্ষ জনগণের মাঝে কর্মক্ষম মনোবৃত্তি ও কর্ম স্পৃহা সৃষ্টি করে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সাধন করাই হচ্ছে দক্ষ জনশক্তি গঠন করার মুখ্য উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্স গুরুত্ব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স প্রবাহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বর্ধিত বেকারত্ব অনেকাংশে লাঘব হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম জনশক্তি রপ্তানি দেশ। জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আয় অর্জনকারী ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম। বাংলাদেশের মোট জনশক্তি রপ্তানির ২০.১১ শতাংশই যায় সৌদি আরবে এবং দেশে প্রেরিত রেমিট্যান্সের ২০শতাংশের বেশি আসে সেদেশ থেকে।
বলা যায়, এখন শ্রমবাজার একে একে খুলতে শুরু করেছে। সৌদি আরব এখন আগের মতোই জমজমাট হচ্ছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত শ্রমিক নেওয়া শুরু করেছে। সেখানে একটা বড় সুখের খবর। এ সব দেশে শ্রমিক যাওয়া শুরু করেছে। পাশাপাশি অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়াতে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, তা নিরসন হয়েছে।
ফলে জনশক্তি রফতানির বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বলা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ যে সব দেশে বাংলাদেশের শ্রমশক্তির চাহিদা বেশি, সেসব দেশে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত আমলাতান্ত্রিক বাধাগুলো দূর করা জরুরি। তাছাড়া, আমাদের এখন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করতে হবে এবং দক্ষ শ্রমশক্তি রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে।