তৈরি পোশাক খাত হোক দেশের নিরাপত্তামূলক বিনিয়োগ খাত

| রবিবার , ১০ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে দেশের তৈরী পোশাক খাত আবার সংকটে পড়েছে। গত ৬ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে ‘আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে গার্মেন্টস খাত’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, শ্রীলঙ্কার বেহাল দশা ও চীনের লকডাউন দেশের গার্মেন্টস খাতকে সংকটে ফেলছে। সাংহাইতে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হওয়ায় ৯ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন গার্মেন্টস কারখানার বিপুল পরিমাণ কাঁচামাল ও স্যাম্পল আটকা পড়েছে। অপরদিকে কলম্বো বন্দরে দেখা দেয়া জাহাজ ও কন্টেনার জটে আটকা পড়েছে বিপুল পরিমাণ পণ্য। ফলে দেশে কাঁচামাল আমদানি যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি তৈরি পোশাক রপ্তানিও বিঘ্নিত হচ্ছে। করোনা পরবর্তী ঘুরে দাঁড়ানো গার্মেন্টস খাত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
এ কথা আজ অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অপরিসীম। বাংলাদেশ মূলত কৃষিপ্রধান দেশ হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প স্থাপন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আর এক্ষেত্রে গার্মেন্টস শিল্পের অবদান অপরিসীম। সারা বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। রফতানি বাণিজ্যেও তৈরি পোশাক শিল্পের আছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বেকার সমস্যা সমাধান, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই শিল্প। এ শিল্পের হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে পেয়েছে নতুন পরিচিতি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে এই খাত। তৈরি পোশাক শিল্পের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেজিং ইত্যাদি শিল্পেরও ঘটেছে সম্প্রসারণ। এর বাইরেও পরিবহন, ব্যাংকিং, শিপিং এবং ইন্স্যুরেন্স সেবার চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশের তৈরি পোশাকশিল্প অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক প্রতিকূলতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে। আগামী দিনগুলোয় সম্ভাবনার দুয়ার আরো খুলে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।
যেহেতু তৈরী পোশাক খাত বেশিরভাগই চীনের ওপর নির্ভরশীল, সেহেতু চীনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি এ খাতকে বেসামাল করেছে। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের উদ্ধৃতি দিয়ে আজাদীর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন হচ্ছে বিশ্বের কারখানা। গার্মেন্টস সেক্টরের বিপুল পরিমাণ পণ্য চীন থেকে আনা হয়। সাংহাই হয়ে এসব পণ্য বাংলাদেশে আসে। বর্তমানে লকডাউনের কারণে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, সাংহাই থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি করা হয়। জিপার, বোতাম কিংবা হুক জাতীয় বিভিন্ন পণ্য চীন থেকে আনা হয়। এসব পণ্য ছোট হলেও পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া ওই পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। পুরো শার্ট বা টি-শার্ট সেলাই করে যদি বোতাম লাগাতে না পারি, প্যান্ট সেলাই করে যদি জিপার লাগানো সম্ভব না হয়, তাহলে পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব নয়। সাংহাইয়ের লকডাউনের কারণে বর্তমানে দেশের অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানা এই সংকটে পড়েছে। আবার সঠিক সময়ে কাঁচামাল না আসায় গার্মেন্টসগুলোতে পণ্য উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। এতে সঠিক সময়ে রপ্তানি পণ্য জাহাজিকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক গার্মেন্টস মালিক সময়মতো পণ্য তৈরি করতে না পারায় অর্ডার বাতিলের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
করোনা পরিস্থিতিতেও তৈরী পোশাক খাত যেভাবে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখে অগ্রসর হয়েছে, তা রীতিমত প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু চীনের সাংহাইতে লকডাউন আমাদের দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে বড় সংকট তৈরি করেছে বলে সংশ্লষ্টরা বলেছেন। স্যাম্পল ও কাঁচামাল আমদানিতে সময় লাগছে, যা স্বাভাবিক উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। নতুনভাবে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলো এই খাত। আমরা চাই দ্রুত এ সংকট কেটে উঠুক চীন এবং একই সঙ্গে পোশাক শিল্প। আমরা চাই এ দেশের তৈরি পোশাক খাত হবে সবচেয়ে নিরাপত্তামূলক বিনিয়োগ খাত। সমস্ত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে এগিয়ে যাক আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির বড় এ খাতটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে