ফটিকছড়িতে হালদা নদীর বাঁধে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেকোন সময় বাঁধ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে ঘরবাড়ি বিলীন হতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। হুমকিতে রয়েছে নাজিরহাট পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মালেকার পাড়ার দেড় শতাধিক বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন ওই এলাকার এসব পরিবারসহ নদী তীরবর্তী মানুষ।
স্থানীয়রা জানান, নাজিরহাট পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মালেকার পাড়া (দাশ পাড়া) এলাকাটি হালদার ভয়াবহ ভাঙনের মুখে পড়েছে। ভাঙনের হুমকিতে মালেকার পাড়ায় বসবাসরত প্রায় ১৫০ পরিবার আতঙ্ক– উৎকণ্ঠায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গত বছর থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হলেও ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড পরীক্ষামূলক ভাবে ১টি ভাঙনে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি বাড়ায় ওই এলাকার নদী বাঁধের ২ জায়গায় আবারো তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এবার ভাঙন আতংকে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরেজমিন ভাঙন কবলিত এলাকায় দেখা গেছে, নদী পাড়ের মানুষের চোখে–মুখে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নদীর বাঁধ চলাচলের একমাত্র রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হওয়াতে চলাচলেও ব্যাঘাত ঘটছে। কোনমতে হেটে চলাচল করা গেলেও রয়েছে ঝুঁকি। নদীর বাঁধ ভাঙতে ভাঙ্গতে প্রায় ঘরবাড়ির পাশে নদীর পানি চলে এসেছে। অতিবৃষ্টি কিংবা পাহাড়ি ঢলের পানিতে অল্প যে বাঁধ রয়েছে তা ধসে গিয়ে বাড়িঘর বিলীন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকায় গেলে ওই এলাকায় বসবাসরত প্রায় ৩৫–৪০টি পরিবার ছুটে আসে তাদের এ আতঙ্কের কথা জানাতে। এ ব্যাপারে মঞ্জু দাস নামের এক মহিলা বলেন, আমাদের জীবন–মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। আমার ঘরের মাত্র ১০ফুট দূরে নদীর পানি। যেকোন সময় অল্প যে বাঁধ আছে তা ভেঙে আমার একমাত্র সম্বল বাড়িটি বিলীন হয়ে যাবে। দিনরাত শুধু এ ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে ভগবানকে ডাকছি। বাঁধে ব্লক না বসালে যেকোনো সময় বাড়িটিও হারাতে হবে।
স্থানীয় কাজলী দাশ বলেন, নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ঘরের কাছে চলে আসছে। সারারাত নদী ভাঙ্গার ভয়ে ঘুমাতে পারিনি। এখন আমি ভয়ে অসুস্থ হয়ে গেছি। বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে গেলে কোথায় গিয়ে থাকব আমরা? এ ব্যাপারে নাজিরহাট পৌরসভার মেয়র এ কে জাহেদ চৌধুরী বলেন, হালদার ভাঙনের ব্যাপারে কয়েকবার আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলেছি। এছাড়াও বাঁধে ব্লক বসানোর জন্য এমপির মাধ্যমে আবেদন ও দেয়া হয়েছে। পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের পাশাপাশি ৪ ও ৯নং ওয়ার্ড ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব এলাকায় বাঁধ নির্মাণ জরুরি। এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ–বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহাগ তালুকদার বলেন, ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় প্রাক প্রতিরক্ষা হিসেবে জিও ব্যাগ দেয়া হয়েছিল। তবে ওই এলাকায় এসব জিও ব্যাগ টিকছে না। এলাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা হিসেবে ব্লক বসানো হবে। স্থায়ী প্রতিরক্ষার জন্য ইতিমধ্যে মৌখিক অনুমতিও পাওয়া গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরই আশা করি টেন্ডার করতে পারবো। আশা করি এতে স্থায়ী সমাধান হবে।