তৃণমূলের বড় সাংবাদিক ও শিক্ষা সংগঠক জালালউদ্দিন আহমদ

নাসিরুদ্দিন চৌধুরী | সোমবার , ১২ আগস্ট, ২০২৪ at ৬:৫২ পূর্বাহ্ণ

তৃণমূল বা গ্রামীণ সাংবাদিকতার শেষকথা মোনাজাতউদ্দিন। দক্ষিণ চট্টগ্রামে জালের মত ছড়িয়ে থাকা খালনদীনালাস্থলপথ এবং করলডেঙ্গা, কেলিশহর, হাইদগাঁও, কাঞ্চননগর, লালুটিয়া, ধোপাছড়ি, বান্দরবান, চুনতির ঢালার বন্ধুর পার্বত্য পথ মাড়িয়ে সংবাদের অন্বেষণে ছুটে বেড়াতে দেখেছি সাতকানিয়ায় সৈয়দ মোস্তফা জামাল ও সৈয়দ মাহফুজুন্নবী খোকন, অবিভক্ত পটিয়ায় জালালউদ্দিন আহমদ (পটিয়া সদর), জাফর আলী হিরু ও আবুল কালাম শামসুদ্দীন (দোহাজারী), চকরিয়ায় মাহমুদুর রহমান ও এনামুল হক কাশেমী, কক্সবাজারে নুরুল ইসলাম, বদিউল আলম, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, শামসুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, আতহার ইকবাল, বেলাল, তোফায়েল আহমদ, অঞ্জন কুমার সেন, হেলালউদ্দিন চৌধুরী, আনোয়ারায় সৈয়দ নুরুল হুদা, রাঙামাটিতে মকছুদ আহমদ, আবদুর রশিদ, সুনীল কৃষ্ণ দে, নিরুপা দেওয়ান, বান্দরবানে আফাজউল্লাহ খান, খাগড়াছড়িতে তরুণ ভট্টচার্য্য এবং আরো যাঁদের নাম আমি বিস্মৃত হয়েছি তাঁরা। তৃণমূল সাংবাদিকতায় এঁরা প্রত্যেকেই কমবেশি অবদান রেখেছেন। তৃণমূলের সাংবাদিকদের মধ্যে পটিয়ার জালালউদ্দিন আহমদ বিশিষ্টতার দাবিদার। সাংবাদিকতা পেশা গ্রহণ করার পর থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি সাংবাদিকতাতেই কাটিয়ে গেছেন। নিজে সাংবাদিকতা করেছেন, আরো অনেককে সাংবাদিকতা পেশায় আসতে আগ্রহী করে তুলেছেন। সাংবাদিকতা করতে করতে নিজে যেমন উৎকর্ষের শিখরে উপনীত হয়েছেন, তেমনি নবীন সাংবাদিকদের সংবাদ সংগ্রহ ও সংবাদ লেখার কলাকৌশল শিখিয়ে তাদের দক্ষ সাংবাদিক বানিয়েছেন।

পটিয়ার জালালউদ্দিন আহমদ আমাদের ছেড়ে তাঁর প্রভুর কাছে প্রস্থান করার পর খুব বেশি সময় গত হয়নি। ইতিমধ্যে তাঁকে আমরা ভুলে গেছি। পটিয়া গ্রামীণ সাংবাদিকতার গুরু ছিলেন তিনি, হাতে কলমে সাংবাদিকতা শিখিয়েছেন অনেক সাংবাদিককে। তাঁরাও স্মরণ করেন বলে মনে হয় না তাঁকে। আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন তিনি, আওয়ামী লীগও কী তাঁকে মনে করে তাঁর জন্মমৃত্যু দিবসে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে? মনে হয় না। পটিয়ায় খলিলুর রহমান শিক্ষা কমপ্লেক্স তাঁর হাতে গড়া; কমপ্লেক্সভুক্ত স্কুলকলেজে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য বাৎসরিক কোন শোকানুষ্ঠান হয় বলে আমি শুনিনি। আমার এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, জালাল সাহেব না হলে খলিলুর রহমান সাহেব, যত টাকাই তাঁর থাকুক না কেন, পটিয়া সদরে এত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তিনি করতে পারতেন না।

