ত্রুটিমুক্ত বই শিক্ষার্থীদের হাতে দ্রুত পৌঁছাতে হবে

| শুক্রবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৬:২৪ পূর্বাহ্ণ

বছরের প্রথম দিন সারা দেশের বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই বিতরণ শুরু হলেও সব শিক্ষার্থী সব বই হাতে পায়নি। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) হিসাবেই মোট প্রায় ৪১ কোটি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে মঙ্গলবার পর্যন্ত মাত্র ৬ কোটি বই গেছে। এখনই সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যের সব পাঠ্যবই তুলে দিতে না পারায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যবই নিয়ে কথা বলেন। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে অনলাইন ভার্সন দেওয়া হয়েছে। পাঠ্যবই ছাপা ও তা শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের ছাত্রছাত্রীদের হাতে এখনই সব দিতে পারা গেল না, এ জন্য আমি তাদের অভিভাবকদের কাছে এবং তাদের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে সান্ত্বনা যে যখন বইগুলো পাবে তোমরা, আগের থেকে সুন্দর দেখাবে এবং বছরের মাঝখানে পাতাগুলো ছিঁড়ে যাবে না।’

শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই প্রণয়ন এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করে এনসিটিবি। করোনাকাল ছাড়া ২০১০ সাল থেকে শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিন সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে বই তুলে দেওয়া হতো। তবে কোনো কোনো বছর কিছু ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয়ও হয়েছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেছেন, যারা বই ছাপাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন, তাদের তালিকা করা হচ্ছে। শিক্ষাসহ সব মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বেশ কয়েক বছর ধরে মুদ্রণশিল্পের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত হয়ে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, তাদের অনেককে বদলি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আগের কর্মকর্তাকর্মচারীরা যারা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য দুদককে বলা হবে।’

আসলে পাঠ্য পুস্তকে পরিবর্তন আনা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে কথা চলছিল। শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কারটা বৈপ্লবিক না হয়ে ধীরে, সময় নিয়ে হওয়া উচিত বলে অনেকে মনে করেন। তাঁরা বলেন, শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার এত তাড়াতাড়ি করা সম্ভব নয়। এ জন্য অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের নিয়ে কাজ করা দরকার। শিক্ষকদের কাজ চারটাপাঁচটার চাকরির মতো না, তাঁদের কাজটা ২৪ ঘণ্টার। তাঁদের সেই পরিবেশ দিতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চাইলে শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে এবং রাষ্ট্রকেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে। সবাইকে শিক্ষার সুযোগ দিতে হবে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী শিক্ষাভাবনাকেমন শিক্ষাব্যবস্থা চাই’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এ কথাগুলো বলেছেন। সংলাপে লেখকঅধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। শিক্ষার খরচ, বিষয়বস্তু এবং ভাষাএই তিনটার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। শিক্ষার সুযোগ সবার থাকতে হবে। শিক্ষকছাত্রের অনুপাতকে যৌক্তিক সীমায় নিয়ে আসতে হবে। যথেষ্ট শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বাচ্চাদের বইগুলোতেও রাজনৈতিক গল্প ঢোকানো হয়েছে। প্রতিটি বইয়ের পেছনে রাজনৈতিক বক্তব্য এবং প্রচ্ছদে রাজনৈতিক ছবি। ছোট ছোট বাচ্চাদের বইয়ে রাজনীতি ঢোকানোর ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই।’

প্রকৃত কথা হলো, শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগ বাড়াতে হবে। মানসম্মত বই শিক্ষার্থীদের উপহার দিতে হবে, যেগুলো দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে তারা যাতে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চায় আগ্রহী হয়, সে বিষয়ে তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের অনলাইন ভার্সন দেওয়া হলেও সেটা বড় কার্যকর হবে বলে মনে হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হতদরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা যে অনলাইন ভার্সনের সুবিধা নিতে পারবে না, তা বলাই বাহুল্য। কাজেই যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। গত কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ বছর জটিলতা আরও বেড়েছে। আশা করি, মানসম্মত ও ত্রুটিমুক্ত বই প্রকাশ করে দ্রুত শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে