দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা, নিহত ১৭৯

পাখি নাকি যান্ত্রিক ত্রুটি, কারণ নিয়ে ধন্দে বিশেষজ্ঞরা

| সোমবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

দক্ষিণ কোরিয়ার জেজু এয়ার সংস্থার একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৯ জন প্রাণ হারিয়েছে। ওই ফ্লাইটে ১৮১ জন আরোহী ছিলেন। এদের মধ্যে ১৭৫ জন যাত্রী এবং ৬ জন ক্রু । কেবল দুইজন ক্রুকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা।

থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে এসে গতকাল রোববার সকাল ৯টার দিকে (স্থানীয় সময়) দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময়বোয়িং ৭৩৭৮০০ বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়ে। চাকা না খোলায় অবতরণের পর বিমানটি রানওয়েতে ছেঁচড়ে গিয়ে বিমানবন্দরের দেয়ালে ধাক্কা খায় এবং অগ্নিগোলকে পরিণত হয়। মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রাজধানী সিউল থেকে ২৮৮ কিলোমিটার দূরে। মধ্য আকারের এই বিমানবন্দরটি ২০০৭ সালে চালু করা হয়েছিল। এখান থেকে এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যে বিমান চলাচল করে। দুর্ঘটনার পর সেখানে সব ধরনের ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফ্লাইট ৭সি২২১৬ এর যাত্রীদের মধ্যে ১৭৩ জনই ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক, দুইজন থাই।

দক্ষিণ কোরিয়ার এক কর্মকর্তা জানান, বিমানটি অবতরণের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। ফলে পাইলট না নেমে আকাশে ভেসে থাকতে বাধ্য হন। দুই মিনিট পর পাইলট ‘মে ডে’ ঘোষণা করলে (বিপদে পড়ার সংকেত) এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল অবতরণের অনুমতি দেয়। বিমানটি উল্টো দিক থেকে রানওয়েতে নেমে এলেও ল্যান্ডিং গিয়ার কাজ না করায় চাকা ছাড়াই সেটি নেমে আসে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, জোড়া ইঞ্জিনের বিমানটি চাকা ছাড়াই রানওয়ে দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছেঁচড়ে যায়, তারপর রানওয়ে থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিমানবন্দরের দেয়ালে ধাক্কা খায়। সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণে এতে আগুন ধরে যায় এবং এর ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দিকে। মুয়ানের ফায়ার সার্ভিস প্রধান লি জুংহিউন বলেন, দুর্ঘটনার পর কেবল লেজের কিছুটা অংশ আস্ত আছে, বাকি অংশ আর চেনার উপায় নেই।

জেজু এয়ার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মুয়ান বিমানবন্দরের দুর্ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আমরা জেজু এয়ারের পক্ষ থেকে তাদের প্রত্যেকের কাছে মাথা নত করে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এই ঘটনায় সাড়া দিয়ে যা যা করতে পারবো তার সবাই করবো আমরা। এই বিপর্যয়ের জন্য আমরা দুঃখিত।’

বিবিসি লিখেছে, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত জেজু এয়ার দক্ষিণ কোরিয়ার অন্যতম শীর্ষ বাজেট এয়ারলাইন। তাদের কোনো উড়োজাহাজ এই প্রথম প্রাণঘাতী দুর্ঘটনায় পড়ল। এমন এক সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটল, যখন দক্ষিণ কোরিয়া ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট চোই সুংমককে দায়িত্ব নেওয়ার দুই দিনের মাথায় এই সংকট মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

এ দুর্ঘটনার আসল কারণ কি তা নিয়ে ধন্দে পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দুর্ঘটনার কারণের প্রাথমিক তদন্তে বলা হচ্ছে, পাখির সঙ্গে সংঘর্ষে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ারে জটিলতা তৈরি হয়। চাকা না খোলায় অবতরণের পর বিমানটি রানওয়েতে ছেঁচড়ে গিয়ে বিমানবন্দরের দেয়ালে ধাক্কা খায় এবং অগ্নিগোলকে পরিণত হয়। কিন্তু বিমানবিধ্বস্তের আসল কারণ কি তা নিয়ে এখনও রয়ে গেছে সংশয়। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ এর যান্ত্রিক ত্রুটিসহ অন্যান্য আরও কিছু কারণের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন: উড়োজাহাজের দুটো ইঞ্জিন কাজ না করা এবং গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুইপাশে থাকা ব্রেক কাজ না করা। তাদের মতে, কেবল পাখির সঙ্গে ধাক্কা লাগার কারণে উড়োজাহাজের সব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র এভাবে একসঙ্গে বিকল হতে পারে না। তাছাড়া, পাখির আঘাতের কারণে ল্যান্ডিং গিয়ার বিকল হওয়ার সম্ভাবনাও নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এয়ারলাইন নিউজ এডিটর জিওফ্রি থমাস বলেন, ‘পাখির সঙ্গে ধাক্কা সচরাচর ঘটেই থাকে। আবার উড়োজাহাজের চাকায় সমস্যা হওয়ার ঘটনাও বিরল নয়। পাখির সঙ্গে ধাক্কার ঘটনা আরও ঘন ঘনই হয়। তবে তাতে সাধারণত গোটা উড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণ হারায় না।’

অস্ট্রেলিয়ার উড়োজাহাজ চলাচল বিষয়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জিওফ্রি ডেল বলেন, ‘পাখির আঘাত ল্যান্ডিং গিয়ার বন্ধ করতে পারে, এমন নজির আমি দেখিনি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধএখনো সেই রায়হানের নাগাল পায়নি পুলিশ
পরবর্তী নিবন্ধঅনলাইন নিলামে তোলা হচ্ছে ফেব্রিক্সসহ ৪৭ লট পণ্য