দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের তালা

দুই ঘণ্টা পর ভেঙে ফেলে পদ প্রাপ্তরা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৭ আগস্ট, ২০২৩ at ৪:২২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর কোতোয়ালী থানার দোস্ত বিল্ডিংস্থ চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার দিকে এ তালা দেয়া হয়। এ সময় সদ্য ঘোষিত দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবি জানায় পদবঞ্চিতরা। পরে দুপুর ১টার দিকে ছাত্রদলের বিদ্যমান কমিটির নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পদবঞ্চিতদের দেয়া তালা ভেঙে ফেলে। এসময় তারা তালা দেয়ার প্রতিবাদে সমাবেশও করে। জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৪২ সদস্যের ওই কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে পরদিন সংবাদ সম্মেলন করে পদবঞ্চিতরা। বিবাহিত, সন্তানের বাবা, প্রবাসী ব্যাংকবিমা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয় বলেও দাবি করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমিটি বাতিল না করলে পরবর্তীতে কর্মসূচির ঘোষণারও হুঁশিয়ারি দেয় পদবঞ্চিতরা। ওই আল্টিমেটামের সময় পেরিয়ে যাওয়ায় তালা দেয়া হয় বলে জানায় পদবঞ্চিতরা।

এর আগে ১৭ আগস্ট রাতে পদবঞ্চিতরা নগরীর জামালখান মোড়ে হামলা করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মহসীন এবং বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফিরোজের উপর। এ ঘটনায় মো. মহসীন বাদী হয়ে একটি মামলাও করেন।

গতকাল তালা দেয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন পদবঞ্চিত জিয়াউল হক জোনাইদ, অহিদুল ইসলাম চৌধুরী, আজিম উদ্দিন, ইকবাল হোসেন জুয়েল, ইশতিয়াক নোমান, মোহাম্মদ সোহেল, গাজী রিফাত ও শাহরিয়ার চৌধুরী মহিম।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত জিয়াউল হক জোনাইদ আজাদীকে বলেন, আমরা সংবাদ সম্মেলনে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কেন্দ্রের কোনো খবর নেই। অথচ বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের সমন্বয়ে কমিটি করতে পারত। তাই আমরা বাধ্য হয়ে কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি কার্যালয়ে তালা দিয়েছি।

ছাত্রদলের কমিটির জন্য বিএনপি কার্যালয়ে কেন তালা দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে জোনাইদ বলেন, সবকিছুর মূলে আছেন বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম বকুল, যিনি ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনাম ভাইয়ের পকেট কমিটি বানিয়ে দিয়েছেন। ফলে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলনসংগ্রামে যারা ছিলেন তাদের বাদ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম আজাদীকে বলেন, আপনার ঘরে আপনি তালা দিয়ে বাইরে এসেছেন। তখন কেউ যদি এসে তালা মেরে দেই তাহলে কি সেটাকে তালা দেয়া বলে? আমাদের অফিসেও একই অবস্থা। এরপরও কেউ যদি বলে তালা দিয়েছে তাহলে সেটা তো ছাত্রদলের পক্ষে সম্ভব না। বরং ছাত্রদল নামধারী যারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে তারাই এ কাজ করতে পারে। আমি শুনেছি, তারা ছাত্রদলের ফাইল লুট করতে গিয়েছিল। খবর পেয়ে ছাত্রদলের বিদ্যমান কমিটির সবাই উপস্থিত হয়ে তাদের তাড়িয়ে দেয়।

পকেট কমিটির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্রদলের কমিটি তো আমরা দিইনি। হ্যাঁ, কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে নাম চেয়েছে। জেলা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনসংগ্রামে যারা ছিল তাদের নাম সুপারিশ করি। কেন্দ্র যাচাইবাছাই করে কমিটি দিয়েছে। তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে তা কেন্দ্রকে জানাবে। তালা কেন দেবে?

দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি আজাদীকে বলেন, আমরা খবর পাওয়া মাত্র পৌঁছে ওদের দেয়া তালা ভেঙে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ করি। কয়টার দিকে পৌঁছান এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ১টার দিকে। দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফিরোজ আজাদীকে বলেন, তারা মালামাল লুট করতে এসেছিল। খবর পেয়ে আমরা পৌঁছে ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায়।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মহসীন বলেন, তারা যেসব অভিযোগ করছে সেটা কেন্দ্রকেও জানায়। কিন্তু কেন্দ্র থেকে প্রমাণ চেয়েছে। তারা দেখাতে পারেনি। তাই তারা আলোচনায় থাকার জন্য যা খুশি করছে।

দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের প্রতিবাদ : দলীয় কার্যালয়ে তালা দেয়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ করে নব গঠিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রদল। সংগঠনের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবির সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কামরুদ্দিন সবুজের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন মোহাম্মদ ফিরোজ, আরেফিন রিয়াদ, আসাদুজ্জামান সাজ্জাদ, আবদুস সবুর, এস এম নয়ন, নাঈমুল আলম নাঈম, অলিউল হোসেন রুবেল, শাহাদাৎ হোসেন, রেজাউল করিম মিজান, ফরহাদুল ইসলাম, রাশেদুল কবির, নূর শাহেদ খান রিপন, নেজাম উদ্দিন রুবেল, জাহেদ হোসেন, ফয়সাল সিকদার সোহান, মোহাম্মদ সেলিম, মোহাম্মদ হারুন, মো. মহিন, জিসান আহমেদ, মিছবাহুল আজিম জুহাইর ও আবদুল্লাহ আল নোমান জিহাদ।

এসময় নেতৃবৃন্দ বলেন, যারা দলের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে তারা কখনো দলের আদর্শকে ধারণ করে না। তারা কখনো ছাত্রদলের পরিচয়ে পরিচিত হতে পারে না। তাদের একটা পরিচয় তারা সন্ত্রাস। বিদ্রোহের নামে তারা জেলা ছাত্রদলের মেধাবী ও পরিক্ষিত ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডা চালাচ্ছে অথচ এখনও পর্যন্ত কোনো নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে সুস্পষ্ট অভিযোগ জানাতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড়তলী বাজারে ডিম বেচাকেনা বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা
পরবর্তী নিবন্ধবাজারে অস্থিরতার শঙ্কা