কক্সবাজারের চকরিয়া থানা হেফাজতে চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী দুর্জয় চৌধুরীকে কথিত অভিযোগে সোপর্দকারী ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানমকে এবার ওএসডি করা হয়েছে।
গতকাল ২৪ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক–১ এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানমকে ওএসডি করে ঢাকাস্থ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এদিকে থানা হেফাজতে দুর্জয় চৌধুরীর রহস্যজনক মৃত্যুর তিনদিন পার হলেও এখনো মামলা রুজু করা হয়নি। তবে চকরিয়া থানা পুলিশ বলছে দুর্জয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় মামলা হয়নি। এছাড়াও উদ্ধার হয়নি দুর্জয় চৌধুরীর ব্যবহৃত ল্যাপটপও। গত বৃহস্পতিবার রাতে চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম ওই স্কুলের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর দুর্জয় চৌধুরী চেক জালিয়াতি করে ও নগদে প্রতিষ্ঠানটির ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে চকরিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ সময় দুর্জয়কেও থানায় সোপর্দ করেন প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম, সহকারী শিক্ষক জসীম উদ্দিনসহ কয়েকজন শিক্ষক। এই অভিযোগের ভিত্তিতে থানার ওসি মো.শফিকুল ইসলাম থানা হাজতে আটকে রাখেন দুর্জয় চৌধুরীকে। পরদিন সকালে হাজতখানার রিমান্ড কক্ষ থেকে দুর্জয়ের মৃতদেহ উদ্ধার করেন চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ন দেব। এ সময় তিনি দুর্জয় চৌধুরীর প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। শুক্রবার সকালে দুর্জয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। কিন্তু মর্গে ডাক্তার না থাকায় বিলম্ব হয় লাশের ময়নাতদন্ত কার্যক্রম। পরে শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এদিন বিকেলে দুর্জয়ের মরদেহ সামাজিক মহাশ্মশানে সমাধি করা হয়।
দুর্জয় চৌধুরীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এর আগে থানার ওসি শফিকুল ইসলাম, এএসআই হানিফ মিয়া ও দুই কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় দায়িত্ব অবহেলার কারণে। জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দীন শাহিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে চকরিয়া থানায় নতুন ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে তৌহিদুল আনোয়ারকে। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার তিনদিন অতিবাহিত হলেও থানায় এজাহার কেন দেওয়া হয়নি? এই বিষয়ে দুর্জয়ের বাবা কমল চৌধুরী বলেন, দুর্জয়ের ময়নাতদন্ত এবং ধর্মীয় রীতিনীতি শেষ হতে সময় লেগেছে। তাছাড়া এখনো কেউ স্বাভাবিক হতে পারেনি, তাই মামলা করতে বিলম্ব হচ্ছে।
বাবা কমল চৌধুরীর ভাষ্য– এ ঘটনায় কারা কারা জড়িত সব কিছু বিশ্লেষণ করে মামলা দায়ের করতে চান। যাতে নিরাপরাধ কেউ হয়রানির শিকার না হন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দিলে অবশ্যই মামলা হিসেবে রুজু করা হবে। দুর্জয় চৌধুরীর ল্যাপটপ উদ্ধারের জন্য থানার এসআই আবুল খায়েরকে স্কুলে পাঠানো হয়েছিলো। কিন্তু ল্যাপটপ ফেরত দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।