তৈরি পোশাকের বাজার সম্প্রসারণে আরো উদ্যোগী হতে হবে

| রবিবার , ২৬ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৫০ পূর্বাহ্ণ

নানা সংকট ও অস্থিরতা চলছে দেশের তৈরি পোশাক খাতে। সর্বশেষ যে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক আজাদীতে, তাতে দেখা যাচ্ছে, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশ থেকে আমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়লেও কমেছে বাংলাদেশের। গতকাল ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, শ্রম অসন্তোষ এবং বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। দেশের তৈরি পোশাকখাতের সবচেয়ে বড় বাজার আমেরিকায় রপ্তানি কমতে শুরু করায় দেশের গার্মেন্টস সেক্টরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন চীন এবং মেক্সিকোর পণ্যের উপর শুল্ক বাড়ালে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে ননট্রেডিশনাল দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাড়ছে। বাজার সম্প্রসারণের বিষয়টি পুরো সেক্টরে দীর্ঘমেয়াদি একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।

এ কথা আজ অনস্বীকার্য যে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক শিল্প। দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে তৈরি পোশাক শিল্পের অবদান অপরিসীম। বাংলাদেশ মূলত কৃষিপ্রধান দেশ হলেও জাতীয় অর্থনীতিতে শিল্প স্থাপন ও শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। আর এক্ষেত্রে গার্মেন্টস শিল্পের অবদান অপরিসীম। সারা বিশ্বে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশ বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। রফতানি বাণিজ্যেও তৈরি পোশাক শিল্পের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। বেকার সমস্যা সমাধান, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই শিল্প। এ শিল্পের হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে পেয়েছে নতুন পরিচিতি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে এই খাত। তৈরি পোশাক শিল্পের সমপ্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেজিং ইত্যাদি শিল্পেরও ঘটেছে সমপ্রসারণ। এর বাইরেও পরিবহন, ব্যাংকিং, শিপিং এবং ইন্স্যুরেন্স সেবার চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ খাতের সংকট বা অস্থিরতা কখনো কাম্য হতে পারে না।

আজাদীর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় একক ক্রেতা হচ্ছে আমেরিকা। গত বছর আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলারের বেশি তৈরি পোশাক আমদানি করেছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে ৭ দশমিক দুই শূন্য বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক। কিন্তু আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ২৭ বিলিয়ন ডলার। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা ৯ দশমিক শূন্য পাঁচ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছিল। আমেরিকার অভ্যন্তরীণ বাজারে তৈরি পোশাকের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যণীয় হলেও গত তিন বছরের এই চিত্র নিশ্চিত করে যে ওই দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। প্রতিযোগী দেশগুলোর দিকে আমেরিকার ক্রেতারা ঝুঁকে পড়ায় সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি আরো কমতে পারে বলে শংকিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের অনেকেই। তাদের শংকা দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং শ্রম অসন্তোষ এবং অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সুযোগে প্রতিযোগী দেশগুলো বাংলাদেশের ক্রেতাদের সরিয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে।

তবে প্রতিবেদনে সুখবরও দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, আমেরিকায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত, কোরিয়া, চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মেক্সিকো, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, চিলি, ব্রাজিলসহ অপ্রচলিত (ননট্রেডিশনাল) দেশগুলোতে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। ২০২৪ সালে এসব দেশে বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ক্রমাগত বাজার সম্প্রসারণ এই সেক্টরে আশার আলো ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন গার্মেন্টস মালিকেরা। তারা বলেন, যত বেশি বাজার সৃষ্টি হবে ততই আমাদের কোনো বিশেষ দেশ বা অঞ্চলের উপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে।

এরকম আশার কথা প্রকাশিত হয়েছে পত্রিকান্তরেও। এতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ সময় তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা বিরাজ করলেও ক্রমশ স্থিতিশীলতা ফিরে আসছে। কারখানাগুলোতে পুরোদমে কর্মযজ্ঞ চলছে। ক্রেতাদের মধ্যেও আস্থা ফিরে আসছে। নতুন নতুন অর্ডার আসছে। ধারাবাহিকভাবে রপ্তানিও বাড়ছে। এদিকে সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট এ খাতের উদ্যোক্তাদের অনেক প্রত্যাশা। সরকার ভালোভাবে উদ্যোগ নিলে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আরও শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারবে বলে আশা তাদের।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের বাজার সম্প্রসারণ প্রচেষ্টায় সরকারের উৎসাহ প্রদান প্রক্রিয়া আরো কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে হবে। মিশনগুলোকে অধিকতর বাণিজ্যবান্ধব করে তুলতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে