ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর ঈদুল আজহা

মোয়াজ্জেম হোসেন | শুক্রবার , ১৪ জুন, ২০২৪ at ৮:১১ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আজহা হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ প্রতিবছর হিজরি সনের জিলহজ মাসের ১০ তারিখ হাজির হয় পশু প্রবৃত্তির কুরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করার সুমহান বার্তা নিয়ে। এই ঈদ ত্যাগ ও কুরবানির শিক্ষা দেয়। আত্মত্যাগের প্রকৃত উদাহরণ হচ্ছে এই কুরবানি। ত্যাগের মধ্যেই এর সার্থকতা ও তাৎপর্য নিহিত। ত্যাগের আনন্দে উদ্ভাসিত পবিত্র ঈদুল আযহা মানুষকে মানবিক চেতনায় পুষ্ট হয়ে জগতের সকল সৃষ্টির কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার শিক্ষা দেয়। উৎসাহ জোগায় একটি সাম্যপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সামিল হতে। ফলে সমগ্র বিশ্বমানবের কাছে পবিত্র ঈদুল আযহার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সীমাহীন। মানুষের কোমল হৃদয়েও পশুর স্বভাব বিদ্যমান থাকে। তাতে মানুষের স্বভাবে প্রকাশ পায় ধনী গরীব ব্যবধান, পরশ্রীকাতরতা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য, পরনিন্দা, হিংসাবিদ্বেষ, গর্বঅহংকার, কপটতা, ইত্যাদি। মনুষ্য হৃদয়ের এই পশুত্ব মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে প্রধান বাধা। তাই পশু কুরবানির পাশাপাশি নিজেদের পশুত্বকে কুরবানি দিতে হয়। আর তখনই সার্থক হয় প্রতীকী পশুর কুরবানি। আল্লাহ তা’লার উদ্দেশ্যে পশু কুরবানী উপলক্ষ্য হলেও এর অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন। সেদিক থেকে ঈদুল আযহা অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি দিন। আল্লাহ তা’লার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করাই ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা। তাই যাদের উপর কুরবানি আদায় করা আবশ্যক তাদের উচিত নির্দিষ্ট নিয়মে ও নির্দিষ্ট সময়ে পশু কুরবানি দেয়া। আর কুরবানির মূল উদ্দেশ্য যেহেতু নিজেদের পশু প্রবৃত্তির কুরবানি করে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করা, সেহেতু এই উদ্দেশ্যকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের গৌরবমর্যাদার প্রতীক হিসেবে কুরবানিকে বিবেচনা করা উচিত নয়। কিছু মানুষ ঈদুল আযহাকে কেবলই পশু কুরবানী দেয়ার এবং উৎসব করার দিনে পরিণত করলেও দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও আনুগত্য তৈরি করা এবং ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থ চিন্তার উচ্ছেদ করে আত্মত্যাগের শিক্ষাকে জাগ্রত করে তোলা। কোনও অবস্থায় লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বড় বড় গরু ক্রয় করে প্রদর্শন না করা, বাহাদুরী জাহির না করা। আর গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে কোরবানি হবে না। কুরবানির পরিপূর্ণ শিক্ষা অর্জন করতে প্রয়োজন ওই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম ভালোবাসা ও ঐকান্তিকতা। পশু কোববানির ক্ষেত্রে পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যসম্পর্কিত বিধির প্রতি সচেতন থাকা একান্ত প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম উন্নয়নের ছাড়পত্র
পরবর্তী নিবন্ধস্মরণ : শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আল্লামা ক্বারী নূরুল আলম খান (রহ.)