গত প্রায় এক মাস ধরে চলছে টানা বৃষ্টি। সেই সাথে রয়েছে জোয়ারের পানির হানা। এরমধ্যে সম্প্রতি যোগ হয় কাপ্তাই লেক থেকে ছেড়ে দেয়া পানি। এখন এই ত্রিমুখী পানির সাথে যুদ্ধ করে চলছে হালদা পাড়ের মানুষের জীবন। পানিবন্দি হয়ে থাকা গ্রামের মানুষ বলছে, এমনিতেই এলাকার রাস্তাঘাট অমাবশ্যা পূর্ণিমার তিথির বর্ধিত পানির চাপে ডুবে থাকে। এবার বর্ষায় টানা বৃষ্টিপাতে রাস্তাঘাট ডুবে পানি প্রবেশ করেছে বাড়ি ঘরে। গত দুদিন ধরে এই পানির সাথে যোগ হয়েছে কাপ্তাই লেক থেকে ছেড়ে দেয়া পানি। প্রায় এক মাস ধরে চলমান এমন পরিস্থিতির মাঝে নদীর পাড়ের ইউনিয়ন সমূহের মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তারা জানান, নদী থেকে ছুটে আসা পানির স্রোতে ধসে দিচ্ছে পাকা–কাঁচা সব রাস্তাঘাট, বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবারে জ্বলছে না চুলা। সম্প্রতি উপজেলার দক্ষিণাংশের পানিবন্দি পরিবার সমূহের অবস্থা দেখতে গিয়ে কথা হয় অনেকের সাথে। তারা বলেছেন, মাসখানেক থেকে পানির সাথে যুদ্ধ করে চলছে তাদের জীবন। সরেজমিনে দেখা যায়– সর্বাধিক দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়ন সমূহের মধ্যে রয়েছে নোয়াপাড়া, উরকিরচর, পশ্চিম গুজরা, বিনাজুরী ও বাগোয়ান ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম। এসব ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে নোয়াপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ও পশ্চিমাংশের গ্রামসমূহ।
দক্ষিণাংশের দুর্গত মানুষের মধ্যে একজন দিদারুল আলম বলেছেন, এমনিতে চৌধুরী হাট থেকে নোয়াপাড়া পথেরহাট পর্যন্ত সড়কটি ক্ষতবিক্ষত। তার উপর টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে সড়ক পথটি আরো নাজুক অবস্থায় ঠেকেছে। এখন পায়ে হাঁটাও কষ্টসাধ্য হয়েছে।
ওই ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলমগীর জানান, ইউনিয়নের চৌধুরীঘাটকুল, কচুখাইন, মোকামীপাড়া, পালোয়ান পাড়ার মানুষ গত প্রায় একমাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছে। হালদা নদী থেকে প্রবল স্রোত হয়ে আসা পানিতে গ্রামের প্রায় রাস্তাঘাট ধসে নিয়ে গেছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া রাস্তায় এখন গ্রামের ছাত্র–যুবকরা পানির সাথে যুদ্ধ করে স্বেচ্ছাশ্রমে গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য গাছ বাঁশের সেতু নির্মাণ করে দিয়ে পারাপার করাচ্ছে।
পালোয়ান পাড়ার বাসিন্দা ব্যাংকার মোহাম্মদ রফিক বলেন, পানির স্রোতে গ্রামীণ রাস্তা ধসে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুল, মাদ্রাসায় যাওয়া বন্ধ রয়েছে। মোকামিপাড়ার বাসিন্দা মাওলানা আজিজুর রহমান আলো কাদের বলেন, তাদের গ্রামের সব রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম গ্রামের আবুল কাসেম হিরু জানান, ইউনিয়নের মইশকরম, সাকরদা, পশ্চিম ও পূর্ব উরকিরচর, খলিফার ঘোনায় বেশির ভাগ ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের নিজাম উদ্দিন রানা বলেন, ইউনিয়নের মগদাই, আজিমের ঘাট, কাগতিয়া, কাসেম নগর এলাকার বেশির ভাগ রাস্তা পানির স্রোতে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, গতকাল শনিবারও কাপ্তাই লেকের পানি ছাড়া অব্যাহত ছিল। আবহাওয়া দপ্তর আরো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে রাউজান উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ জানান, ইতিমধ্যে দুর্গত প্রতিটি ইউনিয়নে ১ হাজার কেজি করে চাল ও ২২৪ প্যাকেট করে শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। পানিবাহিত রোগের সংক্রমণ প্রতিরোধে কাজ করছে স্বাস্থ্য কর্মীদের টিম। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, প্রশাসন পানির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। পরিস্থিতি অবনতি হলে দুর্গতদের আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পানি নেমে গেলে বিধ্বস্ত রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে। যদি এই দুর্যোগে কারো বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয় তাদের জন্য গৃহনির্মাণ সামগ্রী দেয়া হবে।