মিয়ানমারের নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের নিয়ে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সীমান্তের কাছে সাগরে ডুবে যাওয়া নৌকার ১১ আরোহীর মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে। খবর বিডিনিউজের।
সোমবার মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ডুবে যাওয়া নৌকাটিতে প্রায় ৭০ জন আরোহী ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে, যাদের অন্তত দুইজন বাংলাদেশি। মূলত রোহিঙ্গাদের বহনকারী আরেকটি নৌকায় ২৩০ জন আরোহী ছিলেন, সেটির অবস্থা পরিষ্কার হয়নি। থাইল্যান্ডের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা সাগর থেকে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। এর সঙ্গে মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষের উদ্ধার করা সাতটি মৃতদেহ নিয়ে এ ঘটনায় মোট মৃতের সংখ্যা ১১ জনে দাঁড়িয়েছে। ডুবে যাওয়া নৌকার ৪০ জনেরও বেশি আরোহী নিখোঁজ রয়েছেন।
রয়টার্স লিখেছে, নিজ দেশ মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে আর প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরের কঠিন জীবনের কারণে, উভয় দেশ থেকেই রোহিঙ্গারা নিয়মিতভাবে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াসহ অন্য কোথাও চলে যেতে সাগরের বিপজ্জনক পথ বেছে নেয়। মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষ তল্লাশি এলাকার কাছে ল্যাঙ্কাউই দ্বীপে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, জীবিতদের সন্ধানে তল্লাশি চালাতে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড, উভয় দেশই ড্রোন মোতায়েন করেছে।
এই সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় কেদাহ ও পার্লিস রাজ্যের সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষের পরিচালক ফার্স্ট অ্যাডমিরাল রমলি মুস্তফা বলেন, থাই সংস্থার সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক।
তাই আমাদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ ও তথ্যের আদানপ্রদান হচ্ছে। এতে কাজটি আমাদের জন্য সহজ হবে। এই অভিযানে তল্লাশিরত জলযানগুলোকে সাহায্য করতে আকাশযান ব্যবহার করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তল্লাশি অভিযান সাত দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। রমলি জানান, এ পর্যন্ত সংগ্রহ করা তথ্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের সীমান্তের নিকটবর্তী মিয়ানমারের উপকূল থেকে একটি নৌকা ছেড়ে আসে, কিন্তু বৃহস্পতিবার কিছু যাত্রীকে অন্য একটি নৌকায় তোলা হয়।
যে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১১ জন রোহিঙ্গা ও ২ জন বাংলাদেশি বলে জানান তিনি। থাইল্যান্ডের মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট কমান্ড সেন্টারের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, তারা সাগর থেকে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। তাদের মধ্যে ১০ ও ১২ বছরের দুটি শিশু রয়েছে আর বাকি দুজন পূর্ণবয়স্ক। এই কর্মকর্তা বলেন, ওই দুই নারীর কাছে শরণার্থীর পরিচয়পত্র ছিল, তাতে তাদের রোহিঙ্গা বলে শনাক্ত করা আছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের প্রথমদিক পর্যন্ত ৫১০০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গা নৌকাযোগে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ ছাড়ার চেষ্টা করেছে, তাদের মধ্যে প্রায় ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে বা তারা নিখোঁজ রয়েছেন। মিয়ানমারের দরিদ্র রাখাইন রাজ্য বছরের পর বছর ধরে সংঘাত, অনাহার ও জাতিগত সহিংসতায় ভুগছে। রাজ্যটিতে মূলত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গারা এসব সহিংসতার লক্ষ্যস্থল হয়েছে। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নৃশংস দমন অভিযানের মুখে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে শরণার্থীর জীবন কাটাচ্ছে।