বড়লোকেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্যোগ নেন, শিক্ষাব্রতী, সমাজহিতৈষীরা গায়ে গতরে খেটে তাদের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার প্রাথমিক কৃতিত্ব অবশ্যই উদ্যোক্তা বড়লোকের। কিন্তু যে শিক্ষাব্রতী, সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেন, তারপর তাঁকেই কৃতিত্ব দিতে হয়। খলিলুর রহমান শিক্ষা কমপ্লেক্স গড়ে তোলার জন্য কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমডি আলহাজ খলিলুর রহমান অবশ্যই কৃতিত্বের দাবিদার। পটিয়ার প্রান্তবর্তী গ্রাম সাঁইদাইর থেকে এসে তিনি যে পটিয়া সদরে এতগুলি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিলেন, সেজন্য তাঁকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কিন্তু সাংবাদিক জালাল সাহেব যে তাঁর সহযোগির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে এতগুলি প্রতিষ্ঠান গড়ে দিলেন, সেজন্য তিনি কি পেলেন? সমাজ তাঁকে কি দিলো?

বস্তুত রাজনীতি, সাংবাদিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজকর্মে পটিয়ার উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন জালালউদ্দিন আহমদ। তাঁর প্রতিভা নানাদিকে আকৃষ্ট হয়েছিলো, যখন যেদিকে তিনি প্রতিভাকে কর্ষণ করেছেন, মুঠো মুঠো সোনা ফলেছে। সাংবাদিকতা ছিলো তাঁর পেশা, অন্যসব নেশা। সাংবাদিকতায় পটিয়ায় তাঁর জুড়ি কেউ ছিলো না। শুধু পটিয়া কেন, গোটা দক্ষিণ চট্টগ্রামেও সাংবাদিক সমাজে তিনিই ছিলেন রাজাধিরাজ। রূপেও তিনি রাজপুত্রের মতোই ছিলেন। এমন রূপবন্ত গুণবন্ত মানুষ সম্ভবত আর দেখেনি পটিয়া। মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, কালীশংকর চক্রবর্তী, মহিমচন্দ্র দাশ, অম্বিকাচরণ দাশ, নুরুল ইসলাম চৌধুরী, হাবিবুর রহমান খান, মোহাম্মদ ইউসুফ, অরুণ দাশগুপ্ত প্রমুখ চট্টগ্রামের সব দিকপাল সাংবাদিকইতো পটিয়ার মানুষ। কিন্তু পটিয়ায় জন্ম বা বর্ধিত হলেও তারপরে তাঁরা সবাই চট্টগ্রাম শহরেই বসবাস করেন। একমাত্র জালাল সাহেবই ব্যতিক্রম, যিনি বয়সকালেও জন্মস্থান পটিয়া ছেড়ে যাননি। জালাল সাহেব সাংবাদিকতা করেছেন পটিয়ায়, ফলে তিনি সাংবাদিক হিসেবে কত বড় ছিলেন বা কত বড় হতে পারতেন, সেটা নির্ণয় করার কোনো উপায় তিনি রাখেননি। আমি নিশ্চিত তিনি চট্টগ্রাম শহরে বা ঢাকায় গিয়ে যদি সাংবাদিকতা করতেন, তাহলে পটিয়ার বড় বড় সাংবাদিকদের সঙ্গে একাসনে তাঁর স্থান হতো।

তবে তিনি পটিয়ায় অবস্থান করে সাংবাদিকতা করার কারণে আমরা একদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও অন্যদিক থেকে আমাদের লাভও কম হয়নি। পটিয়ায় আজ যে সাংবাদিকতার জমজমাট হাট পরিদৃষ্ট হয়, অর্ধশতাধিক বছর পিছিয়ে গিয়ে যদি দৃষ্টিপাত করা যায়, তাহলে দেখা যাবে তখন একাই তিনি পটিয়ায় কলম পিষে সাংবাদিকতার জমি প্রস্তুত করছেন। জালাল সাহেবকে পটিয়ার সাংবাদিকদের অভিভাবক বা পিতৃস্থানীয় ব্যক্তিত্ব বললেও অত্যুক্তি হয় না। মফস্বল সাংবাদিকতা বা গ্রামীণ সাংবাদিকতা যাই বলি না কেন, জালালউদ্দিন আহমদকেই তার গুরু মানতে হয়। শুধু পটিয়া নয়, দক্ষিণ চট্টগ্রামকেও যদি বিবেচনায় নিই, তাহলেও আমার বক্তব্যের হেরফের হবে না।

