নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রুর ওপারে শূন্যরেখার অস্থায়ী রোহিঙ্গা শিবিরে বুধবারে সংঘটিত গোলাগুলি ও আগুনে পুড়ার ঘটনার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো রোহিঙ্গা আশ্রয়হীন পড়েছে। বুধবারের আগুনের ঘটনায় তিন শতাধিক বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পাশাপাশি আগুনে পুড়েনি এমন সাড়ে ৪শ বসতঘরের রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। তাদের অনেকে স্থানীয় তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের তুমব্রু, কোনারপাড়া, পশ্চিমপাড়া, মধ্যমপাড়া ও উত্তর পাড়ার নানা স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে গতকালও শূন্যরেখার বিভিন্ন স্থান থেকে থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
বুধবার রোহিঙ্গা ক্যাম্প কেন্দ্রীক তৎপর আল ইয়াকিন এবং আরএসওর সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘটিত বন্দুকযুদ্ধের পর সীমান্তের তুমব্রু শূণ্যরেখা রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনার পর জীবন বাঁচাতে পালিয়ে বনজঙ্গলে আশ্রয় নেয় শিশুসহ অনেক রোহিঙ্গা নর–নারী। প্রচণ্ড শীতে তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। অনেকে না খেয়ে রয়েছে তিন বেলা। বুধবার বিকেল নাগাদ ঘটনার সময় দিগ্বিদিক পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের কয়েকশ সদস্য মিয়ানমারের ওপারে কাঁটাতারের বেড়া ভেদ করে আশ্রয় নিলেও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তাদেরকে এপারে ঠেলে দেয় মিয়ানমারের সরকার বাহিনী। বাংলাদেশের তুমব্রু গ্রামে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা এখন চরমভাবে খাদ্য, টয়লেট, শীতবস্ত্র, পানি ও বাসস্থান সংকটে রয়েছে।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু করে রাত ৮টায় এ সংবাদ লেখার সময় থেমে থেমে শূন্য রেখার বিভিন্ন স্থান থেকে গুলি বিনিময়ের শব্দ শোনা গেছে। তবে এসময় কেউ হতাহত হয়েছে এমন খবর পাওয়া যায়নি। ঘুমধুম ইউপি চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, শূন্যরেখার পরিস্থিতি নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও রোমেন শর্মা জানিয়েছেন, ঘটনার পর কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শূন্যরেখা থেকে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তবে সেখানে কয়টি পরিবারের মোট কতজন রোহিঙ্গা রয়েছে এটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শূন্যরেখার এসব রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলাপ করা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাদের শূন্যরেখায় ফেরত পাঠানো হতে পারে জানান নাইক্ষ্যংছড়ির ইউএনও। এখনও কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা শূন্যরেখায় অবস্থান করলেও বেশিরভাগ মিয়ানমারে অভ্যন্তরে চলে গেছে জানিয়ে ইউএনও রোমেন শর্মা বলেন, সীমান্তের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং প্রশাসন এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খোঁজ–খবর রাখছে। এ ঘটনায় এমএসএফ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে ঘটনায় একজন নিহত আর দুইজন আহত ছাড়া আর কোনো হতাহতের তথ্য নেই বলে জানিয়েছেন উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী।
এই বিষয়ে বিজিবির কঙবাজার ব্যাটালিয়নের (বিজিবি–৩৪) অধিনায়ক লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী গতকাল দুপুরে বলেন, বুধবারের ঘটনা যেহেতু শূণ্যরেখায়। সুতরাং এ বিষয়ে বিজিবির করার কিছু নেই। তবে কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে প্রবেশের চেষ্টা করলে প্রতিহত করা হবে। আর গোপনে পার্শ্ববর্তী গ্রামে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করবে তারা।
সূত্র মতে, তুমব্রু কোনার পাড়া জিরো লাইন রোহিঙ্গা শিবিরে অবস্থানরত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ আল–ইয়াকিন ও আরএসওর মধ্যে গত ১৮ জানুয়ারি সকাল থেকে সশস্ত্র সংঘর্ষের এক পর্যায়ে রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন দিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়। এ ঘটনায় হামিদ উল্লাহ (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা নিহত ও মুহিব উল্লাহ (২৫) নামের আরেকজন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।












