তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে

| শুক্রবার , ৪ মার্চ, ২০২২ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

পত্র-পত্রিকায় যে কথাটি ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে, তা হলো- করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও দেশের অর্থনীতির চাকা চাঙা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২৪ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউন শিথিল হওয়ায় গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, গত ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মাসের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে পোশাক রপ্তানি ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধি ৩৩ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং ওভেন খাতে প্রবৃদ্ধি ৩১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। নভেম্বরে রপ্তানি আয়ে ৩ দশমিক ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, অর্থাৎ ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বিজিএমইএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ২০২১ সালের অক্টোবরে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করেছি এবং নভেম্বরে সেটি ৩ দশমিক ২ ডলারে নেমে এসেছে। যদিও সাধারণত একই বছরের পর পর মাসের রপ্তানির মধ্যে তুলনা করা হয় না, কেননা এটি অনেক সময় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, পণ্য রপ্তানিতে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তাতে ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩ হাজার ৩৮৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছেন দেশের উদ্যোক্তারা। এই আয় ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) বুধবার পণ্য রপ্তানি আয়ের এই হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, শুধু ফেব্রুয়ারিতে ৪২৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের ফেব্রুয়ারির চেয়ে ৩৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি।
তৈরি পোশাক রপ্তানিতেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। একই সঙ্গে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে।
ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে ৩৫২ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ৩০ হাজার ২৭২ কোটি টাকার সমান। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ২ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩০ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি।
করোনার নতুন ধরন অমিক্রনে পণ্য রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। গত জানুয়ারিতে রপ্তানি হয়েছে ৪৮৫ কোটি ডলারের বা ৪১ হাজার ৭১০ কোটি টাকার পণ্য, যা গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৪১ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি। এক মাসে এটি ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি। তার আগের মাসে অর্থাৎ ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪৯০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।
চলতি অর্থবছরের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৪ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। গত অর্থবছর রপ্তানি আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ডলার।
আমরা জানি, দীর্ঘদিন ধরে একক দেশ হিসেবে তৈরি পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র। করোনায় দেশটি নাকাল। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্ত সেখানেই। সেই রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি। এর মধ্যেই দেশটিতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে। গত ডিসেম্বরে আগের বছরের একই মাসের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ৫৩ শতাংশ। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবমিলিয়ে রপ্তানি বেশি হয়েছে ৪৬ শতাংশ।
গত ছয় মাসে অন্যান্য দেশেও রপ্তানি আগের তুলনায় বেশি। তবে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। রপ্তানিকারকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য বিরোধ এর প্রধান কারণ। এই বিরোধের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও ক্রেতা চীনকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে চাইছে। দ্বিতীয় বড় কারণটি হচ্ছে- পরিবেশ বিপন্ন হতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার চীনা পদক্ষেপ। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন শিল্প উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে দেশটির উদ্যোক্তাদের। এতে দেশটির উৎপাদনশীলতা কমছে। এর ফলে ক্রেতারা রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশের দিকেও ঝুঁকছে। বাংলাদেশ এর সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। বাংলাদেশের বিশেষ সুবিধা পাওয়ারও বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম প্রতিযোগী মিয়ানমারে উত্তাল সামরিক পরিস্থিতি। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতে রয়েছে অতিমারি করোনার দীর্ঘমেয়াদি প্রকোপ।এ দুই দেশ থেকে ক্রেতাদের অনেক রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশে স্থানান্তর হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবস্থাপনা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাক কারখানার নিরাপদ পরিবেশ এবং সরবরাহ চেইনে দায়িত্বশীলতা বিবেচনায় বাংলাদেশের পোশাক খাত এখন প্রথম সারির। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এর জন্য যা যা করা দরকার, তার ব্যবস্থা করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে