ত্রুটি চিহ্নিত হলে আলোচনার মাধ্যমে হবে সমাধান

জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃদপ্তর সমন্বয় সভায় ঐকমত্য সিডিএ চেয়ারম্যানের বক্তব্য স্লিপ অব টাং : মেয়র

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৫ আগস্ট, ২০২৩ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি থাকলে তা চিহ্নিত করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে একমত হয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারীসহ সেবা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গতকাল বিকলে টাইগারপাসস্থ নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্তঃদপ্তর সমন্বয় সভায়’ এই ঐকমত্যে পৌঁছান তারা।

সভা শেষে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সাংবাদিকদের সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরে বলেন, সব সংস্থাই যে সব ত্রুটি আছে তা চিহ্নিত করে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করব এবং কাজ এগিয়ে নেব। এককভাবে কোনো সংস্থা জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ‘কোনো ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে কীনা’ জানতে চাইলে বলেন, প্রত্যেকে নিজের ত্রুটি সম্পর্কে জানেন। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সমন্বিতভাবে কাজ করে চট্টগ্রামের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারব। সমন্বিতভাবে যদি কাজ করি আমাদের সফলতা আসবে। কারণ সমস্ত দায়দায়িত্ব আমাদের সবাইকে নিতে হবে। সভায় জলাবদ্ধতা প্রকল্পের পরিচালক বিভিন্ন ব্রিজকালভার্টের নিচ দিয়ে যাওয়া ওয়াসা, গ্যাস ও টিএন্ডটি’র পাইপ লাইনের পরিসংখ্যান তুলে ধরেছেন জানিয়ে মেয়র বলেন, যে সমস্ত জায়গায় এখনো প্রতিবন্ধতা আছে সেগুলো যদি আমরা একসাথে বসে কাজ করি সমাধান হবে। এসময় তিনি পরিবেশসহ সব সংস্থা জোর দিলে পাহাড় কাটা বন্ধ হবে মন্তব্য করে বলেন, বন্ধ না হলে খনন করলেও পাহাড়ের মাটি এসে খাল ভরাট করে ফেলবে।

তিনি বলেন, পানি উঠবে। পৃথিবীর উন্নত শহরগুলোতেও পানি উঠছে। কিন্তু পানি দ্রুত নিষ্কাশিত হচ্ছে কিনা এটাই হচ্ছে আসল কথা।

কয়েকদিন আগে সিডিএ চেয়ারম্যানের দেয়া ‘সিটি কর্পোরেশন পারছে না এবং ব্যর্থ বলেই জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ সিডিএ’কে দেয়া হয়েছে’ বক্তব্য প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘অনেক সময় কথা বলতে গেলে অনেকে স্লিপ অব টাং করে অনেক কিছু বলে ফেলে। বক্তৃতা দিতে গেলে অনেকের অনেক ভাষা চলে আসে। হয়তো সিডিএ চেয়ারম্যান সাহেব কথাচ্ছ্বলে বলে ফেলেছেন। এটাকে আমরা দৃঢ়ভাবে না ধরে সহজভাবে নিতে পারি। প্রত্যেক সংস্থার সক্ষমতা আছে। কোনো সংস্থার সক্ষমতা নাই, এটা ঠিক না। হয়তো উনি বলার ফাঁকে বলে ফেলেছেন। এটা নিয়ে আমরা আর টানাহেঁচড়া না করি।

সভায় সিডিএ চেয়ারম্যানের অংশ না নেয়া প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, তিনি হয়ত কোনো কাজে আসতে পারেননি। প্রকল্প পরিচালক এসেছেন। প্রকৌশলী এসেছেন। উনারা সভায় উনাদের বক্তব্য রেখেছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। কাজ শেষ না হওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। এবার যে পানি এর একমাত্র কারণ বিগত ৩০ বছরে এ ধরণের প্রবল বৃষ্টিপাত হয়নি। তিনি বলেন, অনেক খালের মাটি এখনো পুরোপুরি তোলা হয়নি। স্লুইচ গেইট ও পাম্পহাউজের কাজও শেষ হয়নি। স্লুইচ গেইটের কাজ শেষ না হওয়ায় জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। এসময় প্রকল্পের অধিকাংশ কাজ এক বছরের মধ্যে শেষ হবে বলে জানান তিনি।

মেয়র বলেন, নগরে যত বিল ছিল সেই বিরাণ ভূমিগুলোতে এখন উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। সেখানে দালানকোঠা হয়েছে। হয়ত মানুষ ভরাট করে ফেলেছে। এতে পানি যাওয়ার রাস্তা নেই। পানি যাওয়ার একমাত্র রাস্তা নদীরও একই অবস্থা। কর্ণফুলী নদীরও ধারণক্ষমতা কমেছে। ৭ মিটার নদী ভরাট হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে একসময় ৭২টা খাল ছিল। পরের তালিকায় নগরীতে খাল ছিল ৫৭টা। প্রকল্পের অধীনে কাজ চলছে ৩৬টিতে। বাকি ২১টা খালের অনেকগুলোর অস্তিত্ব নেই।

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী মাহমুদুল হোসেন খান, সিডিএ সচিব মো. মিনহাজুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু রায়হান দোলন, নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এম এ মাসুদ, চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মুনিরুল হুদা।

এদিকে সভায় কাজ চলাকালীন মেগা প্রকল্পভুক্ত ৩৬ খালের রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে সে প্রশ্ন করেন চসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চাক্তাই, বীর্জা ও মহেশখালসহ বড় বড় খালগুলো থেকে পরিপূর্ণভাবে পানি প্রবাহের জন্য যতটা প্রয়োজন ততটা মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে না। শীতলঝর্ণা খালের উপর চসিকের নির্মিত ব্রিজ সরিয়ে ফেলায় রেল লাইনে কাটা পড়ে দুইজন মারা গেলও সে ব্রিজ এখনো পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। নয়া বির্জা খালের পাশ দিয়ে চাঁন মিয়া সওদাগর সড়ক চার বছর ধরে ভাঙা। খালের পশ্চিম পাশে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ না করায় ধসে গেছে। কবে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ হবে?

তখন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী শীতলঝর্ণা খালের ব্রিজ প্রসঙ্গে বলেন, ফুটওভার ব্রিজটি ছিল ৮ মিটার। এখন খাল বড় করেছি, ১২ মিটার। আমাকে বললে আগেই ব্রিজটি করে দিতাম, জনস্বার্থে এখন করে দিব। চান মিয়া সাওদাঘর সড়কের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। ডিসেম্বরের মধ্যে রাস্তা করে দেয়া হবে। চাক্তাই খালের বেশকিছু অংশে জায়গা অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়নি।

সিডিএ’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আ ম ম হাবিবুর রহমান বলেন, প্রকল্প চলাকালীন খাল পরিষ্কার করা হচ্ছে। এরপরও কিছু কিছু জায়গায় আবর্জনা বা প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনারা (চসিক) সেনাবাহিনী বা সিডিএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করলে সেগুলো পরিষ্কার করা হবে। তবে সেনাবাহিনী আমাদের বুঝিয়ে দেয়ার পর সেগুলো সিটি কর্পোরেশনকে বুঝিয়ে দেয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযান চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু টানেল
পরবর্তী নিবন্ধবাঙালির বেদনার দিন