দক্ষিণ আফ্রিকার চোকার অপবাদ ঘুচানোর মিশন আজ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:৩৭ পূর্বাহ্ণ

বিশ্বকাপের সবচাইতে সফলতম দলটির নাম অস্ট্রেলিয়া। পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। এখন ষষ্ঠ ট্রফি জেতার অপেক্ষায় অসিরা। অপরদিকে বিশ্বকাপে নিজেদের গায়ে চোকার তকমাটা অনেক আগেই লাগিয়ে ফেলেছে দক্ষিন আফ্রিকা। সব সময় ভাল দল নিয়ে বিশ্বকাপে আস। সেমি ফাইনাল পর্যন্ত দুর্দান্ত খেলে। কিন্তু সেমিফাইনালের গন্ডি আর পার হতে পারেনা। ফিরতে হয় হতাশ হয়ে। তবে এবারে আর হতাশ হতে চায়না প্রোটিয়ারা। এমনিতেই এবারের বিশ্বকাপে রয়েছে দলটি দারুন ছন্দে। পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থেকে রাউন্ড রবিন লিগ শেষ করে দক্ষিন আফ্রিকা। ফলে সেমিফাইনালে পেয়েছে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে থাকা অস্ট্রেলিয়াকে। এবারের বিশ্বকাপে দু দলই জিতেছে ৭টি করে ম্যাচ। হেরেছে দুটি করে ম্যাচ। আর দু দলের বিশ্বকাপের শুরুটা ছিল দু রকমের। অস্ট্রেলিয়া টানা দুই ম্যাচে হেরে শুরু করে। আর টানা দুই ম্যাচে জিতে শুরু করেছিল দক্ষিন আফ্রিকা। তৃতী ম্যাচে হেরেছে নেদারল্যান্ডসের কাছে। এরপর অষ্টম ম্যাচে এসে হেরেছে স্বাগতিক ভারতের কাছে। তাই দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে আজ কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে দক্ষিন আফ্রিকা টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে। আগের আসরের ভুল গুলো পেছনে ফেলে কেবলই এই ম্যাচটি জয়ের লক্ষ্য দক্ষিন আফ্রিকার।

তবে বিশ্ব ক্রিকেটে সফল দলের তালিকায় ওপরের দিকে অস্ট্রেলিয়া। তিন সংস্করণেই তাদের সাফল্যের ঝুলি বেশ ভারী। বিশেষ করে আইসিসি টুর্নামেন্টে সবসময়ই ধারাবাহিক পাঁচ বারের ওয়ানডে বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নরা। এবার আরেকটি সেমিফাইনালের লড়াইয়ে নামার আগে দারুণ এই অতীতই দলকে সামনে এগিয়ে দেবে বলে মনে করছেণ দলটির অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। টুর্নামেন্টের প্রথম পর্বে নয় ম্যাচে সমান সাতটি করে জয় পেয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে শ্রেয়তর নেট রান রেটের কারনে দুই নম্বরে থেকে সেমির টিকেট পেয়েছে প্রোটিয়ারা। এটা ঠিক যে প্রায় প্রতি ম্যাচেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী করেছে টেম্বা বাভুমার দল। তাই ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার জন্য চ্যালেঞ্জটা মোটেও সহজ নয়। তবে বিশ্বকাপের অতীত সাফল্যে অনুপ্রেরণার মন্ত্র খুঁজে নিচ্ছেন কামিন্স। গত ছয় আসরের চারটিতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, মিচেল স্টার্করা ছিলেন ২০১৫ সালে সবশেষ শিরোপা জয়ের অন্যতম কারিগর। এছাড়া ২০২১ সালে টিটোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। বিপরীতে কখনোই ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের ওপরে যেতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। এটিকেই বাড়তি সুবিধা হিসেবে দেখছেন কামিন্স।