সাতচল্লিশে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরের মাথায় ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানের রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের জন্মের দু’বছর পরে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন (১৯৫৪), ৬২’র রক্তাক্ত ছাত্র আন্দোলনে উত্তপ্ত আবহাওয়ায় জালাল সাহেবের শিশুকিশোরকাল অতিবাহিত হয়েছে। ফলে ছাত্র জীবনেই রাজপথে রাজনীতির পাঠ গ্রহণ করেন তিনি। পরবর্তীকালে বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিক হিসেবে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। সেসময় তিনি ছাত্রলীগের নেতা, পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগের নেতৃপদে বৃত হন। তিনি পটিয়া তথা দক্ষিণ চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের একজন বিশিষ্ট নেতা ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সহসভাপতি হিসেবে মৃত্যু পর্যন্ত রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

সাংবাদিকতা ও রাজনীতিতে পাকাপোক্ত হয়ে তাঁর জীবনসূর্য যখন মধ্যগগনে প্রচণ্ড তেজে জ্বলজ্বল করছিলোসেই সময় তাঁর চরিত্রে শিক্ষানুরাগ প্রকাশ পায়। পটিয়ায় শিক্ষা বিস্তার, বিশেষত শিশু ও নারী শিক্ষার প্রসারের জন্য তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন যার ফলে গড়ে উঠেছে খলিলুর রহমান শিক্ষা কমপ্লেক্স।

এসব কথা পরে আরো সবিস্তারে বলা যাবে। আপাতত তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের কিছু তথ্য আহরণ করা যাক।

জালালউদ্দিন আহমদ ১৯৪৯ খিস্ট্রাব্দের ১৯ জানুয়ারি পটিয়া সদরে গোবিন্দরখীল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আবদুল কবির, মাতা মাবিয়া। পিতামাতার একমাত্র ছেলে তিনি।

তিনি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে এ.এস, রাহাত আলী হাই স্কুল থেকে এস.এস.সি, ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে স্যার আশুতোষ কলেজ থেকে এইচএসসি ও ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে ডিগ্রি পাস করেন। এরপর জালাল উদ্দিন চট্টগ্রাম আইন কলেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি নেন।

জালালউদ্দিন যখন কানুনগোপাড়া কলেজে অধ্যয়ন করছিলেন, তখন বঙ্গবন্ধু চট্টগ্রাম থেকে ৬ দফা ঘোষণা করার পর ৬ দফার ভিত্তিতে দেশে ভিন্নধমী একটি রাজনীতি যাকে বলা যেতে পারে বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাজনীতি, জালালউদ্দিন সেই রাজনীতির মধ্যে আত্মার মুক্তি খুঁজে পেয়েছিলেন। তাঁর নিজের মধ্যে তিনি বাঙালি চেতনার শিহরণ অনুভব করেছিলেন এবং ৬ দফার ভিত্তিতে কলেজে নতুন করে ছাত্ররাজনীতি সূচিত হলে জালাল তাতে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সঁপে দিয়েছিলেন। ৬৯এর গণঅভ্যুত্থান হতে না হতে জালাল পটিয়ার চলে আসেন এবং পটিয়ায় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে আন্দোলনসংগ্রামে অংশ নিতে থাকেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের তাঁর এলাকা থেকে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন। জালাল উদ্দিন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

৭০এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নিরংকুশ সংখ্যগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হলেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণরায় না মেনে টালবাহানা শুরু করে এবং একাত্তরের ৩ মার্চ ঢাকায় সংসদ অধিবেশন ডেকেও ১ মার্চ স্থগিত ঘোষণা করলে সমগ্র বাংলাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারপর ২৫ মার্চ পর্যন্ত সারা বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন চলে।

১৯৭১এর ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে চট্টগ্রামের বিদ্রোহী বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইপিআর সৈন্যরা পটিয়া চলে আসে। পটিয়ার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে জালাল ইপিআর বেঙ্গল রেজিমেন্টের থাকাখাওয়ার ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত হন।

