তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন?

শিউলী নাথ | বৃহস্পতিবার , ১ জুলাই, ২০২১ at ৭:০৭ পূর্বাহ্ণ

‘পাঁচ জনে পারে যাহা, তুমিও পারিবে তাহা/ পার কী না পার কর যতন আবার/ একবার না পারিলে দেখ শতবার’। কবি কালী প্রসন্ন ঘোষ তাঁর কবিতায় যে চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের কথা বলে গেছেন, বাস্তবে আমরা করছি তার উল্টোটা। আমরা কবিতার ঐ লাইনগুলো প্রতিফলন ঘটিয়েছি শুধু ব্যক্তিস্বার্থে। বৈশ্বিক মহামারী যখন প্রতিটি দেশকে সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে তখনও একশ্রেণির ‘আমরা’ আমাদের নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। গত জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে বলতে গেলে বাংলাদেশ প্রায় করোনাশূন্য হতে চলেছিল। ঠিক তার আগে আমরা এতটাই বেপোরোয়া জীবন যাপন করেছি তা কল্পনাতীত। হঠাৎ করেই জনজীবন মুখর হয়ে উঠেছিল।পাশের বাড়ির ওরা বেড়াতে গেছে এবার আমাদের যেতে হবে! বন্ধুরা সব সমুদ্র সৈকতে যাচ্ছে আমি-ই বা বাদ থাকি কেন? আত্মীয়রা বিদেশ ঘুরে এসেছে এবার আমরাও ঘুরে আসি! আজ ঐ দলের সভা, অনুষ্ঠান ইত্যাদি চলছে কাল আমাদেরও করতে হবে! মোট কথা- পাঁচজনে পারলে আমাকেও পারতে হবে। এক ধরণের নীরব প্রতিযোগিতা যেন! অথচ চলমান জীবনের সাথে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব যে যুক্ত হোল তা সকলেই ভুলে গেছে। অনলাইনে ক্লাস করা ছেলেমেয়েদের একঘেয়েমি দূর করতে বাবা মায়েরা বেড়াতে নিয়ে গেছেন সমুদ্রে বা পাহাড়ে, রেস্টুরেন্টে বা দূরে কোথাও! অথচ এসব ছেলেমেয়েদের জীবন বাঁচাতে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছেন। অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই মহামারীতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আমাদের “শিক্ষা ব্যবস্থা”। তাছাড়া একশ্রেণির মানুষকে একান্ত বাধ্য হয়েই মাঠে নামতে হয়েছিল। করোনাকালীন সময়ে যাদের খাদ্য সংকট, অর্থ সংকট চরম আকার ধারণ করে।
পরিশেষে একটাই কথা, পাঁচজনে যা করে তা যদি ভুল হয়, তবে সংশোধনের দায়িত্ব অনেক সময় একজনের উপরই বর্তায়। সেই একজন– আমি, আপনি কিংবা প্রত্যেকেই হতে পারি। অবশেষে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত উক্তিই স্মরণ করছি-” তুমি অধম, তাই বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন”? তা যদি দেশের, সমাজের তথা সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপোশাক নয় ব্যক্তির অনুভূতিকে সম্মান করুন
পরবর্তী নিবন্ধবীর মুক্তিযোদ্ধা জহুর আহমদ চৌধুরী স্মরণে