তবে দক্ষিন আফ্রিকা যেভাবে এবারের বিশ্বকাপটা শুরু করেছে এবং এখনো পর্যন্ত টিকে আছে তাতে অস্ট্রেলিয়ার জন্য মাথা ব্যাথার কারন হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রোটিয়াদের ব্যাটাররা রয়েছে দারুন ছন্দে। কোন বোলারই পাত্তা পাচ্ছে না তাদের সামনে। ডি কক, অধিনায়ক ভাবুমা, ক্লাসেন, মিলার, মার্করাম সবাই যেন রানের জোয়ার বইয়ে দিচ্ছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই অস্ট্রেলিয়ার ভয় ধরার কথা। যদিও প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর অস্ট্রেলিয়া এতটাই দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে যে সামনে বাকি কাআুকে দাড়াতেই দেয়নি। তার উপর শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একজন মেঙওয়েল যেন ক্রিকেটের ধারনাটাই পাল্টে দিয়েছেন। তাই লড়াই একেবারে সেয়ানে সেয়ানেই হবে। দু দলের ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং একেবারেই সমানে সমান। তাই লড়াইটাও জমাট হবে।

১৯৯২ সাল থেকে দক্ষিন আফ্রিকার বিশ্বকাপ মানে স্বপ্ন ভঙ্গের করুন কাহিনী। এ নিয়ে পাঁচবার সেমিফাইনালে খেললেও একবারও ফাইনালে যেতে পারেনি। এর মধ্যে দুইবার হেরেছে এই অস্ট্রেলিয়ার কাছে। এটি তৃতীয়বার দু দলেল মুখোমুখি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে। অপরদিকে বিশ্বকাপের ফাইনাল যেন অস্ট্রেলিয়ার জন্য পান্তা ভাত। বিশ্বকাপের ১১ আসরের ৭টিতেই ফাইনাল খেলেছে তারা। চ্যাম্পিয়ন হয়েছে পাঁচ বার। তাই আজ অস্ট্রেলিয়া আরেকটি ফাইনালে জায়গা করে নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবেনা। কারন বিশ্বকাপের ফাইনালটা তাদের জণ্য তেমনই। অপরদিকে ফাইনালের স্বপ্ন অধরা থাকা দক্ষিন আফ্রিকার জন্য আজকের ম্যাচটি বড় চ্যালেঞ্জ। দু্থদলের খেলোয়াড়দের মধ্যে কার সাথে কার লড়াই হবে সেটা ভেবে পাওয়াও মুশকিল। ওয়ার্নারমার্শের উদ্বোধণী জুটি নাকি কুইন্টন ডি ককরেজা হেন্ডরিক জুটি সেরা। টেম্বা ভাবুমা নাকি স্টিভেন স্মিথ ? এইডেন মার্করাম নাকি গ্লেন মেঙওয়েল ? ডেভিড মিলার নাকি জস ইংলিশ ? একইভাবে হ্যাজেলউড নাকি রাবাদা ? লুঙ্গি এনগিডি নাকি প্যাট কামিন্স ? কেশভ মাহারাজ নাকি এডাম ঝাম্পা ? যদিও দু দলের শেষ পাঁচ লড়াইয়ে চারটিতেই জিতেছে দক্ষিন আফ্রিকা। কিন্তু বিশ্বকাপ বলে ভিন্ন কথা।

দক্ষিন আফ্রিকার পেসার জেরাল্ড কোয়েথজি বলেণ আমরা কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে বিশ্বকাপে এসেছি। এরপর আরো কঠিণ পথ পরিক্রমায় এসেছি সেমিফাইনালে। তাই আর পিছু হটতে চাইনা। প্রথমবারের মত ফাইনারে জায়গা করে নেওয়াই আমাদের স্বপ্ন। আর সে স্বপ্ন পুরনের পথে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে লড়াই করব আমরা। প্রতিপক্ষ, মাঠ, কন্ডিশন কোন কিচুই নেই আমাদের ভাবনায়। আমাদের ভাবনা একটাই। আর তা হচ্ছে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া। বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায় শুরু হবে ম্যাচটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশচিনকে টপকে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরির হাফ সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড কোহলির
পরবর্তী নিবন্ধটানা চতুর্থবার সিজেকেএস সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির