আমাদের বিশ্বে নতুন নতুন চিন্তার সঙ্গে আসছে নতুন নতুন প্রযুক্তি। প্রযুক্তির নানা উদ্ভাবন সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তির নানা বিকাশ, শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির রাজত্ব গোটা বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক কাঠামোয় এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। এখন বিশ্বব্যাপী কারিগরি জ্ঞানের মর্যাদা বেশি। এই কারিগরি জ্ঞানের কদর খুব সহজেই চোখে পড়ে। জনশক্তি খাত থেকে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে বর্তমানে তা আরও কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে প্রয়োজন শিক্ষা। এক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ কারণেই বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকতে উচ্চশিক্ষাকে নতুন করে সাজানোর কথা বলা হয়েছে। দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবনপূর্বক যথাযথভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন চতুর্থ শিল্প বিপ্লব উপযোগী জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে সাজানো প্রয়োজন এবং তা শুরু করা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারলে যে কোনো দেশের চেয়ে এই দেশ এগিয়ে যাবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অর্থনীতি বিশ্লেষক রেজাউল করিম খোকন এক লেখায় লিখেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার। দেশকে সমৃদ্ধ, উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যেতে হলে, জনসংখ্যার বিরাট বোঝাকে অভিশাপ মনে না করে আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করতে হবে। আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে উপযুক্ত এবং ভালো বেতনে চাকরির সুযোগ পেতে পারে তারা অনায়াসেই। এভাবে আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্স ধারায় বিপুল জোয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তবে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে নতুন নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করে দক্ষ মানবসম্পদ পাঠাতে পারলে রেমিট্যান্স ভবিষ্যতে রেকর্ড গড়বে। বিদেশে গিয়ে অদক্ষ আধা দক্ষ শ্রমিক হিসেবে কম বেতনে যেন চাকরি করতে না হয়, প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাওয়া দক্ষ অভিজ্ঞ শ্রমিকদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি বেতনের চাকরি যাতে পেতে পারেন– তেমন যোগ্যতা নিয়ে বিদেশে যেতে হবে। দক্ষ জনশক্তি প্রেরণের মাধ্যমে রেমিট্যান্সপ্রবাহ বাড়ানো সম্ভব। এ লক্ষ্যে সরকার এখন অনেকটাই মনোযোগী হয়েছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, বাংলাদেশ অগ্রগতির নানা ধাপ অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে বাংলাদেশ। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের তালিকা থেকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় এখন আমাদের অবস্থান। অথচ একসময়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দরিদ্র দেশের তালিকায়। তলাবিহীন ঝুড়িও আখ্যা দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশকে। কিন্তু গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি সহজেই চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশের উন্নয়ন এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয়। তর তর করে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। ছোট্ট একটি ভূখণ্ডে আমরা অনেক মানুষ বাস করি। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি। মোট আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার চাপ বেশি হওয়ায় স্বাভাবিকভাবে অভাব, দরিদ্র, বেকারত্ব রয়ে গেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যে গতিতে এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ ঠিক সেভাবে এগিয়ে যেতে পারছে না। বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময়ে পুরোপুরি কৃষিনির্ভর ছিল। কিন্তু এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তৈরি পোশাক শিল্প। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে উজ্জ্বল অবস্থানে পৌঁছে গেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের আগের রেকর্ড অতিক্রম করে চলেছে। এছাড়াও আমাদের রপ্তানি পণ্য তালিকায় নতুন নতুন আইটেম যুক্ত হচ্ছে। আজকাল বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন শিল্পজাত সামগ্রী, ইলেকট্রনিক্স পণ্য পৃথিবীর অনেক দেশে যাচ্ছে। এগুলোর বেশ ভালো চাহিদা রয়েছে। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে একসময়ে বাংলাদেশের যে পরিচিতি ছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, তা থেকে অনেকটাই সরে এসেছে সময়ের পালাবদলে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমান বিশ্বের যে দেশ দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে পারবে না, তারা আগামী দিনে পিছিয়ে পড়বে। দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির উপর গুরুত্ব আরোপ করে তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তুলতে পারলে, তারাই আগামী দিনে বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিবে। জাপান কিংবা দক্ষিণ কোরিয়া খনিজ সম্পদ সমৃদ্ধ নয় উল্লেখ করে তাঁরা আরো বলেন, তারা দক্ষ জনসম্পদ গড়ে তোলার কারণে বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প পূরণের পর নতুন একটি রূপকল্প দিয়েছেন। এর লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশের ওপর দাঁড়িয়ে ২০৪১ সাল নাগাদ একটি সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধিদীপ্ত, জ্ঞানভিত্তিক, উদ্বোধনী, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। যে বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম সমস্যা সৃষ্টিকারী না হয়ে সমাধানকারী প্রজন্ম হবে। তাই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে।