থমকে যাওয়া উদ্যোগ কি সচল হবে

সমন্বিত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আজ মন্ত্রণালয়ে বিশেষ বৈঠক

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:২১ পূর্বাহ্ণ

আট মাস আগে জাপান সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে দেশটির একটি প্রতিষ্ঠান নগরে একটি সমন্বিত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে আগ্রহ দেখায়। এ লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে (চসিক) প্রস্তাব দেয় ‘জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন’ নামের প্রতিষ্ঠানটি। তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না পাওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানকে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অনুমতি দিতে পারছে না চসিক। এমনকি চসিক দুই দফা চিঠি দিলেও সাড়া দেয়নি মন্ত্রণালয়। ফলে থমকে যায় সমন্বিত আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের উদ্যোগটি। সর্বশেষ আজ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনাটির বিষয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা গেছে, জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে নগরে বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ, এর ফিজিক্যাল ও কেমিক্যাল গঠন, বর্জ্যে ক্যালোরিফিকের পরিমাণ (দহন মাত্রা), সংগ্রহ ও অপসারণের পরিমাণ এবং সর্বোপরি বর্জ্য ট্রিটমেন্ট এর যথাযথ টেকনোলজি নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ক্রমশ বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ল্যান্ডফিল এর স্থান স্বল্পতা প্রভৃতি সমস্যা সমাধানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে এই ফিজিবিলিটি স্টাডি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন এর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত মার্চ মাসে চসিককে প্রস্তাব দেয়। এতে পূর্ণাঙ্গ ফিজিবিলিটি স্টাডি’টি ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সম্পাদনের প্রস্তাব ছিল। পুরো ফিজিবিলিটি স্টাডি’র যাবতীয় ব্যয় বহন করবে প্রতিষ্ঠানটি। ফিজিবিলিটি স্টাডি’টি সম্পাদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চেয়ে গত ৪ এপ্রিল সিনিয়র সচিব বরাবর চঠি দেয় চসিক। এতে সাড়া না পাওয়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মে. তাজুল ইসলামকে গত ১ সেপ্টেম্বর আরেকটি চিঠি দেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী।

এ বিষয়ে চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মো. আবুল হাশেম দৈনিক আজাদীকে বলেন, জেএফই ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন সামগ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডি করার প্রস্তাব দেয়। বিষয়টি আমরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন না পাওয়ায় বিষয়টি ওভাবেই আছে। আগামীকাল (আজ) প্রস্তাবনাটি নিয়ে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হবে।

এদিকে মন্ত্রণালয়ে দেয়া চসিকের চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র, বাণিজ্যিক রাজধানী ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামে বর্তমানে প্রায় ৭০ লক্ষ লোকের বসবাস। চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে নগরে বর্জ্যের পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। বিশাল জনসংখ্যার এই মহানগরীর পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর রাখতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো বিকল্প নেই।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত চসিকের আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, কর্পোরেশনের বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। চট্টগ্রাম মহানগরীর জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে পারিবারিক, শিল্প, বাণিজ্যিক ও স্ট্রিট বর্জ্য উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মোট বর্জ্যের পরিমাণ প্রতিবছর বেড়েই চলছে। বর্জ্য উৎপাদন যে হারে বাড়ছে সে হারে বর্জ্যের সুষ্ঠু বিন্যাস তথা ব্যবস্থাপনা সম্ভব হচ্ছে না।

চসিকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেয় চসিক। এছাড়া আরো ১৫টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রস্তাব দেয় চসিককে। ল্যান্ডফিল (বর্জ্যাগার) ব্যবস্থাপনা ও ল্যান্ডফিলের বর্জ্য থেকে গ্যাস উৎপাদনেরও প্রস্তাব আসে চসিকের কাছে। এক্ষেত্রে প্রতি প্রতিষ্ঠান বর্জ্যের যে চাহিদা দেয় তা ভিন্ন ভিন্ন। যদিও চাহিদা অনুযায়ী বর্জ্য উৎপাদন হয় কীনা তার কোনো স্টাডি নাই।

উল্লেখ্য, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে জাইকার একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে দৈনিক ৩ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৩০ টন গৃহস্থালি, ৫১০ টন সড়ক ও অবকাঠামোগত এবং ৬৬০ টন মেডিকেল বর্জ্য। উৎপাদিত বর্জ্যের মধ্যে কর্পোরেশন সংগ্রহ করে দুই হাজার টন। বাকি বর্জ্য নালা-নর্দমা, খাল-বিল, নদী ও উন্মুক্ত স্থানে পড়ে থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাঙা পাটাতনে দুই ঘণ্টা আটকে ছিল বৃদ্ধের পা
পরবর্তী নিবন্ধএলসি ছাড়াই বন্দরে গাড়ির চালান, খালাসে বিশেষ সুযোগ দাবি