পাকিস্তানীদের হাতে পটিয়ার পতনের পর জালালউদ্দিন আত্মগোপন করে পটিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত করার কাজে নিয়োজিত হন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন বিশিষ্ট সংগঠক ছিলেন। নয় মাস ব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের নানা কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিলেন। পাকিস্তানীদের আসন্ন পরাজয় ও মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিরোধ্য গতি দেখে পুলিশ প্রশাসন পালিয়ে গেলে তিনি থানার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি স্বাধীনতার পর কিছুদিন পটিয়া থানার প্রশাসক ছিলেন।

ওদিকে ৬৯এ লেখাপড়ার পাট চুকে যাবার পর জালালকে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য উপার্জনের পথ ধরতে হয়েছিলো। জীবিকা হিসেবে তিনি সাংবাদিকতা পেশাকে বেছে নিলেন। তিনি জাতীয় আঞ্চলিক দৈনিক আজাদী পটিয়া প্রতিনিধিত্ব হিসেবে সাংবাদিকতা করেন।

মফস্বল সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। পদে পদে ঝুঁকি, নিরাপত্তাহীনতা। এমনি অবস্থায় জনাব জালাল গ্রামে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠিত করে তাদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। সেজন্য গঠন করেছিলেন সাংবাদিক সমিতি। সাংবাদিকদের মর্যাদার জন্য প্রেস ক্লাব গঠন করেন এবং প্রেস ক্লাবের জন্য কোথাও জায়গা না পেয়ে নিজের ঘরেই জায়গা করে দিয়েছেন। তিনি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, কেন্দ্রিয় কমিটির সহ সভাপতি এবং ২০০২ খ্রিস্টাব্দ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া চর্চার ক্ষেত্রকে বিকশিত করার জন্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে পটিয়া ক্লাবকে আধুনিক রূপ দেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান পাবলিক লাইব্রেরীকে বড় পরিসরে রূপান্তরিত করেন। তিনি পটিয়া সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং আদালত জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। উল্লেখ্য, ১২ মার্চ, ২০১১ খ্রিস্টাব্দে, এই মসজিদের খতীব নিয়োগের বিষয়ে সভায় মিলিত হওয়ার জন্য পটিয়া থেকে শহরে আসার পথে তিনি কর্ণফুলী ব্রিজের নিকট গাড়িতে স্ট্রোক করে মারা যান।

জালাল উদ্দিন বিদ্যোৎসাহী ছিলেন। জীবনের একটা পর্যায়ে শিক্ষার প্রতি তাঁর অনুরাগ প্রবল হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শশাংকমালা প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদে আসীন ছিলেন। এছাড়া হযরত শাহচান্দ আউলিয়া আলিয়া মাদ্রাসা কমিটির সদস্যও ছিলেন। পটিয়ায় শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি আরো বড় কাজ করেছেন সেটি হলো কেডিএস গ্রুপের শিশু নিকেতন দিয়ে শুরু করে ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে প্রতিষ্ঠাতা শিল্পপতি খলিলুর রহমানকে দিয়ে পটিয়ায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। খলিলুর রহমান সাহেবও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার কথা ভেবেছিলেন কিন্তু তাঁর ভাবনাকে বাস্তবে রূপদান করার জন্য একজন সংগঠকের প্রয়োজন ছিলো। জালাল উদ্দিন সেই প্রয়োজনটাই পূরণ করেছিলেন। খলিলুর রহমান হয়তো একটা প্রতিষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন তিনি তাঁকে আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে উৎসাহ ও প্রেরণা যোগান। ফলে একের পর এক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হলো। বস্তুত ঈর্ষণীয় গুচ্ছ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে খলিলুর রহমান শিক্ষা কমপ্লেক্স গড়ে তোলা তার এক অসাধারণ কাজ।

২০০২ খ্রিস্টাব্দে খলিলুর রহমান মহিলা কলেজ শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে পুরস্কৃত হয়। সেদিন জালাল যে কতো খুশী হয়েছিলেন তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। শুরুতে কিন্ডারগার্টেন, তারপর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তারপর মহিলা ডিগ্রি কলেজ। পাশাপাশি সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা ও বিকাশের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন খলিলুর রহমান সাংস্কৃতিক একাডেমী, ক্রীড়া ও গার্লস গাইড, প্রক্রিয়াধীন রেখে গেছেন একটি কারিগরি স্কুল এন্ড কলেজ।

লেখক : সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতি সংগঠক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅন্তর্বর্তী সরকার : জনগণের প্রত্যাশা পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে সিপিপি টিম লিডারদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