তুষ্টির সন্তুষ্টি

রাজু আহমেদ | সোমবার , ২৪ জুন, ২০২৪ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

ভালোবাসাও কখনো কখনো অত্যাচারের পর্যায়ে পৌঁছে! ভরা পেট অথচ দু’চামচ তরকারি চাপিয়ে দেয়াও মানিয়ে নেয়া যায় কিন্তু পছন্দরুচি চাপিয়ে দিলে সেটা নাভিশ্বাস বাড়ায়! আমার ইচ্ছাতেই সব হবেযৌথ চলায় এমন মনোভাব হানিকর! বাহিরের উত্তাপের সমান বেদনার তাপে দহন ভেতরেও চলছে তবুও না বলতে পারার যে বেদনা সেটা জীবনটাকে বিষিয়ে তোলে! কিছুই ভালো লাগে না কিংবা পালিয়ে যাওয়ার যে ইচ্ছা মনের মাঝে জাগে সেটার খোঁজ রাখার মানুষটিকে যত্নবান হতে হয়! তবেই জীবন রঙেরঙে সাজে।

অনেক সম্পদেও মানুষ ধনী হয় না বরং যেটুকু আছে, যা পেয়েছে তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারলে তবে সেই ধনী! অপ্রাপ্তির দীর্ঘশ্বাসে জীবন ফুরিয়ে গেলে ভালোলাগাগুলো পুড়ে পুড়ে যাবে। ক্ষয়ে যাওয়ার পলেস্তরার মত বিবর্ণ হবে জীবন! বিশ্বাসভরসা যেদিন ভেঙে যাবে সেদিন বাঁচার ইচ্ছাটুকুন মরেই যাবে! হাপিত্যেশ করে ভালো থাকা যায় না! সেজেগুজে কৃত্রিম হাসি ধরে রাখলেই সুখী হওয়া হয় না! সুখের বেশ দেখিয়ে বেড়ানো আর আসলেই সুখী হওয়াদু’য়ের মাঝে যোজনের তফাৎ! প্রয়োজনের ভালোবাসা আর প্রিয়জনের ভালোবাসার মধ্যে তফাৎ করা না গেলে বৃষ্টির পানিতে চোখের জল লুকাতেই হবে! অন্যখাতের দোষ তখন কাজলের ঘাড়ে চাপবে!

চাপিয়ে দেয়া আর মানিয়ে নেয়ার মধ্যে যে সংঘাত তা ঘর পাল্টানো মানুষগুলো জানে! আদায় করা আর জয় করে নেয়ার মাঝে যে তফাৎ তা সম্পর্ক বদলে যাওয়া মানুষগুলো মানে। লোভ কিংবা অহমিকা, ভোগ কিংবা দাম্ভিকতা মানুষকে ভালোবাসার কাতার থেকে ছিটকে ফেলে দেয়! তখন মানুষ আর ন্যায্যনীতির ভাতার থাকে না। দমন করা কিংবা চেপে রেখে প্রেম দেখানো, আড়ালে নিন্দা করা কিংবা খোঁটা দিয়ে উপকার জানানো, আড়ালে ক্ষতি করা কিংবা হিংসা করা মানুষগুলো প্রিয়জনের আসনে খুব বেশিদিন থাকে না। ক্ষতের খতিয়ান আলো দেখেই!

কে আমাকে ভালোবাসে আর কে আড়ালে আমাকে ঘিরে হাসেএই অঙ্ক মেলাতে যেন সময়ের অপচয় না করে ফেলি! যারা হাসবে তারা হারিয়ে যাবে। তবে যারা ভালোবেসে আসবে তারা হৃদয়মাঝে অনন্তকাল থেকে যাবে। আমিও যাতে কারো হৃদয় মাঝে জায়গা পাই সেই চেষ্টায় বাধা না আসুক। পেশা বলতে শ্রেষ্ঠত্বের কিছু নাই, মানুষ শ্রেষ্ঠতমমহোত্তম হয়। শোষন করে, দমন করে, পীড়ন করে কিংবা ঘৃণা ছড়িয়ে কেউ কারো ভালোবাসায় থেকেছেসেটা অসম্ভব। অন্যের দরদ বুঝলে তবেই দরদ আশা করা যায়!

যারা পেয়েছে সম্পদ অথচ পায়নি সুখ কিংবা যার সম্পদহীনতার মাঝেও সুখ ছিল তাদের কে ধনী তা নির্ধন বিচার করতে পারবে না! একজন লোভী ব্যক্তির কাছে অপার্থিব সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা চাওয়া, পূর্ণিমার আকাশ দেখাএসব অকাজকুকাজ! তবে যে নিজেকে চিনেছে, জেনেছে সুন্দর ও সত্যের সংজ্ঞা তার কাছে বইয়ের পৃষ্ঠার মূল্য আছে! যে একাকীত্বের শ্রেষ্ঠ দিকটি দেখেছে তাকে হতাশা কেড়ে নেয়নি বরং কুয়াশার সৌন্দর্যে বিমোহিত করেছে। যার কাছে পেশার চেয়ে মানুষ পরিচয়টি বড়, যার কাছে মানুষের বাহ্যিকতার চেয়ে চিন্তার পরিশুদ্ধি আকর্ষণীয় তাকে দুঃখী করবেএমন সাধ্য কার? একফোঁটা সুখের জন্য একগুচ্ছ অনল নীরবে সহ্য করে সফল হওয়া আত্মারাই মহাত্মা হয়ে উঠেছেন!

অতীতে সদাচার রেখে আসলে বর্তমান মসৃণ হবে। আজকের প্রতিবিম্বিত রূপই আগামী! আপনি যেমন চিন্তা ও চরিত্রের সমগ্র পৃথিবীটাকে আপনার সামনে তেমন পাবেন! কমেপ্রামাইজ করতে পারলে, বিশ্বাস জিইয়ে রাখলে কিংবা চাহিদার পরিধি কমালে আপনার সুখের পরিসর ব্যাপৃত হবে। হতাশার যন্ত্রণায় নিমজ্জিত হলে জীবন আপনাকে টেনে তুলবে না। তুষ্টির পারদ সাধ্যের মধ্যেই সর্বোচ্চ রাখতে হবে। যার লোভ লম্বা তার জগৎ ও জীবনের ওপরে ক্ষোভ তত দীর্ঘ! অল্পায়ুর জীবনে অল্প চাওয়ায় চলতে শিখুক। ভালোবাসা তখন অত্যাচার হবে না বরং উপভোগ্য হবে! জীবন রঙ হারাবে না বরং বর্ণিল বৈচিত্র্যে ভরপুর হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমান
পরবর্তী নিবন্ধমহাসড়কে ওভার স্পিড, সীতাকুণ্ডে এক সপ্তাহে ২৩ মামলা