এখন গ্রীষ্মমকাল। প্রচণ্ড খরতাপে জন জীবন অতিষ্ঠ। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তদের অবস্থা বেহাল। একদিকে ছোট ঘরে শেয়ার করে থাকা, পড়াশোনা, কাজ–কর্ম, ডাক্তার, খাওয়া–দাওয়া পানি সংকট, লোডশেডিং সবমিলিয়ে দির্ঘ শ্বাস, কীভাবে বাঁচা যাবে, কেমন করে সামাল দেবেন এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির।
আমরা বাঙালি, দীর্ঘ ৯ মাস খালি হাতে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এত সহজে কীভাবে হাল ছাড়ি। তবে আমাদের লাইফ স্টাইল টা যদি কিছুটা বদলে নেয়া যায়, তাহলে কিছুটা স্বস্তি পেতে পারি। যাদের বাড়িতে পানির ট্যাংকির উপরে ছাদ নেই সেই ক্ষেত্রে ট্যাংকির উপরে প্লাস্টিক, তেরপাল দিয়ে কাভার করা যায়। কাছাকাছি কোনো মজা পুকুর থাকলে কচুরী পানা প্লাস্টিক বা টিনের উপরে বিছিয়ে রাখা যায় ঠিক সেই ভাবে খোলা ছাদে টিনের উপরে তদ্রূপ করা যায়। তাহলে ঘরের ভেতর অনেকটা স্বস্তি পাওয়া যাবে। জানালার টাংগানো পর্দা পানিতে চুবিয়ে ভালো করে নিংড়ে টাংগিয়ে দিলে ব্যাস ঝাঁঝালো গরম হাওয়া ঘরের ভেতরে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হবে। ঠাণ্ডা ভাব অনুভূত হবে। এই সময়ে এক জায়গায় অনেকক্ষণ ফ্যান চললে হাওয়া গরম হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে পাখার প্রত্যেক পেলেইটে ভেজা গামছা পেচিয়ে দিয়ে রাখলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। এবারে আসি খাওয়া–দাওয়ায়। সবচেয়ে কঠিন এবং সুস্থ থাকার জন্য একমাত্র নির্দেশনাবলী। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে বয়স অনুপাতে কয়েক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করা। নাস্তার মধ্যে কলা, টক দই, চিড়া বেশি করে পানি মিশিয়ে পেটভরে খাওয়া। যাতে করে দুপুরে লাঞ্চ করতে না হয়। পাশাপাশি একটা সেদ্ধ ডিম বা পানি পৌচ, দেশীয় ফলের তাজা সরবত এক গ্লাস, কোল্ড কফি, ঠাণ্ডা দুধ, দই, লিকার চা। খাওয়া যেতে পারে।
দুপুরের লাঞ্চে সাদা ভাত, পাতলা ডাল, সবুজ শাকসবজি, মিশিয়ে ডালনা, মাছ বা বাচ্চা মুরগি ঝোল, মোট কথা বেশি মশলা যুক্ত খাবার একেবারে বর্জন করতে হবে। শিশুদের কোনো অবস্থায় জাংক ফুড দেয়া যাবে না। পাস্তা, নুডলস, পরোটা, তেলে ভাজা খাবাব, চপ, মচমচে, কুড়মুড়ে এই সময়ে এসব খাবার একেবারেই বন্ধ রাখতে হবে। বিকালের খাবারে সরবত, ফল, কলা, ডায়েট বিস্কুট, পাতলা দুধে সাবু, খৈ, টক্ দই ইত্যাদি হালকা পাতলা খাবার বয়স ভেদে খাওয়া যেতে পারে। রাতের খাবার ৮ টার মধ্যে খেতে হবে। ঘুমাবার দুই তিন ঘণ্টা আগে মুখে তালা লাগিয়ে দিতে হবে। শিশুদের রাতের দুধ বিকালের মধো খাওয়াতে হবে। যেনো তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায়। যাদের লবণের সমস্যা নেই তারা সেলাইন সরবত ঘন ঘন খেতে পারে। স্কুল গামী শিশুদের পানির বোতলে সেলাইন মিশ্রিত সরবত বা পানি দেয়া খুবই দরকার। এছাড়া চিপস, সিংগাড়া, বিস্কুট ইত্যাদির পরিবর্তে কলা দই মাখানো চিড়া, পাতলা খিচুড়ি বা আম, কলা, আপেল শসা মিশ্রিত স্যালাড, সমুদী টিফিনে দেয়া দরকার। কলেজ, অফিস –আদালতে ও এসব খাবার টিফিনে বড়রাও খেতে পারেন।
পোশাকের ক্ষেত্রে অবশ্যই সূতির কাপড় ব্যবহার করতে হবে। বেড়াতে গেলে জাক–জমক কাপড়, কোট, ভারি কাপড় পরিধান করা যাবে না। স্কুলগামী শিশুদের কে ইউনিফর্ম কিছুদিন বন্ধ রেখে ঢিলেঢালা কাপর, কলার ছাড়া গেঞ্জি এই ধরনের কাপর পরিধান করাতে হবে (অবশ্যই স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে) বিয়ে, জন্মদিন, বিশেষ বিশেষ প্রোগ্রামগুলোতে অবশ্যই বেশি মসল্লা যুক্ত খাবার রান্না নিষেধাজ্ঞা করতে হবে। চাইনিজ, থাই জাতীয় খাবার, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের আদলে কম মশলা যুক্ত (জুইত্যাইন্যা) খাবার খাওয়ানো যেতে পারে।
গরমের দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে যখনই কাজ সেরে বাসায় ফেরা হবে, ভিজা গামছা দিয়ে শরীর ভালো করে মুছে পাউডার লাগিয়ে পাতলা কাপড় পরিধান করতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে তদ্রুপ করতে হবে। যে সব শিশুদের শিশুরা স্কুলগামী তাদের সকালের গোসল করানো উওম। এই সময়ে সরাসরি ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি পান করা উচিত নয়। গরম ও ঠাণ্ডা দুইটির সংমিশ্রণে মারাত্মক শ্বাসকষ্টের জন্ম নিচ্ছে, পাশাপাশি হূপিং কাশি, জ্বর ইতিমধ্যে অনেক পরিবারে এইসব অসুখ শুরু হয়ে গেছে। আর যাঁরা কোনো না অসুখে আক্রান্ত আছেন, হিটস্ট্রোক তাঁদের জন্য ভয়ঙ্কর। তাই আসুন তীব্র দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে কিছুদিনের জন্য আমরা সবাই লাইফ স্টাইল বদলে নেই।