দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতে আমাদের আরো অগ্রসর হতে হবে

| বৃহস্পতিবার , ৩ জুন, ২০২১ at ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

দুই দশক আগেও বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানির মূল গন্তব্য ছিল উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (জিসিসি) ছয়টি দেশ। এরপর নতুন গন্তব্য হিসেবে যুক্ত হয় মালয়েশিয়া। তবে অর্থনৈতিক মন্দা, বৈশ্বিক রাজনীতি, মধ্যস্বত্বভোগীদের অধিক মুনাফার লোভ, কূটনৈতিকসহ নানা কারণে ক্রমেই আস্থা হারাচ্ছে বিদ্যমান বৈদেশিক শ্রমবাজারগুলো। করোনাকালে জনশক্তি রপ্তানিতে ভয়াবহ ধস নেমেছে। গত ১ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত হয়েছে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন। ‘জনশক্তি রপ্তানিতে ধস,
করোনাকালীন ১৪ মাসে চট্টগ্রাম থেকে বিদেশ গেছেন মাত্র সাড়ে ৯ হাজার’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৪ মাসে চট্টগ্রাম থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি জমিয়েছেন মাত্র সাড়ে ৯ হাজার ব্যক্তি। এর মধ্যে ৯ হাজারই গিয়েছেন সৌদি আরব এবং ওমানে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের শ্রম বাজার প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক। মোট জনশক্তির রপ্তানির ৯০ ভাগই হয়ে থাকে সৌদি আরব, কাতার, ওমান এবং আরব আমিরাতে। এর বাইরে চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর এবং দক্ষিণ কোরিয়াতেও ভাগ্য বদলের উদ্দেশ্যে অনেকে পাড়ি দিচ্ছেন। তবে করোনার ছোবলে বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব পড়েছে জনশক্তি রপ্তানিতে। বাংলাদেশে সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। সেই সময় ৬৬ দিন লকডাউন শেষে পরিস্থিতির উন্নতির সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক নেওয়া শুরু হয়। তবে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ফের বন্ধ হয়ে যায় বিমান চলাচল।
নানা কারণে বিদেশে শ্রমবাজার দিনে দিনে সংকুচিত হচ্ছে, অদক্ষ জনশক্তির চাহিদা দ্রুত কমে আসছে, অনেক দেশ দক্ষ কর্মী ছাড়া নিচ্ছে না। বিশ্বের শীর্ষ ১০ গন্তব্য দেশগুলোর ৭৫ শতাংশ উচ্চ দক্ষ অভিবাসী। বাংলাদেশে ৫ কোটি তরুণের ১১ শতাংশ বেকার। তাছাড়া, টিআইবির তথ্য মতে, বাংলাদেশে বিদেশী দক্ষকর্মী কাজ করছে ০.১৬ মিলিয়ন এর অধিক এবং এরা বছরে প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করে।
জানা যায়, বিদেশে শ্রমিক রপ্তানির ক্ষেত্রে সঙ্কটের মুখে পড়েছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও। কোভিড-১৯ এর কারণে অনেকেরই আয় কমে যাওয়ায়, বিদেশে কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে ভুগছেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এদের মধ্যে অনেকেই মহামারি পরবর্তী সময়ে বিদেশগমনে ইচ্ছুক। সৌদি আরবে পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নির্মাণ শ্রমিক, দোকানের বিক্রেতা, শপিং মল ও হোটেলের কর্মীর চাহিদা আছে। দেশটির অর্থনীতি পুনরায় চালু হওয়ার পর বেশ কিছু শ্রমিক পাঠানো হয়েছে। তাঁরা বলেন, সৌদি আরব গমনে ইচ্ছুক শ্রমিকদের জন্য ইমিগ্রেশনের খরচ কমিয়ে আনা দরকার। কেননা অনেকেই বিদেশ গমনে ইচ্ছুক, কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে যেতে পারছেন না। প্রতিবছর গড়ে সাত লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে চাকরি পান, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। গত বছর মহামারির মধ্যে বিদেশে শ্রমিক নিয়োগের এ চিত্র পালটে যায়। গত বছর এপ্রিল-জুন পর্যন্ত একেবারেই বন্ধ ছিল।
চলমান করোনা মহামারিতে জনশক্তি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেলেও দেশে রেমিট্যান্স-প্রবাহ সচল রয়েছে। ২০২০ সালে প্রায় ৯.৫ মিলিয়ন বাংলাদেশি অভিবাসী ১৬৮টি দেশ থেকে ২১ হাজার ৭৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রেরণ করে, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৩৯৭ মিলিয়ন ডলার বেশি। করোনার প্রভাবে এই সময় পারিবারিক প্রয়োজনে প্রবাসীরা বেশি পরিমাণে অর্থ পাঠিয়েছে, সরকারঘোষিত ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা তাদের বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করেছে এবং আমদানি ব্যয় কমে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রিজার্ভ বেড়েছে।
একথা বলা বাহুল্য যে, বাংলাদেশের সমৃদ্ধ অর্থনীতিতে রেমিট্যান্সের গুরুত্ব অপরিসীম। রেমিট্যান্স-প্রবাহ সরাসরি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নকে গতিশীল করছে, পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে দেশের বিপুল বেকারত্ব লাঘব হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ষষ্ঠ বৃহত্তম অভিবাসী প্রেরণকারী দেশ। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় অর্জনকারী ১০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান নবম। এ অবস্থায় দক্ষ জনশক্তি রপ্তানিতেও আমাদের অগ্রসর হতে হবে। নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহের শ্রম উইংগুলোকে আরো উদ্যোগী হতে হবে। নিরাপদ অভিবাসন ও ধারাবাহিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ ধরে রাখতে নিতে হবে বিস্তৃত উদ্যোগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে