মীরসরাইয়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে বোরো আবাদ। গত দুই বছরে এই উপজেলায় প্রায় ১১শত হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বেড়েছে। পাউবো নির্মিত দুটি সেচ প্রকল্প মুহুরী ও মহামায়ার সুফল পাচ্ছে কৃষক। এ ছাড়া গত আমন মৌসুমে ধানের মূল্য বেশি পাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। তবে এবার হঠাৎ ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে বেড়ে গেছে চাষাবাদ খরচ। আর তাই কৃষকদের চোখে মুখে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ।
মীরসরাই কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় ১১৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। যা ২০২০ সালের চেয়ে ৪৪০ হেক্টর বেশি। অন্যদিকে চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৬০০ হেক্টর। কিন্তু ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আবাদ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৮০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় ৬৮০ হেক্টর বেশি। ফলে বিগত দুই বছরে মীরসরাইয়ে বোরো আবাদ বেড়েছে ১১২০ হেক্টর। কৃষকরা জানান, এক সময় মহামায়া ও মুহুরী নদীর ঢলে মীরসরাই উপজেলার ওসমানপুর, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, ইছাখালী, দূর্গাপুরসহ বেশ কিছু ইউনিয়নে বোরো আবাদ হতো না। কিন্তু সরকার মুহুরী ও মহামায়া সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার ফলে উপজেলার কমপক্ষে ১০টি ইউনিয়নে বোরো আবাদ হচ্ছে।
মীরসরাই কৃষি অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, বোরো আবাদ বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৪০টি পানির স্কিম দিয়েছিল বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। কিন্তু এবার সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা পার হয়ে গেলেও সেচ কার্যক্রমের সিন্ডিকেট জমিতে সেচ দেয়ায় আগে ঘণ্টা ১০০ টাকা নিলেও এখন তা দ্বিগুণ করে ফেলেছে। আবার ট্রাক্টর মালিকরা যে জমি ২০০ টাকায় চাষ করেছেন একই জমিতে দ্বিগুণ টাকা দাবি করছেন। এ ভাবে সেচ ও চাষাবাদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি একরে আগে যেখানে দশ পনের হাজার টাকায় ও কৃষকরা চাষ করেছেন; সেখানে এখন ত্রিশ হাজার টাকারও বেশি খরচ লাগবে বলে জানান খৈয়াছরা গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর হোসাইন। আবার নানান সংকটে ১৪০টি পানির স্কিমের মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ১০০টি। ফলে বোরো চাষে ভাটা পড়তে শুরু করেছে এ অঞ্চলে। কিন্তু ২০১০ সালে উপজেলার দূর্গাপুর ইউনিয়নে মহামায়া ছরার উপর বাঁধ দিয়ে রাবার ড্যাম নিমার্ণ করে সরকার। ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি আটকিয়ে তা শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা বোরো আবাদ সহ বিভিন্ন সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন বলে জানান তারা। দূর্গাপুর ইউনিয়নের চাষি নুরুল মোস্তফা জানান, মহামায়া সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে আমরা এক দিকে পাহাড়ি ঢল থেকে রক্ষা পাচ্ছি। অন্যদিকে বোরো আবাদ করতে পানির সংকটে পড়তে হচ্ছে না। চলতি বছরে দূর্গাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে যেসব কৃষক এখন বোরো লাগাচ্ছেন তারা সংকটে পড়ে গেছেন। উপজেলার জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের দেওয়ানপুর গ্রামের কৃষক দীলিপ চন্দ্র নাথ বলেন, পানি সুবিধা থাকার কারণে বোরো চাষ করেছি। কিন্তু তেলের দাম বেশি হওয়ায় খরচ পড়বে বেশি। গত মৌসুমে কানি (১২০ শতাংশ) প্রতি পানি খরচ হয়েছিল ৩০০০ টাকা এবার ৩,৫০০ টাকা। তবে আমনের মতো মূল্য পেলে তারা কিছুটা হলে লাভবান হবেন।
মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, মীরসরাই উপজেলায় ধীরে ধীরে বোরো আবাদ বাড়ছে। বোরো চাষের জন্য পানির বেশি প্রয়োজন হয়। মহামায়া ও মুহুরী সেচ প্রকল্প থাকায় কৃষকরা পানি সংকট পূরণ করতে পারছেন। এ ছাড়া আমনের মূল্য ভালো পাওয়ায় কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী বোরো মৌসুমে আবাদ আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।