সামপ্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই বাল্যবিয়ের প্রচলন সবচেয়ে বেশি, যা বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যেও রয়েছে। গতকাল বুধবার ইউনিসেফ ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। ইউনিসেফের নতুন প্রতিবেদনে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ে বন্ধে জোরদার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, বাল্যবিয়ে বন্ধ করা বাংলাদেশ সরকার ও ইউনিসেফ উভয়েরই একটি অগ্রাধিকার। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে বন্ধের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে বন্ধের জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশে আরও পরিবর্তন আনতে প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জাতীয় লক্ষ্য পূরণের জন্য বাল্যবিয়ে বন্ধের হারে অগ্রগতি গত দশকের তুলনায় কমপক্ষে ৮ গুণ এবং এসডিজির লক্ষ্য পূরণের জন্য ১৭ গুণ দ্রুততর করতে হবে। খবর বাংলানিউজের।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের উপ-প্রতিনিধি ভিরা মেন্ডোনকা বলেন, একসঙ্গে আমাদের অবশ্যই ক্ষতিকর রীতিনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে এবং বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকারের এই লঙ্ঘন ব্যক্তি ও সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনছে, যা শিশুদের কাছ থেকে তাদের শৈশব ছিনিয়ে নিচ্ছে এবং নিজের পছন্দের জীবন বেছে নেওয়ার সুযোগ সীমিত করে দিচ্ছে। মেয়েদের বেঁচে থাকা ও শিক্ষা গ্রহণের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে এবং তাদের সহিংসতা ও নিগ্রহের শিকার হওয়া কমাতে আমাদের এখনই বিনিয়োগ করতে হবে। যদিও বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের প্রবণতা ১৯৭০ সালের তুলনায় ৯০ শতাংশেরও বেশি কমেছে, তা সত্ত্বেও এখনও এই হার অনেক বেশি। বর্তমানে ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের ৫১ শতাংশের বিয়ে হয়েছে তারা শিশু থাকা অবস্থাতেই। এটি এই দেশকে ৩ কোটি ৮০ লাখ ‘শিশু কনের’ দেশে পরিণত করেছে, যাদের বিয়ে হয়েছে তাদের ১৮তম জন্মদিনের আগেই। আবার এদের মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ নারীর বিয়ে হয়েছে তাদের বয়স ১৫ বছর হওয়ার আগেই। ‘বাল্যবিয়ে সমাপ্তি : বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়, যেখানে ইউএন, সরকার, উন্নয়ন অংশীদার এবং কিশোরী-ক্লাবের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
চলমান কোভিড-১৯ মহামারি এখন বাল্যবিয়ে বন্ধে অগ্রগতিকে আবারও পেছনের দিকে ঠেলে দেওয়ার হুমকিতে ফেলেছে। শিশু এবং পরিবারগুলো যখন স্কুল বন্ধ হওয়া, আয় কমে যাওয়া এবং ঘরে বেড়ে যাওয়া চাপের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে, তখনই বাল্যবিয়ের ঝুঁকি আরও বেড়েছে। ইউনিসেফ যে স্কুলগুলো নিরাপদে পুনরায় খোলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে বিশ্বব্যাপী সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে এটি তার অন্যতম কারণ। এমনকি সাধারণ সময়েও অবিবাহিত মেয়েদের তুলনায় বিবাহিত মেয়েদের বিদ্যালয় থেকে ছিটকে যাওয়ার ঝুঁকি চারগুণের বেশি।