মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ঠেকাতে শুল্ক ফাঁকির দ্বিগুণ জরিমানার বিধান করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তারপরেও থেমে নেই মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি। অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর অসাধু আমদানিকারক নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে পণ্য চালান খালাস করে নিয়ে যান। এসব পণ্য খালাসে সহায়তা করে থাকে কিছু অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা। মাঝে মাঝে কিছু চালান আটক হয়, কিন্তু তারচেয়ে কয়েকগুণ বেশি পণ্য চালান বন্দর থেকে খালাস হয়ে যায়। গত তিন সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় তিনটি চালান আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ (এআইআর) শাখা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বংশালের হাজি আবদুল্লাহ সরকার লেনের বিসমিল্লাহ কর্পোরেশন ‘সোডা অ্যাশ লাইট’ ঘোষণায় বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের ১ হাজার ৪০২ কার্টন ভর্তি ১৬ হাজার ৮২৪ লিটার মদ নিয়ে আসে। গত ২৩ মার্চ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চালানটি আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। মিথ্যা ঘোষণায় মদ আমদানির মাধ্যমে আমদানিকারক ১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছে। ভদকা, জনি ওয়াকার ডাবল ব্ল্যাক, ব্ল্যাক লেবেল, সিভাস রিগ্যাল, ব্যালেন্টাইনস স্কচ হুইস্কি ব্রান্ডের এসব মদের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য প্রায় দুই কোটি ৪৩ লাখ বলে জানায় কাস্টমস কর্তারা। এ ঘটনার পাঁচদিন পর অর্থাৎ ২৮ মার্চ আরেকটি জালিয়াতির ঘটনা উদঘাটন করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ওইদিন রাজধানীর নওয়াবপুরের পদ্মা সেফটি প্রোডাক্টস ২০ টন ইলেকট্রিক মোটর আমদানির ঘোষণা দিয়ে ১৩ হাজার ৫৩০ কেজি (সাড়ে ১৩ টন) নিডো ব্রান্ডের গুঁড়োদুধ নিয়ে আসে। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ৫৫ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছেন জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে অতিসম্প্রতি গত ১০ এপ্রিল ভারতের কলকাতা থেকে সোডা অ্যাশ ঘোষণায় আসা বিপুল পরিমাণ শাড়ি ও লেহেঙ্গার একটি চালান আটক করে চট্টগ্রাম কাস্টমস। ফেনী জেলা সদরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আজিজ এন্টারপ্রাইজ মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির মাধ্যমে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছে বলে জানায় কাস্টমস। কন্টেনারের কায়িক পরীক্ষায় ১২ হাজার ৫৫০ পিস বেনারসি শাড়ি, ১ হাজার ১৩৯ পিস জর্জেট শাড়ি, ৪০৩ পিস লেহেঙ্গা পাওয়া যায়। শাড়ি ও লেহেঙ্গার আনুমানিক শুল্কায়নযোগ্য মূল্য ১ কোটি ১১ লাখ টাকা। আমদানিকৃত ভারতীয় শাড়ি ও লেহেঙ্গার উপর উচ্চ শুল্ক হার প্রযোজ্য থাকায় চালানটিতে ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা টাকা রাজস্ব ফাঁকির চেষ্টা করেছে আমদানিকারক।
তবে কাস্টমসের সেবাগ্রহীতারা বলছেন, পণ্য চালান আমদানি হওয়ার পর দীর্ঘ সময় বিল অব এন্ট্রি দাখিল না করা প্রতিষ্ঠানগুলোই জালিয়াতির সাথে যুক্ত থাকে। অসাধু আমদানিকারকরা মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য এনে সুযোগ অপেক্ষায় থাকে অথবা কাস্টমস কর্তাদের ম্যানেজ করা অপেক্ষায় থাকে। এক সময় তারা সুযোগ বুঝে চালান খালাস করে নিয়ে যান। অথচ চট্টগ্রাম কাস্টমসের আইনে আছে পণ্য চালান আমদানি হওয়ার ৪৫ দিন পেরিয়ে তা নিলামে তুলতে হবে। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে বছরের বছর পড়ে থাকে অনেক কন্টেনার। নিয়ম মেনে পণ্য নিলামে তোলা হলেও জালিয়াতি ঘটনা কমে যাবে বলছেন তারা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ শাখার (এআইআর) উপ–কমিশনার মো. সাইফুল হক বলেন, মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির সাথে সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ও সিএন্ডএফ এজেন্টের বিরুদ্ধে আমরা ফৌজদারি ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। সরকারি রাজস্ব সুরক্ষায় চট্টগ্রাম কাস্টমস সব সময় তৎপর রয়েছে।








