দক্ষিণ কোরিয়ায় জরুরি ভিত্তিতে সামরিক আইন জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক–ইওল। টিভিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া আকস্মিক এক ভাষণে এ ঘোষণা দেন তিনি। উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট বাহিনীর হাত থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার সুরক্ষায় এবং রাষ্ট্রবিরোধী নানা শক্তিকে নির্মূল করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছেন ইউন সুক–ইওল।
ইওলের পিপল পাওয়ার পার্টি এবং প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে আগামী বছরের বাজেট বিল নিয়ে মতবিরোধের মধ্যে এমন পদক্ষেপের ঘোষণা এল। সামরিক আইনের আশ্রয় নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না বলে জানিয়েছেন ইওল। তবে সামরিক আইনের আওতায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি তিনি। বার্তা সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী দুই দলই এই ঘোষণা বন্ধ করে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে। তারা সামরিক আইন জারির পদক্ষেপকে ‘ভুল’ আখ্যা দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
ইউন সুক–ইওল ২০২২ সাল থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে আছেন। পিপল পাওয়ার পার্টি তার রাজনৈতিক দল। দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচনে প্রতিপক্ষ প্রার্থী লি জ–মায়ুংকে খুব কম ব্যবধানে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ইওল। এরপর নানা বিতর্ক এবং কেলেঙ্কারির কারণে প্রেসিডেন্ট ইওলের জনসমর্থন অনেক কমে এসেছে। তার স্ত্রীও কেলেঙ্কারিতে জড়িত। স্ত্রীর কেলেঙ্কারির জন্য ইওল গত মাসে ক্ষমাও চেয়েছেন। পার্লামেন্ট বিরোধীদের দখলে থাকায় ইওলকে তার কর্মসূচি পাস করাতেও ইদানিং বেগ পেতে হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় সর্বশেষ সাধারণ নির্বাচনে বিরোধীরা বিপুল জয় পাওয়ার পর ইওল এক ‘খোঁড়া হাঁস’ রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন। এ সপ্তাহে ইওল সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করেছে বিরোধীরা। মন্ত্রিসভার মন্ত্রীদের অভিসংশন করার পথেও এগুচ্ছে তারা। ফার্স্ট লেডির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ব্যর্থতার কারণে বিরোধীরা এ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ইওল সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়ার পর সেনাবাহিনী পার্লামেন্টের সব কার্যক্রম স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম। ইয়োনহাপ জানায়, জাতীয় পরিষদের সদস্যদেরকে পার্লামেন্ট ভবনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
ওদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধীদল ডেমোক্রেটিক পার্টি তাদের আইনপ্রণেতাদেরকে দেশের আইনসভায় জড়ো হওয়ার ডাক দিয়েছে। দলের নেতা লি জে–মায়ুং জনতাকেও জাতীয় পরিষদে জড়ো হওয়ার ডাক দিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার আইন অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদের বেশির ভাগ সদস্য ভোটে সামরিক আইনের ইতি চাইলে সরকারকে তা তুলে নিতে হবে। সামরিক আইনের আওতায় একটি জরুরি পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে সামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন চালু হয়। বেসামরিক কর্তৃপক্ষ যখন কাজ করতে ব্যর্থ বলে প্রতীয়মান হয় তখনই জারি করা হয় মার্শল ল বা সামরিক আইন। এই আইনের প্রয়োগে আইনগত কিছু প্রভাব পড়তে পারে। যেমন–স্বাভাবিক নাগরিক অধিকার না থাকা কিংবা সামরিক আইন সমপ্রসারিত হওয়া। সামরিক আইন সাধারণত সাময়িক সময়ের জন্য জারি হলেও তা অনির্দিষ্টকাল চলতে পারে।