তৈরি পোশাক : কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ফিরে আনতে হবে

| রবিবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ at ১০:৩৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) এলাকায় পোশাক রপ্তানি খাতের প্যাসিফিক জিন্স গ্রুপের বন্ধ থাকা কারখানাগুলো খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো প্যাসিফিক জিন্স, জিন্স ২০০০, ইউনিভার্সেল জিন্স, এনএইচটি ফ্যাশন, প্যাসিফিক এক্সেসরিজ, প্যাসিফিক ওয়ার্কওয়্যার ও প্যাসিফিক অ্যাটায়ার্স। এর মধ্যে প্যাসিফিক জিন্সের ইউনিট দুটি ও ইউনিভার্সেল জিন্সের ইউনিট চারটি।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা ১২() অনুযায়ী গত ১৬ অক্টোবর হতে কারখানার সকল কার্যক্রম অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। বর্তমানে, সার্বিক পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবং কারখানা খোলার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় কর্তৃপক্ষ কারখানা পুনরায় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকগণকে নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে নিজ নিজ বিভাগে উপস্থিত থেকে কর্মস্থলে শৃঙ্খলা, পেশাদারিত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম পুনরায় নির্বিঘ্নভাবে পরিচালনায় সহায়তা করার জন্য আহ্বান করা হয়েছে।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭০টি কারখানায় ৩৫০টি শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে বকেয়া বেতনভাতা আদায়ের দাবিতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শ্রমিকদের বেতনভাতা না দিয়ে কারখানা বন্ধ বা লেঅফ ঘোষণার কারণেই অধিকাংশ কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ হয়েছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের আওতাধীন আরএমজি এবং ননআরএমজি মিলে মোট ১ হাজার ৭২০টি কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় ৬ লাখ ১৩ হাজার ২৯০ জন শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে আরএমজি ৫৭০টি পোশাককারখানায় কাজ করেন ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮২ জন শ্রমিক। তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত চট্টগ্রামে স্থায়ী এবং অস্থায়ী মিলে মোট ১১৭টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এসব কারখানায় ৫১ হাজার ৬৭০ জন শ্রমিক কাজ করতেন। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে ৫০টি কারখানা, যেখানে ৮ হাজার ৭৪৩ জন শ্রমিক কাজ করতেন। বাকি ৬৭টি কারখানা অস্থায়ী হিসেবে বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানায় ৪২ হাজার ৯২৭ জন শ্রমিক কাজ করতেন। এ ব্যাপারে বিজিএমইএ প্রথম সহসভাপতি সেলিম রহমান বলেছেন, আমাদের দেশে ‘কস্ট অব ডুয়িং’ এবং ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। তাই পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ফলে লোকসান এড়াতেই মূলত মালিকপক্ষ কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে দিচ্ছে। তিনি মনে করেন, পোশাক খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে কস্ট অব ডুয়িং বিজনেসে জোর দিতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের বাজার সম্প্রসারণ প্রচেষ্টায় সরকারের উৎসাহ প্রদান প্রক্রিয়া আরো কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। মিশনগুলোকে অধিকতর বাণিজ্যবান্ধব করে তুলতে হবে। তবেই তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের যে নবদুয়ার উন্মোচিত হয়েছে তা আরো বিস্তৃত ও প্রশস্ত করা সম্ভব হবে। শ্রমঘন এ খাতটির প্রসার টেকসই করার জন্য অগ্রপশ্চাৎ সংযোগ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার উদ্যোগ গ্রহণসহ একটি জাতীয় পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। মনে রাখতে হবে, তৈরি পোশাক খাতের ওপর ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। তাই চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস বিদ্যুতের সরবরাহসহ গার্মেন্টস কারখানাগুলোকে বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া জরুরি।

বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এ খাতে ধীরে ধীরে অস্থিরতা দূর হচ্ছে, কাটিয়ে উঠছে সমস্ত সংকট। পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কারখানাগুলোতে কাজের পরিবেশ ফিরে আনতে হবে। তাঁরা বলেন, বর্তমান সরকার প্রধানের নিকট ব্যবসায়ীদের অনেক প্রত্যাশা। তাকে সারাবিশ্ব চেনে। বিশ্ব নেতারা তার পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তাঁরা বিশ্ব নেতাদের অনুরোধ করলে তারা নতুন নতুন চুক্তিতে আগ্রহী হবে। এতে সহজে বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। তবে অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসবিদ্যুতের সংকট, ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, এনবিআরের পলিসিগত সমস্যার সমাধান জরুরি। তবে ক্রেতারা এখনও পর্যবেক্ষণ করছেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অবস্থা কোন দিকে যাচ্ছে। আমরা আশাবাদী, অন্তর্বর্তী সরকার ক্রেতাদের আস্থা ফেরাতে পারবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে