সেমিফাইনালে হেরে টানা দুইবার জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামের। তবে সে কষ্ট থেকে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছে তারা গতকাল জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে তৃতীয় স্থান অধিকার করে। কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে গতকাল শুক্রবার চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে চট্টগ্রাম ২–১ গোলে হারায় প্রতিদ্বন্দ্বী যশোর জেলা দলকে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব জাতীয় ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের এ ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল ১–১ গোলে ড্র। গতকাল শুরু থেকেই দুই দল চমৎকার পাসিংয়ের মাধ্যমে খেলতে থাকে। এমন খেলার মাঝেই ১৪ মিনিটের সময় চট্টগ্রাম প্রথম এগিয়ে যায়। ডান প্রান্ত দিয়ে একটি আক্রমণ থেকে শাহীন আলম ফাঁকা জায়গায় তানভীর হোসেনের কাছে বল পাঠান। সেখানে বক্সের ভেতরে থাকা তানভীর যশোর কিপার হৃদয় হোসেন বাবুকে পরাভূত করে (১–০)। কিন্তু এ গোলের রেশ মিলিয়ে যাওয়ার আগেই পর মুহূর্তেই কাউন্টার এ্যাটাকে উঠে যশোর জেলা দল সমতায় ফেরে। আক্রমণভাগের নাইমুর রহমান তানজিমের শট চট্টগ্রামের ক্রসবারে লেগে জালে ঢোকে (১–১)। কিছু পরে বক্সে ঢুকে তানভীরের শট বারের বাইরে দিয়ে যায়। ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামের জাহেদুল আলম সেন্টার করেন বক্সে। কিন্তু যশোর কিপার বাবু হাত উঁচিয়ে সে বল ধরে নেন। ছয় মিনিট বাদে রোমানের বাম দিকের আক্রমণ যশোর রক্ষণভাগ কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করে। এরপর রোমানের কর্ণার বক্সে পড়ে। গোলকিপার বাবুর হাত থেকে ফস্কে যায় বল। কিন্তু এ থেকে গোল করতে পারেনি চট্টগ্রামের আক্রমণভাগ। দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় যশোর কিপার বল ধরে নেন। ৩৮ মিনিটে আক্রমণে যায় যশোর। বক্সের ভেতরে থাকা স্ট্রাইকার আতিকুল ইসলামের বাম পায়ের মাটি ঘেঁষা শট চট্টগ্রাম কিপার সাদ্দাম হোসেন ঝাঁপিয়ে ধরে নেন। এ অর্ধের অতিরিক্ত সময়ে আক্রমনে উঠা যশোরের তানজিমের কাছ থেকে বল রক্ষা করেন চট্টগ্রামের সাদ্দাম হোসেন। সমতায় থাকা দল দুটি দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ প্রতি আক্রমণে মেতে উঠে। শুরুতেই আক্রমণে যায় চট্টগ্রাম। তবে যুৎসই শট হয়নি। মাঠের বাইরে চলে যায় বল। ৫১ মিনিটে যশোরের ফাহিম ফয়সাল তানভিরের শট কিপার সাদ্দাম হোসেন বাঁ দিকে ঝাপিয়ে পড়ে ধরে নেন। এদিন সাদ্দাম চট্টগ্রামের নিয়মিত গোলরক্ষক নেছারুল ইসলাম হিরুর বদলে খেলতে নামেন। ৫৯ মিনিটে যশোর দলের বদলি খেলোয়াড় রাকিবের সেন্টার বক্সে থাকা আতিকুল টোকা দিতে ব্যর্থ হন। ফলে রক্ষা পায় চট্টগ্রাম। পরপরই যশোর অধিনায়ক খোকা বাবুর শট চট্টগ্রামের সাদমান সাকিব রিয়াদ কর্ণারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। বদলি রাকিবের শটও সাদ্দাম ঝাঁপিয়ে ধরে নেন। ৬৮ মিনিটে রাইট উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে চট্টগ্রাম। কিন্তু বক্সে সুমন টোকা দিতে ব্যর্থ হলে গোল বঞ্চিত হয় চট্টগ্রাম। ৭৪ মিনিটে রাইট উইং দিয়ে আক্রমণে উঠে চট্টগ্রামের বদলি আবদুল্লাহ নোমান দীপু। তিনি বল বাড়ান বক্সে। সে চলতি বলেই ব্যাকভলিতে বল কোনাকুনি জালে জড়িয়ে দেন চট্টগ্রামের জাহেদুল আলম। চট্টগ্রাম এগিয়ে যায় ২১ গোলে। চোখ ধাঁধানো, দৃষ্টিনন্দন এবং অনবদ্য ছিল জাহেদুলের এ গোলটি। ৮২ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে জাহেদুলের আরেকটি শট গোলবারের সামান্য উপর দিয়ে চলে যায়। তার আগে জাহেদুলের একটি মাটি ঘেঁষা শটও কিপার ধরে নেন। পরপরই যশোরের বদলি জিম হোসেনের হেড বাইরে চলে যায়। দু’মিনিট বাদে জাহেদুল আবারো সুযোগ পান। কিন্তু ফাঁকায় থেকেও বল ঠিকমত রিসিভ করতে না পারায় গোল মিস করেন তিনি। এরপর দুবার যশোর আক্রমণে উঠে।
একবার কর্ণার বিনিময়ে চট্টগ্রাম রক্ষা পায়। বাকিটিতে চট্টগ্রামের রক্ষণভাগ বিপদমুক্ত করে। শেষ দিকে চট্টগ্রামের রোমান বক্সে ঢুকে গেলেও প্রতিপক্ষের রাশেদ হাসানের বাধায় শট নিতে পারেননি। যোগ করা পাঁচ মিনিটে যশোরের চেষ্টা চট্টগ্রাম সফলভাবেই সামাল দিলে তৃতীয় স্থান লাভের গৌরব নিয়েই মাঠ ত্যাগ করে মনি–নাজুদের দল। গতকাল ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন বিজয়ী চট্টগ্রাম জেলা দলের জাহেদুল আলম। চট্টগ্রামের এ বিজয়ের জন্য চট্টগ্রামবাসী এবং চট্টগ্রাম জেলা ফুটবল দলের সকল খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলের পক্ষ হতে ম্যানেজার সারওয়ার আলম চৌধুরী মনি।











