সীতাকুণ্ড থানাধীন জঙ্গল সলিমপুরে হতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম নাইট সাফারি পার্ক। সিঙ্গাপুরের মান্দাইতে অবস্থিত বিশ্বের প্রথম নিশাচর নাইট সাফারি পার্কের আদলে ৪০ একর জায়গাজুড়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি গড়ে তোলা হবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। গতকাল চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান এ পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরের মান্দাই’র নাইট সাফারি পার্কটি তাদের রিভার ওয়ান্ডার্স, সিঙ্গাপুর চিড়িয়াখানা এবং জুরং বার্ড পার্কসহ মান্দাই বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের অংশ। আমরাও ওই সিস্টেমকে অনুসরণ করব। জঙ্গল সলিমপুরে আমরা যে নাইট সাফারি পার্কটি গড়ে তুলব তা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার অংশ হয়েই থাকবে।
জেলা প্রশাসকের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় সম্প্রতি জন্ম নেয়া চারটি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ (সাঙ্গু, হালদা, পদ্মা, মেঘনাা) প্রসঙ্গ এবং বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যত মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে জলহস্তী, সিংহ, জিরাফ, উট, ক্যাঙ্গারু, ওয়াইল্ড বিষ্ট, লামাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আরও পশুপাখি সংগ্রহ করে বংশবৃদ্ধি করা। বাঘের খাঁচা সম্প্রসারণ, চিত্রা হরিণের খাঁচা বৃহৎভাবে তৈরি, ভল্লুকের খাঁচা সম্প্রসারণ, কুমিরের খাঁচা আধুনীকিকরণ, বিভিন্ন প্রজাতির সাপের জন্য আলাদা স্নেক সেকশন তৈরি, ময়ূরের জন্য চিড়িয়াখানার নতুন অংশে এভিয়ারি তৈরি, শকুন সংরক্ষণে নতুনভাবে অনুকূল খাঁচা তৈরিকরণ। বিভিন্ন গবেষণা করার মাধ্যমে প্রাণী সংরক্ষণে ভূমিকা পালন এবং এর সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশ গ্রহণ করানো। বন্যপ্রানী ব্যবস্থা বিষয়ে ট্রেনিং কোর্স চালু করা। সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের আরও বড় পরিসরে প্রাণী সচেতনতা বৃদ্ধি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান পূর্বক ফ্রি চিড়িয়াখানা পরিদর্শন ও বিনোদন প্রদান করা। এছাড়া পাহাড়ে পাখির অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা। ভবিষ্যতে চিড়িয়াখানার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তা সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবমুক্ত করা। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাকে দক্ষিণ এশিয়ার একটি অন্যতম সেরা প্রাণি সংরক্ষণ ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। প্রজাপতি পার্ক তৈরি। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথমবারের মতো রাতে দর্শনার্থীদের চিড়িয়াখানা পরিদর্শন এর জন্য জঙ্গল সলিমপুরে ‘নাইট জু’ সাফারি পার্ক গড়ে তোলা।
জেলা প্রশাসক বলেন, জেলার একমাত্র বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, গবেষণা, শিক্ষা ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। কোনো ধরণের সরকারি অনুদান ব্যতিরেকেই চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা একটি স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামোগত সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং নতুন নতুন প্রাণি ক্রয় ও সংগ্রহের মাধ্যমে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ব্যাপক হারে চিড়িয়াখানায় দর্শক সমাগম হচ্ছে। সরকারি অনুদান কিংবা অন্যান্য অনুদান ছাড়া শুধুমাত্র টিকেট বিক্রির টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সকল অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ, পশু-পাখির খাদ্য ব্যয়, ঔষধ ও পরিচর্যা ব্যয়, প্রাণি ক্রয় ও সংগ্রহ বাবদ ব্যয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন নির্বাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাঘ ও জেব্রা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া রয়েছে ভল্লুক, সিংহ, হরিণ (চিত্রা, সাম্বার, মায়া), উল্লুক, বানর, মেছোবিড়াল, চিতাবিড়াল, অজগর, বাঘদাশ, উঠপাখি, ইমু পাখি, গয়াল, কুমির, ময়ূর, ঘোড়া, বক, টিয়াসহ ৬৬ প্রজাতির ৬২০ টি পশুপাখি আছে। এ চিড়িয়াখানায় গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্রাকৃতিক এভিয়ারি (পক্ষীশালা) যেখানে তিন শতাধিক পাখি রয়েছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার কারণে ২০১৯ সালে দলগতভাবে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক অর্জন করে।
শীঘ্রই অনলাইন টিকেটিং সিস্টেম চালু করা হবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণে ও পাহাড়ি জায়গায় বৃক্ষরোপণ (ফলজ, ফুলজ ও উদ্ভিজ) করে চিড়িয়াখানার পরিবেশগত সৌন্দর্য ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কৃত্রিম পরিবেশে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ইনকিউবেটরে ডিম থেকে অজগরের বাচ্চা ফুটানো হয় এবং পরবর্তীতে বন্য পরিবেশে অবমুক্ত করা হয়। এছাড়া গত ২২ জুন র্সবশষে ১১ টি বাচ্চা কৃত্রিমভাবে ফুটে যা অতি শীঘ্রই বন্য পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আবদ্ধ পরিবেশে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় চিতা বিড়ালের বাচ্চা প্রজনন করানো সম্ভব হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
উল্লেখ্য, জঙ্গল সলিমপুর এলাকাটি প্রায় ৩ হাজার জায়গাজুড়ে অবস্থিত। এ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে দেশের নানা জায়গার অসংখ্য মানুষ। পাহাড় কেটে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় তারা সেখানে বসতি গড়ে তোলেন। ঠিক এ অবস্থায় সেখানের পাহাড় কাটা বন্ধে বা উক্ত এলাকা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। জানানো হয় সেখানে চট্টগ্রাম কারাগার স্থানান্তরের পাশাপাশি স্পোর্টস ভিলেজ, জনসাধারণের চিকিৎসার জন্য হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল, একটি সাফারি পার্ক, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, একটি নান্দনিক মসজিদ, উচ্চ শক্তির বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র ও পাহাড় ব্যাবস্থাপনা কমিটির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গহড়ে তোলা হবে। এছাড়া একটি নিদিষ্ট জায়গায় ছিন্নমূল জনসাধারণের পুনর্বাসন করা হবে।