তৃতীয় স্ত্রীর সহায়তায় চতুর্থ স্ত্রীকে খুন

আশ্রয় দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে, দেড় বছর পর ধরা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১০ নভেম্বর, ২০২১ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

তৃতীয় স্ত্রীর সহায়তায় চতুর্থ স্ত্রীকে খুন করে আশ্রয় নিয়েছিলেন খুনি দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে। দেড় বছর পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাঁচতে পারলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের পাতা ফাঁদে ধরা পড়লেন সোহাইল আহমেদ ও সহায়তাকারী তার তৃতীয় স্ত্রী নাহিদা আক্তার। চাঞ্চল্যকর এ খুনের রহস্য উন্মোচন করে হালিশহর থানা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করে গ্রেপ্তারকৃত সোহাইল ও নাহিদা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানান সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) পঙ্কজ দত্ত। নিহত আফসানা পতেঙ্গা থানার ডুরিয়া পাড়া এলাকার মনিরের বাড়ির মোহাম্মদ হোসেনের মেয়ে।
গত বছরের ২১ জুলাই নগরীর হালিশহর রহমানবাগ আবাসিক এলাকার একটি ভাড়া বাসার কক্ষ থেকে তালা ভেঙে মুখ বিকৃত অবস্থায় পচতে শুরু করা ২৫ বছর বয়সী এক মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় ওই নারীর স্বামীর দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ছাড়া কোনো ক্লু ছিল না পুলিশের কাছে। সেখানে নিজের নাম গোপন করে রেজাউল করিম বলে পরিচয় দিয়েছিলেন সোহাইল।
লাশ উদ্ধারের পর থেকেই স্বামীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তিনি একের পর এক সিম বদলিয়ে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে থাকেন। দেড় বছর পর অজ্ঞাত সেই নারীর স্বামীকে শনাক্ত করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বাগেরহাটের মংলা থেকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্য অনুসারে তৃতীয় স্ত্রীকে পতেঙ্গা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গার্মেন্টসে চাকরির সুবাদে সোহাইলের সাথে আফসানার পরিচয় হলে তারা ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে বিয়ে করে হালিশহরে একটি ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করেন। বিয়ের আগে আফসানা জানতে পারেননি, সোহাইল আরও তিনটি বিয়ে করেছেন। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। দ্বিতীয় স্ত্রী নাসিমাকে বাগেরহাট, তৃতীয় স্ত্রী নাহিদাকে নগরীর পতেঙ্গায় এবং চতুর্থ স্ত্রী আফসানাকে হালিশহরে বাসা ভাড়া করে রেখেছিলেন। নিজে চারটি বিয়ে করলেও চতুর্থ স্ত্রীর চালচলনে সন্দেহ হওয়ায় প্রায়শই আফসানার সাথে ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত সোহাইলের। এর জের ধরে ২০২০ সালের ২১ জুলাই তাকে হত্যা করেন তিনি। ঘটনায় সময় তার তৃতীয় স্ত্রী নাহিদা উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।
সিএমপির উপ-কমিশনার (পশ্চিম) আবদুল ওয়ারিশ খান আজাদীকে বলেন, ঘটনার দিন রাতে সোহাইল আফসানাকে ব্যাপক মারধর করে। তার আগে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সোহাইল তার তৃতীয় স্ত্রী নাহিদাকে ঘটনার চার দিন আগে ১৬ জুলাই পতেঙ্গার বাসা থেকে ডেকে আনে। এ ঘটনার সঙ্গে নাহিদাও হাত মেলায়। ২১ জুলাই রাতে ব্যাপক মারধরের এক পর্যায়ে আফসানা অজ্ঞান হয়ে যায়। আফসানার মৃত্যু নিশ্চিত করতে সোহাইল আফসানার পরনের পায়জামা গলায় প্যাঁচ দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে তার লাশ বিছানার চাদরে মুড়িয়ে রান্নাঘরে রেখে বাগেরহাট পালিয়ে যায়। ওই বাসার কেয়ারটেকার মো. নুর নবী এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মরদেহ উদ্ধার করলেও পুলিশ সে সময় তার পরিচয় জানতে পারেনি। তদন্তে নেমে ১৬ মাসের মাথায় পুলিশ ওই তরুণীর পরিচয় শনাক্ত করে। জানা যায় তার নাম লাকী আক্তার পিংকী ওরফে আফসানা।
ডবলমুরিং জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফ হোসেন বলেন, খুনের পর সোহাইল কিছুদিন নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরে আত্মগোপন করে থাকে। এরপর সে বাগেরহাটের মংলা থানার মিঠাখালীতে দ্বিতীয় স্ত্রী নাসিমার বাসায় অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তারের পর জানা যায়, তার নাম রেজাউল করিম নয়, তার আসল নাম সোহাইল। তার ছবি সংগ্রহের পর বাসার কেয়ারটেকার নূর নবীকে দেখালে সে তাকে আফসানার স্বামী হিসেবে শনাক্ত করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্দর টোল রোডের ফ্লাইওভারের পিলারে ‘ফাটল’
পরবর্তী নিবন্ধদুর্নীতিতে দণ্ডিত সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা