থেমে নেই নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থি ইসলামী সংগঠন আনসার আল ইসলামের অপতৎপরতা। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে ‘আনসার আল ইসলামের’ সব ধরনের কর্মকান্ড সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। ২০১৫ সালের মে মাসে আনসারুল্ল্লাহ বাংলা টিম নিষিদ্ধ হওয়ার পর এর সদস্যরাই আনসার আল ইসলাম নামে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা নেটওয়ার্কের ভাবাদর্শে উদ্বুদ্ধ আনসার আল ইসলাম নিজেদেরকে ওই সংগঠনের বাংলাদেশ শাখা হিসেবে দাবি করে। সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আহমেদ পেয়ার বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি নগরীর জিমনেসিয়াম মাঠে আয়োজিত একুশের বইমেলায় দুপুরে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল এ সংগঠনের সদস্যরা। যদিও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এবং কোতোয়ালী থানা পুলিশ আগেভাগে তৎপর হয়ে তাদের পরিকল্পনা ভেস্তে দেয় এবং বইমেলার সামনে থেকে মো. রুমেল নামে আনসার আল ইসলামের সুইসাইডাল স্কোয়াডের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আনসার আল ইসলামের সাম্প্রতিক তৎপরতা সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা পেয়েছে। কাউন্টার টেরোরিজমের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সংগঠনের শীর্ষ পদের নাম সমন্বয়ক। এর তিনটি বিভাগ রয়েছে। তাদের প্রথমটি হল দাওয়াত বিভাগ। এই বিভাগে লজিস্টিক ও রিক্রুটমেন্ট দেখা হয়। দ্বিতীয়টি হল আসকারি বিভাগ। সেখানে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তৃতীয়টি হল গণমাধ্যম শাখা। এটি আইটি এক্সপার্টরা পরিচালনা করে থাকেন। সমন্বয়কের কাজ এই তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয় করা। এ ছাড়া ‘অপারেশনের’ জন্য আরও দুটো বিভাগ রয়েছে; এগুলো হল মাশুল এবং মামুর। কোনো অপারেশন পরিকল্পনা ও পরিচালনার কাজটি দেখে মাশুল বিভাগ।
কর্মকর্তারা আরও জানান, জঙ্গি সংগঠনটি অনলাইনে বিভিন্ন প্রোটেকটিভ অ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করে। যা কিনা ইন্টারসেপ করা কষ্টসাধ্য। তাদের নিয়োগ এবং প্রাথমিক প্রশিক্ষণ অনলাইনে করা হয়। সরাসরি দেওয়া হয় সংগঠনটির সামরিক শাখার উন্নত প্রশিক্ষণ। এ জন্য দেশের কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চল বেছে নেওয়া হয়।
তারা কথিত ইসলামী শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। কথিত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠায় যারা প্রতিহত বা বিরোধ সৃষ্টি করে তাদের জন্য চূড়ান্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। নগরীতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ধরা পড়া আনসার আল ইসলাম সদস্য রুমেল জানিয়েছে, একুশে ফেব্রুয়ারি পালন উপলক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে ‘স্তম্ভ’ পূজা মনে করে আনসার আল ইসলাম। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে যারা বইমেলার আয়োজন করেছে তারা ‘তাগুত’ অর্থাৎ সীমা লক্সঘনকারী। জিজ্ঞাসাবাদে রুমেল আরও জানিয়েছে, তাদের আরও লক্ষ্য আনসার আল ইসলামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে শরিয়াহ ও খিলাফতভিত্তিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করা। তারা আকস্মিক আক্রমণ করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে থাকে। তাদের আকস্মিক আক্রমণের পরিকল্পনাকে তারা তাদের সংগঠনের ভাষায় ‘লোন উলফ অ্যাটাক’ বলে থাকে।
এ ছাড়া, সামপ্রতিক একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দেখা গেছে আনসার আল ইসলামকে ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়দার বাংলাদেশি শাখা (একিউআইএস) বলা হয়। তারা তাদের লক্ষ্যের একটি তালিকা চূড়ান্ত করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নাস্তিকদের তারা ‘সফট টার্গেট’ এবং হিন্দুত্ববাদ ও বিদেশি মিশন প্রচারকারী সংগঠনগুলোকে ‘হার্ড টার্গেট’ হিসাবে নির্ধারণ করেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, এক সময়ের আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) হিসেবে পরিচিত আনসার আল ইসলামের আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর আক্রমণ করার কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ সংগঠনটি বিশ্বাস করে, এই ধরনের আক্রমণগুলোতে পাল্টা আক্রমণ আসবে, ব্যাপকভাবে ধরপাকড় চলবে। ফলে তাদের শক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংগঠনটি সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে। সংগঠনটির চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো গাজওয়া-ই-হিন্দ (ভারত বিজয়)-এর মাধ্যমে ভারতীয় উপমহাদেশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া। সংগঠনটি কাশ্মীরকে একটি সম্ভাব্য আশ্রয়স্থল এবং বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে নতুন সদস্য নিয়োগের উৎস হিসেবে দেখে, বলে উল্ল্লেখ আছে প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আনসার আল ইসলামের নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের একটি দল পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার হয়ে আফগানিস্তান ও কাশ্মীরে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। তবে তারা সফল হয়েছে কি না তা উল্ল্লেখ করা হয় নি।