‘কোনো কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারি/প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয়ী লক্ষ্মী নারী।… ইতিহাস স্বীকার করেছে, সভ্যতা স্বীকার করেছে নারী শক্তির কথা। এই শক্তি যুগে যুগে বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়েছে। কখনো মা, কখনো বোন, কখনো বন্ধু, কখনো ভয়ংকরী রুদ্র মূর্তি রূপে। নারী নিজ চেষ্টায় শত বাধা পেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। তবে তার সংখ্যা খুবই নগণ্য। শৈশব থেকে বাবার শাসন, ভাইয়ের চোখ রাঙানো, বড়দের হিতোপদেশ শুনতে শুনতে কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ করে একজন মেয়ে। এবার পথ চলতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয় পদে পদে। স্বাধীনভাবে স্বপ্ন দেখার আশা মুহূর্তেই অস্তমিত সূর্যের মত ডুবে যায়। ওত পেতে থাকা পশুদের কবল থেকে রক্ষা করতে, সম্মান বাঁচাতে পরের ঘরে চিরতরে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধনে বেঁধে দেয়া হয়। সে যে একটা মানুষ, তারও যে পছন্দ/অপছন্দ আছে, সে বোধটুকু সম্মান বাঁচানোর তাগিদের কাছে হেরে যায়। তার চোখেও যে স্বপ্ন বুননের পশরা চলছে সে কথা কেউ খেয়াল রাখে না। বাবা-মা সন্তানকে খুব ভালবেসে তড়িঘড়ি চালান করে দেন উচ্চবংশ বা অভিজাত পরিবারে। তাদের কথার অন্যথা হলেই স্নেহ- ভালবাসা নামক ভোজ্য পদার্থটি অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়। পরিবারের সবাইকে খুশী রাখতে গিয়ে নিজের খুশিগুলো, স্বপ্নগুলোর এক এক করে সলিল সমাধি হতে থাকে। শ্বশুর শাশুড়ির সেবাযত্ন, সন্তানের দেখা শোনা, আত্মীয় স্বজনের আতিথেয়তা, সর্বোপরি স্বামী নামক মানুষটিকে সর্বদিক থেকে সুখী করার অভিনব যুদ্ধে জয়ী হতে নিজেকে যন্ত্রে পরিণত করে। গতানুগতিক কাজের এদিক ওদিক হলেই সন্তান ও স্বামীর চেহারায় ভালবাসা নামক ভোজ্য পদার্থটি আবারও অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়। এই পৃথিবী মায়া- মোহে সৃষ্টি। তাই সমাজ- সংসার কে বাঁচাতে মোহকেই ভালবাসা মনে করে নারীরা হাসিমুখে সহ্য করে এগিয়ে চলেন। মহীয়ান-মহীয়সীগণ নারীকে সম আসনে মর্যাদা দেয়ার লড়াই করে গেছেন। আংশিক সফলও হয়েছেন।
তবে অধিকাংশ নারী এখনো নাটক- সিনেমার চরিত্রের মতোই রয়ে গেছেন।কালের পরিক্রমায় আজ পর্যন্ত সভ্য সমাজে নারীর অস্তিত্বকে যথাযথ সম্মান সহকারে স্বীকার করার মতো মনোবৃত্তি হয়ে উঠেনি। তবুও নারীরা স্বপ্ন দেখে, কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গার দুঃখে পাথর হয়। তবুও নারীরা ভালবাসে, কিন্তু মোহাবিষ্ট কপট চেহারা গুলো দেখে অবাক হয়! তবুও নারীরা থেমে থাকে না। বন্ধ দরজা দেখে থমকে যায় না। সাহস নিয়ে জানালা খুলে দেয় ভোরের সূর্য দেখবে বলে।
কেননা, ততদিনে সে বুঝে যায় তাকে কেউই পরিপূর্ণভাবে ভালবাসে না। তার একটাই পরিচয়- ‘সে শুধুই নারী মাত্র’।